আমদানি কমায় বাড়ছে রিজার্ভ
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এরমধ্যে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অংক বাড়ছে। আমদানি ব্যয় কমে আসায় রিজার্ভে স্বস্তি ফিরেছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। করোনা সংকটের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। তবে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংকট শেষে ডলারের ব্যাপক চাহিদা হতে পারে।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমদানি-রফতানির বড় দুটো খাত একেবারে স্থবির। সেবা খাত বিশেষ করে বিদেশে লেখাপড়া ও ভ্রমণ এখন বন্ধ। এছাড়া করোনার প্রবল আঘাতে পশ্চিমের প্রায় সব দেশে আমদানি-রফতানি পুরোপরি থেমে আছে। করোনা ও তেলের সর্বনিু দামের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি ধ্বংসের পথে। করোনার করালগ্রাসে বিশ্বের অর্থনীতি নিমজ্জিত। এসব কারণে দেশে রিজার্ভ জমছে। তবে আমদানির দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে রিজার্ভে বড় ধাক্কা আসতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, করোনোত্তর পৃথিবীতে ব্যাপক ক্ষুধা এবং চাহিদার সৃষ্টি হবে। এজন্য এখন থেকে সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনে কম দামে তেল কিনে রাখা যায় কিনা সেটা নিয়েও ভাবা উচিত। সব মিলিয়ে সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে বর্তমান রিজার্ভ নিয়ে ভাবতে হবে।
জানা গেছে, সম্পতি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকার বেশ কিছু ঋণ এসেছে। এর বাইরে জাতিসংঘ থেকে কিছু অনুদান পাওয়া গেছে। ফলে ডলার বিক্রির মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩৩ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের ২২ জুন দেশে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। তবে মাস দুয়েক পর তা আবার ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) পণ্য রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় সাড়ে ৬ শতাংশের মতো কমেছে। দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের রফতানি সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। চলতি মাসের ১৫ দিনে পোশাক রফতানি ৮৫ শতাংশের মতো কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকলেও মার্চে রেমিটেন্স কমেছে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এপ্রিলের ২২ দিনে মাত্র ৬৬ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ২ হাজার ২৩৬ কোটি ডলারের রফতানি আয় দেশে এসেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ কম। একই সময়ে আমদানি ব্যয় ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে তিন হাজার ২০০ কোটি ডলার হয়েছে। আর জানুয়ারি পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ১০৫ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। জানুয়ারি পর্যন্ত রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতেও রেমিটেন্সে ভালো প্রবৃদ্ধি ছিল। তবে করোনার কারণে মার্চে রেমিটেন্স কমেছে ১৭ কোটি ১৮ লাখ ডলার বা ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চলতি বছর রেমিটেন্স ২২ শতাংশের মতো কমতে পারে বলে প্রক্ষেপণ করেছে বিশ্বব্যাংক।
