Logo
Logo
×

অল্পকথা

লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব

Icon

গৌরমোহন দাস

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা থেকে ২১ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নান উপলক্ষ্যে পুণ্যার্থীদের মিলনমেলা বসে। ব্রহ্মপুত্র নদে চৈত্রের শুক্লা অষ্টমীতে স্নান উপলক্ষ্যে এখানে দেশ-বিদেশের বহু পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে। লাঙ্গলবন্দ তীর্থের উৎপত্তি সম্বন্ধে কালিকা পুরাণে (৮৪/৮৫ অধ্যায়) আছে : শান্তনু মুনির পত্নী অমোঘা দেবী ব্রহ্মার তেজ গর্ভে ধারণ করে এক সুন্দর পুত্রসন্তান প্রসব করেন। প্রসবের আগে মুনি উত্তরে কৈলাস, পূর্বে সম্বর্তক, দক্ষিণে গন্ধমাদন ও পশ্চিমে জারুধি-এই চার পর্বতের মধ্যে একটি কুণ্ড খনন করে রাখেন। প্রসবান্তে পুত্রটিকে সেই কুণ্ডে স্থাপন করেন এবং ব্রহ্মা এসে ওই পুত্রকে দেখে নাম রাখেন ‘লোহিত্য’। কিছুদিন পর পুত্র জলে দেহ বিস্তার করে কুণ্ডের মধ্যে অবস্থান করেন। সেই থেকে এর ‘নাম হয় ব্রহ্মকুণ্ড’।

ত্রেতাযুগে জমদগ্নি নামে এক মুনি ছিলেন। রেণুকার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের ছিল পাঁচ পুত্রসন্তান। কনিষ্ঠ সন্তানের নাম হলো পরশুরাম, বিষ্ণুর দশম অবতারের মধ্যে ষষ্ঠ অবতার। একদিন মুনি জমদগ্নি, স্ত্রী রেণুকার জল আনতে বিলম্ব হলে বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করেন এবং যোগবলে তার মানসিক বিকৃতির কথা অবহিত হন। ক্রোধান্বিত হয়ে মুনি রূঢ়স্বরে তার পুত্রদের তাদের মাকে হত্যা করার আদেশ দেন। অগ্নিশর্মা মুনির এ আদেশ প্রথম চার পুত্রের কেউই পালন করতে রাজি হননি। পরে পঞ্চমপুত্র পরশুরাম পিতার আদেশে কুঠার দিয়ে মায়ের দেহ দ্বিখণ্ডিত করেন। কিন্তু পরশুরামের হাতে কুঠারটি লেগে থাকে। পিতার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে পিতা বলেন-‘তুমি মাতৃহত্যা আর নারীহত্যা এই দ্বিবিধ পাপেই আক্রান্ত হয়েছ। আর জেনে রেখো, পাপ ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, কৃতকর্মীকে তা স্পর্শ করবেই।’ তারপরও পুত্রকে আশ্বস্ত করে তীর্থ পরিভ্রমণের উপদেশ দিয়ে বলেন-‘যে তীর্থ গমনে বা স্নানে তোমার হাতের কুঠার স্খলিত হবে, জানবে ওই পুণ্যস্থানই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থক্ষেত্র।’ পিতৃ-আজ্ঞায় পরশুরাম তীর্থ পরিভ্রমণে বের হয়ে বিভিন্ন তীর্থ ভ্রমণ করতে লাগলেন। পরশুরাম ব্রহ্মকুণ্ডে স্নান করার সঙ্গে সঙ্গে তার হাতের কুঠার স্খলিত হয়ে যায় এবং তিনি সর্বপাপ থেকে মুক্তি লাভ করেন।

তিথিটি ছিল চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথি, বুধবার পুনর্বসু নক্ষত্র। পরে পরশুরাম চিন্তা করলেন-এমন পুণ্য জলকে সবার সহজলভ্য করার জন্য এর ধারা পৃথিবীতে নিয়ে আসবেন। পিতৃ-আজ্ঞায় ব্রহ্মকুণ্ডের জলধারাকে এ পৃথিবীতে নিয়ে আসেন স্খলিত কুঠার দিয়ে হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত। তারপর লাঙ্গল দিয়ে মাটি কর্ষণ করে তা নারায়ণগঞ্জ জেলার লাঙ্গলবন্দ পর্যন্ত নিয়ে আসেন। সেজন্য পুণ্য এ তিথিতে লাঙ্গলবন্দের জলে স্নান করা অত্যন্ত পুণ্যের।

গৌরমোহন দাস : সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি

dasgourmohan@yahoo.com

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম