ঢামেকে করোনা উপসর্গে ১০ দিনে শতাধিক মৃত্যু
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ২ মে করোনা ইউনিট চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক রোগী মারা গেছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১০ জন রোগী মারা যাচ্ছেন। মৃতদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের করোনা পজিটিভ নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিরা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এই ১০ দিনে ঢামেক করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৪৫০ জন। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত সেখানে ভর্তি ছিলেন ১৯৭ জন। গত তিন দিনে ৩১ জন রোগী মারা গেছেন। এদের মধ্যে সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত একজন আনসার সদস্যসহ মারা গেছেন ছয়জন। রোববার বিকাল থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত একজন ডাক্তারসহ মারা গেছেন ১৫ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১০ জন।
সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ছয়জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার নাম আবদুল মজিদ (৪৫)। তিনি একজন আনসার সদস্য। তার বাসা মিরপুরের কাজীপাড়ায়। করোনা পজিটিভ অবস্থায় তিনি সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হন।
সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত আরও যারা মারা গেছেন তারা হলেন- সিরাজ (৫০), মজিবর রহমান (৬০), নজরুল ইসলাম (৬৭), ইউনুস (৬০) এবং নাসির হাওলাদার। রোববার বিকাল থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত যে ১৫ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে চারজনের করোনা পজিটিভ নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের মধ্যে নর্দান মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. আনিসুর রহমান রয়েছেন। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিয়ে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দায়সারাভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা জানিয়েছেন। ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। করোনা ইউনিটের একজন নার্স ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ইউনিটে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা নেই। যার যা মনে ধরছে সে সেটাই করছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢামেক করোনা ইউনিটে যাওয়া আবদুল্লাহ আল মামুন নামের এক সাংবাদিক বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছি। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে ভর্তি হওয়ার জন্য যাই। সেখানে গিয়ে দেখলাম করোনা রোগীরা খুবই অবহেলিত। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, যদি মরেও যাই এ হাসপাতালে থাকব না। সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেদিনই হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসি। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিনকে বারবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, যা বলার পরিচালকই বলবেন। আমি কিছু বলতে পারব না। অনেক পীড়াপীড়ির পর তিনি যুগান্তরকে বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৮-১০ জনের করোনা পজিটিভ নিশ্চিত হয়েছি। অন্যদেরটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, করোনা ইউনিটে অব্যবস্থাপনার বিষয়টি অস্বীকার করব না। সেখানে আমি বা পরিচালক মহোদয় সরাসরি যেতে পারছি না। টেলিফোনে তথ্য নিয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি। দিকনির্দেশনা যথাযথ মানা হচ্ছে কি না, তা সরেজমিন গিয়ে তেখতে পারলে ৯০ ভাগ অনিয়ম দূর হয়ে যেত। তিনি আরও বলেন, করোনা ইউনিটে ৮০ জন ডাক্তার, ৭২ জন নার্স এবং ৫৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছে। ডাক্তার ও নার্স পর্যাপ্ত হলেও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অব্যবস্থাপনার এটিও একটি কারণ।
