তেল নিয়ে রাশিয়া-সৌদি মূল্যযুদ্ধ চরমে
রাশিয়াকে দমাতে ইউরোপকে প্রতি ব্যারেল ২৫ ডলারে দিচ্ছে সৌদি আরব * এপ্রিলে প্রতিদিন ২ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াবে মস্কো
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অপরিশোধিত জ্বালানি তেল নিয়ে রাশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যে মূল্যযুদ্ধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপকে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল ২৫ ডলারে দিচ্ছে সৌদি আরব। রাশিয়ার তেলের ইউরোপীয় ক্রেতাদের টার্গেট করেই সৌদি আরব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর রয়টার্স।
৫ মার্চ তেলের দাম বাড়ানোর জন্য উৎপাদন কমাতে ওপেক ও রাশিয়া কোনো চুক্তিতে না পৌঁছতে পারায় পরদিন সৌদি আরব তাদের তেলের দাম কমিয়ে দেয়। শুরু হয় তেলের ‘মূল্যযুদ্ধ’। এমনিতেই কয়েক মাস ধরে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপীই জ্বালানির চাহিদা কমে গেছে। করোনার কারণে চীন থেকে প্রতিদিন এক কোটি ব্যারেল তেলের চাহিদা কমে গেছে।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থা আরামকো জানিয়েছে, তারা এপ্রিল মাসে আগের যে অতিরিক্ত অনুরোধ ছিল, সেই পরিমাণ তেল সরবরাহ করবে। এশিয়া ও ইউরোপের তেলের বাজারের মূল সরবরাহকারী রাশিয়া। এখন রাশিয়ার এই বাজার ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে সৌদি আরব। ইউরোপের বিভিন্ন তেল পরিশোধক কোম্পানি বলেছে, আরামকো জানিয়েছে এপ্রিল মাসে তাদের চাওয়া অনুযায়ী তেল সরবরাহ করবে তারা।
সৌদি আরব সব সময়ই রাশিয়ার চীনা ও ভারতীয় ক্রেতাদের নিজের দিকে টানতে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। যদিও ক্রেতাদের যে পরিমাণ জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল তা সরবরাহ করতে পারেনি সৌদি আরব। এবার তারা সরবরাহ বাড়াবে।
তেলের উৎপাদন নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে রাশিয়ার এক ধরনের মতভেদ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মস্কো জানিয়েছে, তাদের কোনো আলোচনায় বসার পরিকল্পনাই নেই। রাশিয়ার জ্বালানিমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক শুক্রবার বলেন, তার দেশ ওপেক প্লাস অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনায় ফিরে আসার কোনো কারণ দেখছে না। এপ্রিল মাসে প্রতিদিন ২ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর ইচ্ছা আছে তাদের।
এদিকে এর বিপরীতে এপ্রিল থেকে ২৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলছে সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাতও উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় বিশ্ববাজারে এক মাস ধরে তেলের চাহিদা কমে গেছে। দিন দিন দাম পড়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে তেলের দাম। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দাম কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। জ্বালানি তেলের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে ৫ মার্চ থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বৈঠকে বসে ওপেক ও নন-ওপেক দেশগুলো। এতে সিদ্ধান্ত হয়, তেলের দাম বাড়াতে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন দিনে ১৫ লাখ ব্যারেল কমাবে তারা, যা বিশ্বের মোট সরবরাহের প্রায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
ওপেক আশা করছিল, রাশিয়া প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাতে সম্মত হবে। তবে এতে সম্মতি জানায়নি ওপেকের মিত্র জোট ওপেক প্লাসের নেতৃত্বে থাকা রাশিয়া। এ কারণে নতুন চুক্তি হওয়ার বিষয়টি ভেস্তে যায়। এর প্রভাবে ৬ মার্চ থেকে ব্যাপক দরপতন হয় তেলের দামের। এর মধ্যে শনিবার তেলের দাম কমায় সৌদি আরামকো। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত এই কোম্পানি তেলের দাম তাদের মূল গ্রেড থেকে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমায়। যার প্রভাবে পরের কার্যদিবসেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে ৩৩ শতাংশ, যা ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক বাজারে এক দিনের কেনাবেচায় জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ দরপতন।
