আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
২০ হাজার টাকায় প্রধানমন্ত্রীর নথি বের করে দেন ফাতেমা
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির মামলায় গ্রেফতার তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমা খাতুন। তিনি ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ফাইল বের করে দেন বলে স্বীকার করেছেন। এদিকে রিমান্ডে থাকা তিনজনের মধ্যে ফরহাদ ও নাজিমউদ্দিন সোমবার বিচারক জিয়াউর রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা আদালতের কাছে নিজেদের দোষ স্বীকার করেন।
তেজগাঁও জোনের এডিসি রুবাইয়াত জামান যুগান্তরকে বলেন, তিনজনই দায় স্বীকার করে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ফাতেমাকে দিয়ে ফাইল বের করে এনেছে। তিনি বলেন, নাজিম উদ্দিন দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। নাজিম ফাইল টেম্পারিংয়ের বিষয়টি জানতেন। তিনি ফাইল টেম্পারিং করেছেন। এর জন্য টাকা নেয়ার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেছেন। ফরহাদ ফাইলটা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা তারিকুল ইসলাম মুমিনকে কাছে পৌঁছে দেয়। এরা আগে থেকেই একজনের সঙ্গে অপরজনের পরিচয় ছিল। কত টাকায় চুক্তি হয়েছিল এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এডিসি বলেন, তারিকুল ইসলাম মুমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। তার কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।
মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমা খাতুনকে রোববার ভোরে গ্রেফতার করা হয়। পরে এদিন বিকালে তিনি আদালতের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে ফাতেমা মাত্র ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ওই নথিটি বের করে দেয়ার কথা স্বীকার করেন।
জালিয়াতির ঘটনাটি ধরা পড়লে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি (পরে বহিষ্কৃত) তরিকুল ইসলাম মুমিন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার ‘সম্পৃক্ততা’ বেরিয়ে আসে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে গত ৫ মে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। ৬ মে ভোলা থেকে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই রাতে নোয়াখালী থেকে ফরহাদ এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে নাজিমউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার ওই তিনজনকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চাইলে প্রত্যেকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এরপর রোববার ভোরে মতিঝিল সরকারি টিঅ্যান্ডটি কলোনির বাসা থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমা খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন বিকালে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়ায় ফাতেমা খাতুনকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নথি পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নথি দেখে অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগেই সেটি বাইরে চলে যায় এবং প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বদলে প্রথম দুজনের নামের পাশে ‘ক্রস’ চিহ্ন দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যজনের নামের পাশে সম্মতিজ্ঞাপনের ‘টিক’ চিহ্ন দেয়া হয়।
