Logo
Logo
×

অল্পকথা

পাঠ, পাঠাভ্যাস ও পাঠক

Icon

সাজ্জাদুল করিম

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আজকাল একটি কথা আমরা হরহামেশাই শুনতে পাই-পাঠাভ্যাস ও পাঠক সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কথাটি এক অর্থে হয়তো সঠিক; কিন্তু ঢালাওভাবে এ কথার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশে আমার আপত্তি আছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে পাঠ, পাঠাভ্যাস ও পাঠক সম্পর্কে আমার কিছু চিন্তাভাবনা তুলে ধরছি।

পাঠ, পড়া বা অধ্যয়ন এমন একটি কাজ, যা একমাত্র মানুষকেই করতে হয়। কারণ মানুষই একমাত্র জীব, যাদের রয়েছে চিন্তাভাবনার ক্ষমতা, শেখার-জানার আকাঙ্ক্ষা। আর এ কাজটির গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, স্বয়ং স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টির পর তাকে প্রয়োজনীয় সবকিছু শিখিয়েছেন এবং এ কারণেই তাকে শ্রেষ্ঠত্বও দেওয়া হয়েছে মর্মে আমাদের জানিয়েছেন। তাছাড়া পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম বাণীতেও পড়ার নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে, যা থেকে আমরা সহজেই পড়ার গুরুত্ব বুঝতে পারি। পড়া বা পাঠ করা এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করে কিছু সাংকেতিক চিহ্ন, ছবি, চিত্র, প্রতীক, লিপি ইত্যাদির সাহায্যে কোনো ধারণা, বার্তা, তথ্য বা জ্ঞান লাভ করে। অর্থাৎ পাঠের মাধ্যমে আমরা কোনো কিছু সম্পর্কে ধারণা বা জ্ঞান লাভ করি। আর এটিই পাঠের মূল উদ্দেশ্য।

সভ্যতার সূচনালগ্নে মানুষের মধ্যে পড়ার বা জানার যে অভ্যাস তৈরি হয়েছিল তার পদ্ধতি, ধরন, মাধ্যম বা উপকরণ সবসময় একইরকম ছিল না। সময়ের পরিক্রমায় তা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন গুহাবাসী আদিম মানুষ পাহাড়ের গায়ে, পাথরে, মাটিতে বিভিন্ন চিত্র, ছবি, প্রতীক, চিহ্ন ইত্যাদি অঙ্কন করে রাখত এবং সেগুলোই তারা পাঠ করত। পরবর্তীকালে পোড়া মাটির ফলক, গাছের পাতা, ছাল-বাকল, পশুর চামড়া, কাঠ ইত্যাদি মানুষের পাঠোপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এরপর কাগজ আবিষ্কৃত হওয়ার পর তা-ই হয় প্রধান পাঠোপকরণ, যা এখনো সহজলভ্য মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। আর বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে বিভিন্ন আধুনিক মাধ্যম (ই-বুক, পিডিএফ, ব্লগ, ছবি, ভিডিও, অনলাইন মাধ্যম ইত্যাদি) আমাদের পাঠের অভ্যাসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে পাঠ বা পড়ার সংজ্ঞা অনেক বিস্তৃত। শুধু কাগজের পটে অঙ্কিত লিপি আওড়ানোর নামই পাঠ নয়। ছবি, অডিও বা ভিডিও দেখে বা শুনেও যদি কোনো ধারণা বা জ্ঞান লাভ হয়, সেটিও এক অর্থে পড়া। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই বিশ্বের আধুনিক লাইব্রেরিগুলোতে কাগজে মুদ্রিত বইয়ের পাশাপাশি ই-বুক, অনলাইন জার্নাল/ম্যাগাজিন/সংবাদপত্র, অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণ ইত্যাদিও সংরক্ষণ করা হয়।

কাজেই পাঠের যে সংকীর্ণ ধারণা আমরা পোষণ করি, তার চেয়েও এর সংজ্ঞা ও পরিধি অনেক বিস্তৃত। আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলতে হবে, সত্যিকার অর্থে পাঠক কমেনি, বরং পাঠের উদ্দেশ্য, অভ্যাস, ধরন, মাধ্যম, উপকরণ ইত্যাদির পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। আর এ সত্যটি আমরা যত সহজে অনুধাবন করব, ততই ইতিবাচকভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবার অবকাশ পাব এবং আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারব।

সাজ্জাদুল করিম : জেলা লাইব্রেরিয়ান, শেরপুর

sazzad.karim70@gmail.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম