Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

গোয়েন্দা জালে ঘাতক

মহাখালীর ত্রাস অনন্তকে সালাম না দেয়ায় শিপু খুন

Icon

ইকবাল হাসান ফরিদ

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মহাখালীর আমতলী এলাকার উঠতি বয়সী ত্রাস অনন্ত। মাদক, চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তার দ্বারা সংঘটিত হতো না। অনন্ত হেঁটে যাওয়ার সময় এলাকার কিশোর-তরুণরা তাকে বাধ্যতামূলক সালাম দিত। কেউ সালাম না দিলে তাকে ধরে নিয়ে ইচ্ছেমতো শায়েস্তা করত অনন্ত। সালাম না দেয়ার জেরে অনন্তের ছুরিকাঘাতে শুক্রবার রাতে প্রাণ দিতে হল মাদ্রাসাছাত্র রাফি আহমেদ শিপুকে (২২)। শিপু হত্যার পর মামলা হলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় অনন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, অনন্ত এখন গোয়েন্দা জালে। তাকে যে কোনো সময় গ্রেফতার দেখানো হবে। নরসিংদীর একটি মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া করেছেন রাফি আহমেদ শিপু। তিনি কোরআনে হাফেজ।

শিপুর মামা আজগর খান জানান, মহাখালীর আমতলীর হাজারীবাড়ি এলাকায় একটি মুদি দোকান চালাতেন শিপু। কারও সঙ্গে তার কোনো ঝগড়াঝাটি ছিল না। শুক্রবার এশার নামাজ পড়ে মহাখালী বিকাশের গলির দিকে গেলে সন্ত্রাসী অনন্তের সামনে পড়েন শিপু। কিন্তু অনন্তকে সালাম দেননি তিনি। এতে অনন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। জিজ্ঞেস করে, তুই আমাকে চিনিস? উত্তরে শিপু জানান, তোমাকে চেনার কোনো প্রয়োজন নেই আমার। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে শিপুকে মারধর শুরু করে অনন্ত। একপর্যায়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় অনন্ত। এরপর তাকে উদ্ধার করে মহাখালী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শিপু হত্যার পর শনিবার তার দরিদ্র বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে শনিবার বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অনন্তকে আসামি করা হয়। এরপর গা ঢাকা দেয় অনন্ত। আবদুস সাত্তার পরিবার নিয়ে মহাখালী হাজারীবাড়ি এলাকায় থাকেন। তিনি নিজে সবজির ব্যবসা করেন। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। দুই ভাইবোনের মধ্যে শিপু ছিল ছোট।

আমতলী এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল সৌরভ যুগান্তরকে বলেন, শিপু ও তার বন্ধুরা প্রতিদিন মসজিদে এশার নামাজ পড়ে বিকাশের গলিতে একটি চা দোকানের সামনে কিছুক্ষণ আড্ডা দিতেন। এদের সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। এরা সবাই ‘গেম পাগল’। দোকানের পাশে বসে চা খেতেন, আর মোবাইলে গেম খেলতেন। খোশগল্প করে যার যার মতো বাসায় চলে আসতেন। ওরা কারও সঙ্গে কোনোরকম ঝামেলা করতেন না। কিন্তু ওইদিন অনন্তকে সালাম না দেয়ার খেসারত দিতে হল শিপুকে।

এলাকার একাধিক ব্যক্তি যুগান্তরকে জানিয়েছেন, অনন্ত এর আগেও এলাকায় বিভিন্ন লোকজনকে মারধর করেছে। সামনে পড়লে তাকে সালাম দিতে হতো। কেউ সালাম না দিলেই সে তার ওপর হামলে পড়ত। স্থানীয় সূত্র জানায়, অনন্ত আমতলা মাঠ ও আশপাশের অলিগলির দোকানে চাঁদাবাজি করত। এছাড়া সে লোকজন দিয়ে এলাকায় মাদক বিক্রি করাত। সে নিজেও মাদক সেবন করত। অনন্তকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন তারই চাচা স্থানীয় এক যুবদল নেতা।

সন্তানকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ শিপুর বাবা-মা। অনেকটা বাকরুদ্ধ তার একমাত্র বোনও। শিপুর অকাল মৃত্যু মানতে পারছেন না এলাকাবাসীও। তাই বিচারের দাবিতে শনিবার তারা রাজপথে নেমেছিলেন। শিপুর মা রীনা বেগম যুগান্তরকে বলেন, আমি আমার সন্তানের খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। আমি চাই তাকে আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দেয়া হোক। সে বলল, তুই আমাকে চিনিস না। শিপু বলল, না। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ছুরিটা চালাল আমার ছেলের শরীরে। তিনি শিপু হত্যার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বাবা বললেন, ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, অনন্তকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম সদরঘাট এলাকা থেকে আটক করেছে। সোমবার দুপুরের পর তাকে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শিপুকে যে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই ছুরিটি উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। অনন্তকে আটকের বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া যুগান্তরকে বলেছেন, শুনেছি আসামিকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম