Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

লাইনের পাথর বিক্রি : পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে রেলের মিস্ত্রির মার্কেট

শ্রীপুরের কাওরাইদ রেলওয়ে স্টেশন

Icon

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, শ্রীপুর (গাজীপুর)

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পদ লুটপাট ও জমি বেহাতের ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ এলাকায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ স্টেশনের সংস্কারাধীন এক নম্বর লাইনের ভাঙা পাথর চড়ামূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া স্টেশন এলাকায় রেলওয়ের কর্মচারীদের পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে মার্কেট গড়ে তোলার ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় রেল কর্মচারীদের যোগসাজশে কাওরাইদে রেলওয়ের মিস্ত্রি ও স্থানীয় বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন বাবু এ অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরনো ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কাওরাইদ রেলওয়ে স্টেশনের এক নম্বর লাইনটি উঠিয়ে নতুন করে লাইন বসানোর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ। এ কাজ বাস্তবায়নকালে লাইনে থাকা পাথরের ভাঙা অংশ মাটিসহ সরিয়ে পুনরায় লাইনে ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও রেলওয়ের মিস্ত্রি স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় স্টেশনের অদূরে ট্রাকে করে নিয়ে জড়ো করেন। সেখানে মাটি থেকে পাথরের টুকরাগুলো আলাদা করে বিক্রির জন্য জড়ো করতে থাকেন। সরেজমিন কাওরাইদের নূরানী ভিটা মধ্যপাড়ায় স্তূপাকারে রাখা রেলওয়ের এসব পাথরের অস্তিত্ব মেলে। চোখে পড়ে ভেকু দিয়ে মাটি থেকে পাথর পৃথকীকরণের দৃশ্যও। স্থানীয় যুবক মানিক কিছু লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে রেলওয়ের এসব পাথর পাহারা দিচ্ছিলেন। এ সময় পাথর রক্ষণাবেক্ষণকারী মানিক বলেন, রেল মিস্ত্রি মোসলেম উদ্দিন বাবুসহ স্টেশন মাস্টার এ বিষয়ে সব জানেন। আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দেখে রাখার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক জানান, ১০০-১২০ টাকা ফুট দরে বিক্রি করা হচ্ছে এসব পাথর। গত দুই তিন সপ্তাহ ধরে পাথর বিক্রির এই তৎপরতা চলছে। শুধু ভাঙা পাথরই নয়, এক নম্বর লাইনের বিপুল সংখ্যক কাঠের স্লিপারও উঠিয়ে সেই স্থানে সিমেন্টের স্লিপার বসানো হয়েছে। পুরনো কাঠের স্লিপারগুলোও এই চক্র লোপাট করে বিক্রি করে দিচ্ছে। এমনকি রেলমিস্ত্রি মোসলেম পরিত্যক্ত রেল কেটে এর খণ্ডাংশ স্থানীয়দের কাছে বিভিন্ন সময় বিক্রি করে আসছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে কাওরাইদ রেলস্টেশনের উত্তর পাশে পুরনো পানির ট্যাংক সংলগ্ন স্থানে রেল কর্মচারীদের বাসভবন ছিল। দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় পরিত্যক্ত এই কোয়ার্টার ভেঙে রেলমিস্ত্রি স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে রেললাইন সংলগ্ন সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি দোকান ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। সেখানে বর্তমানে অনেকগুলো সেলুন রয়েছে। এ বিষয়ে রেলওয়ে মিস্ত্রি মোসলেম উদ্দিন বাবুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বলেন, নতুন লাইন বসানোর সময় এলাকার মানুষ কিছু মাটি-পাথর নিয়ে থাকতে পারে, তবে আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। রেলওয়ের পরিত্যক্ত বাসভবন ভেঙে মার্কেট গড়ে তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে বলেন, মাত্র দু’বছর আর চাকরি আছে। অনেকে শত্রুতা করে আমার বিরুদ্ধে বলতে পারে। আমার ক্ষতি করবেন না। কাওরাইদ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার (জুনিয়র) নয়ন মিয়ার কাছে সংস্কারাধীন এক নম্বর লাইনের পাথর কোথায় জানতে চাইলে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। তবে পাশেই থাকা নুরুল ইসলাম নামে এক রেল কর্মচারী বলেন, আমরা জানলেও এ বিষয়ে বলতে পারব না। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান কাছে এ তথ্য তুলে ধরা হলে তিনি রেলওয়ের সম্পদ ও সম্পত্তি রক্ষায় কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, রেলওয়ের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। জড়িত রেলমিস্ত্রিকে বরখাস্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম