Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

সিগারেটসহ সব ধরনের তামাক পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধের নির্দেশ

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। সোমবার এ বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী যুগ্ম সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিঠিতে দেশের তামাক কোম্পানিগুলোকে উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ অনুমতিপত্র প্রত্যাহার করার কথাও জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলছে। ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ এবং কাশিজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণা পর্যালোচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ধূমপায়ীর মৃত্যুঝুঁকিও ১৪ গুণ বেশি। কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবেলায় ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাময়িকভাবে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, সিসা বার, উন্মুক্ত স্থানে পানের পিক ফেলার মতো বিষয়গুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সরকার কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ক্রমবর্ধমান কোডিড-১৯ রোগ প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাসেবা প্রদানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের তামাক কোম্পানিগুলোকে উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ অনুমতিপত্র প্রদান করা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাস করতে প্রণীত সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এ সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে বাজার, গণজমায়েত সাময়িকভাবে বন্ধ, দেশের অভ্যন্তরে এক স্থান থেকে অনা স্থানে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনার অজুহাতে এ আইন লঙ্ঘন করে চলেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এগিয়ে নিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন। বাংলাদেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর ৩ কোটি ৭৮ লাখ (৩৫.৩%) মানুষ তামাক সেবন করে (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭) ও তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক লোক মারা যান। (দ্য টোব্যাকো এটলাস, ২০১৮)। তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয়ের চাইতে তামাকজনিত রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার Framework Convention on Tobacco Control (FCTC) স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে এবং এর আলোকে ২০১৩ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ এর সংশোধনী পাস ও ২০১৫ সালে বিধিমালা জারি করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স সামিট ২০১৬-এর সমাপনী অধিবেশনে (৩১ জানুয়ারি ২০১৬) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ লক্ষ্যে জনস্বার্থে সুরক্ষার স্বার্থে করোনা ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তামাক কোম্পানিকে প্রদত্ত অনুমতি প্রত্যাহারসহ সব তামাক কোম্পানির উৎপাদন-সরবরাহ-বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম