Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বদলির খসড়া

৬ বছরের বেশি চাকরি করা যাবে না দফতরে

অবশিষ্ট সময় কাটাতে হবে কলেজে * ই-মেইলের পরিবর্তে শুধু অনলাইনে বদলির আবেদন

Icon

মুসতাক আহমদ

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা চাকরিজীবনে কলেজের বাইরে কোনো দফতরে ছয় বছরের বেশি দয়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এর মধ্যে সর্বোচ্চ টানা তিন দফতরে কাজ করতে পারবেন। এরপর দুই বছরের জন্য কলেজে চাকরি করতে হবে।

এসব বিধান রেখে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বদলি সংক্রান্ত দুটি নতুন নীতিমালার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একটি হচ্ছে- সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি/পদায়ন নীতিমালা এবং আরেকটি সরকারি দফতরে বদলির নীতিমালা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মূলত সরকারি কলেজে শিক্ষকতার জন্য নিয়োগ করা হয়। কিন্তু অনেকেই চাকরিজীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দফতরে। এমন কর্মকর্তাও আছেন যিনি যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে ঢাকাসহ বড় শহরের সরকারি দফতরে নিয়োগ পেয়েছেন। এরপর ভুলে গেছেন কলেজে শিক্ষকতার কথা। এমন অবস্থায় পদায়নে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা আর তদবির বন্ধে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ই-মেইলে আবেদন নিয়ে বদলির ব্যবস্থা আছে। এর পরিবর্তে বদলি করা হবে অনলাইনে আবেদন নিয়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এ লক্ষ্যে সফটওয়্যার তৈরির কাজ করছে। এটি তৈরি শেষ হলেই জারি করা হবে নতুন বদলি নীতিমালা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বদলি ও পদায়নের কাজটি অনেকটাই নিয়মিত কাজ। তাই সাময়িক কোনো ব্যবস্থার পরিবর্তে স্থায়ী নীতির আলোকে এটি করা দরকার। এক্ষেত্রে একটা ডিসিপ্লিন আনা প্রয়োজন। সবমিলেই একটি বদলি ও পদায়ন নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। তবে আগেও একটি নীতিমালা ছিল। বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে এবং আগেরটির সঙ্গে সমন্বয় করে এই হালনাগাদ নীতিমালা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, ব্যতিক্রম কয়েকটি দৃষ্টান্ত বাদে গত ২ মাস বন্ধ আছে শিক্ষক বদলি ও পদায়ন। মূলত এক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ও নানা অভিযোগ ওঠায় মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে এই অবস্থা কার্যকর আছে। নতুন নীতিমালা জারির পর ফের শুরু হবে বদলি প্রক্রিয়া।

শিক্ষা ক্যাডারের সংশ্লিষ্টরা জানান, বদলি ও পদায়নে বিশৃঙ্খলার কারণে তিন বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা করেছিল। তখন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দিনের বেশির ভাগ সময় এই বদলির তদবিরই মোকাবেলা করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে সেই নীতিমালাও ততটা কার্যকর হয়নি। কেবল নিরীহ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হয়। আর বিশেষ বিধানের দোহাই দিয়ে চিহ্নিত মুখগুলো মাউশি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), বিভিন্ন প্রকল্প এবং শিক্ষা বোর্ডসহ ঢাকা ও মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি দফতরে পদায়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। মাউশিতে কর্মরত বেশির ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি আরেক দফতর থেকে পদায়ন নিয়ে এসেছেন। যেমন- মহাপরিচালক এসেছেন নায়েমের মহাপরিচালক পদ থেকে। পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) এসেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিবের পদ থেকে। তিনি ওই বোর্ডে একটানা নয় বছর দায়িত্ব পালন করেন। এভাবে অন্য আরও কয়েক কর্মকর্তা এক দফতর থেকে আরেক দফতরে এসেছেন। অথচ বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী এসব কর্মকর্তার মাঝখানে কমপক্ষে ২ বছর যে কোনো কলেজে চাকরি করার কথা।

দফতরে বদলির ক্ষেত্রে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তা ৬ বছরের বেশি দফতরে চাকরি করতে পারবেন না। একটানা ৩ বছরের বেশি দফতরে থাকবেন না। ৩ বছর পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে কলেজে পদায়ন করা হবে। একটি দফতর থেকে সরাসরি আরেক দফতরে বদলি করা যাবে না। মাঝখানে তাকে কমপক্ষে ২ বছর কলেজে চাকরি করতে হবে। সরকারি দফতরে চাকরিজীবনে তিনবারের বেশি পদায়ন করা যাবে না। তবে এই পদায়ন সবমিলে ৬ বছরের বেশি হবে না। ওএসডির সময়কে দফতরে পদায়ন হিসেবে ধরা হবে না।

অপরদিকে সরকারি কলেজে বদলি/পদায়ন সম্পর্কিত খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা (প্রভাষক) চাকরি দুই বছর পূর্ণ না হলে বদলির আবেদন করতে পারবেন না। একই কর্মস্থলে ৩ বছর এবং পদায়ন পাওয়ার পরের পদে কমপক্ষে ২ বছর পূর্ণ না হলে বদলির আবেদন করতে পারবেন না। পিআরএলে (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটি) যাওয়ার এক বছর আগে সুবিধা মতো স্থানে আবেদন করা যাবে। দুই কর্মকর্তার পারস্পরিক সমঝোতার বদলি করা যাবে। বদলির আবেদনে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না।

প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, বিদ্যমান ই-মেইলে বদলির ব্যবস্থা থাকবে না। সব বদলির আবেদন করতে হবে অনলাইনে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারে। বছরে চারবার আবেদন করা যাবে। প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকরা জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই ও অক্টোবরে বদলির আবেদন করতে পারবেন। সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকরা ফেব্রুয়ারি, মে, আগস্ট এবং নভেম্বরে বদলির আবেদন করতে পারবেন। নির্ধারিত মাসের ১ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আবেদন করবেন। নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে কিংবা অন্য কোনোভাবে দেয়া আবেদন বিবেচনা করা হবে না।

খসড়ায় বলা হয়েছে, স্বামী ও স্ত্রী দু’জনই চাকরিজীবী হলে স্বামী বা স্ত্রীর নিকটতম কর্মস্থলে বদলি বা পদায়নের জন্য আবেদন করা যাবে। তবে যেহেতু এ ধরনের কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক, তাই বিষয়টি অধিকার হিসেবে গণ্য করা যাবে না।

সারা দেশে বর্তমানে ৬২৯টি সরকারি কলেজ আছে। এর মধ্যে ৩২৭টি কলেজ পুরনো। এসব কলেজে ১৪ হাজারের মতো শিক্ষক আছেন। বাকি ৩০২টি নতুন জাতীয়কৃত। তবে এগুলোর জাতীয়করণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানে ৮ হাজারের বেশি শিক্ষক আছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম