Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

সাহাবউদ্দিন হাসপাতাল চলছিল লাইসেন্স ছাড়াই, এমডি গ্রেফতার

চলে যাচ্ছেন রোগীরা

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাহাবউদ্দিন হাসপাতাল চলছিল লাইসেন্স ছাড়াই, এমডি গ্রেফতার

করোনাভাইরাস চিকিৎসার নামে প্রতারণার দায়ে গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এক বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়াই হাসপাতালটি চালানোয় এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সোমবার হাসপাতালটির বিরুদ্ধে র‌্যাব মামলা করেছে। এদিকে, সোমবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেল থেকে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফয়সাল আল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রাত ১২টার দিকে র‌্যাব মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সুজয় সরকার যুগান্তরকে জানান, রাজধানীর একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে সোমবার রাতে এমডি ফয়সাল আল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ হাসপাতালের অপকর্মের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।

এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান থানার ওসি কামরুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযানের ঘটনায় সোমবার মামলা হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়েছে। এ মামলায় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক আবুল হাসনাত ও স্টোর কিপার শাহরিজ কবিরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলার এজাহারে তাদের নাম ছাড়াও অজ্ঞাত ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা করার আগে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতারণার নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

হাসপাতালটি সিলগালা বা বন্ধ করে দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে র‌্যাব কর্মকর্তা সারোয়ার বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। যেহেতু হাসপাতালটির লাইসেন্স নেই, তাই আমরা ইচ্ছা করলে এটি বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু এটা করা হলে ডাক্তার-নার্সসহ অনেক লোক চাকরি হারাবেন। প্রতিষ্ঠানের অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হবে। আমরা চাই না কোনো প্রতিষ্ঠান নষ্ট হোক। যারা অপরাধ করেছে আমরা তাদেরই আইনের আওতায় আনতে চাই। এছাড়া হাসপাতালটি সিলগালা করতে হলে সেখান থেকে রোগী সরাতে হবে। অনেকে আইসিইউতে আছেন। তাই রোগী সরানোর বিষয়টি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তিনি জানান, গোটা বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে যে ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনুমতি না থাকলেও এ হাসপাতালে অ্যান্টিবডি টেস্ট করার বিষয় তারা স্বীকার করেছেন। টেলিভিশন স্ক্রলে বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন পিসিআর মেশিন না থাকায় তারা অ্যান্টিবডি টেস্ট করেন না। অথচ ভর্তি রোগীদের অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হতো। অ্যান্টিবডি টেস্টের বিষয়টি বাইরে প্রকাশ করা যাবে না। জানাজানি হলে এখানে ভিড় বেড়ে যাবে। এভাবেই রোগীদের ম্যানেজ করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো।

র‌্যাব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, ভুয়া করোনা টেস্টের রিপোর্টে অনেক ডাক্তার সই করতে রাজি ছিল না। হাসনাত নিজে ভুয়া রিপোর্টে সই করত। যারা ভুয়া রিপোর্টে স্বাক্ষর করতেন না তাদের সই জাল করতেন হাসনাত। র‌্যাব ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অ্যান্টিবডি টেস্টের কিটগুলো চায়না থেকে আনা হয়েছে। কী পরিমাণ কিট এনেছেন এবং কী পরিমাণ টেস্ট করিয়েছেন তা এখনও জানা যায়নি। করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসায় জালিয়াতির অভিযোগে রোববার বিকালে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় সহকারী পরিচালক ডা. মো. আবুল হাসনাত ও হাসপাতালের স্টোরকিপার শাহরিজ কবির সাদিকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার অভিযানের পর হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন রোগীরা। নতুন রোগীও ভর্তি নেয়া বন্ধ রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে অভিযানকালে হাসপাতালটিতে নয় ধরনের অনিয়ম পাওয়ার কথা জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

পলাশ নামে রোগীর এক স্বজন সোমবার বলেন, কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে চার দিন আগে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ায় তারা চলে যাচ্ছেন। তবে কোভিড-১৯ পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও পায়নি তার রোগী। হাসপাতালের তথ্য কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, তারা নতুন কোনো রোগী ভর্তি নিচ্ছেন না। সকাল থেকে দু’জন এসেছিলেন, তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যারা ভর্তি ছিলেন, তাদের মধ্যে পাঁচজন র‌্যাবের অভিযানের পর হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। ওই সময় হাসপাতালের কোভিড-১৯ ইউনিটে ১৪ জন এবং অন্য একজন সাধারণ রোগী ভর্তি ছিলেন।

আক্রান্তদের তিনজন আইসিইউতে ভর্তি জানিয়ে হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহাবউদ্দিন বলেন, এই ১৪ জনের মধ্যে আটজন বিদেশি, তারা রাশিয়ান। তিনি বলেন, নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিলে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আমরা সব সময় সতর্ক থাকি বলেই হাসপাতালের কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়নি।

হাসপাতালটির পরিচালক (কলেজের অধ্যক্ষ) অধ্যাপক ডা. মো. জাফর উল্লাহ অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালের ল্যাব থেকে ভুয়া রিপোর্ট ইস্যুর বিষয়ে বলেন, হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে আমি নিশ্চিত। আমাদের প্রতিটি রিপোর্টে ল্যাব নম্বর দেয়া থাকে। যেসব রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলোতে কোনো ল্যাব নম্বর ছিল না। আমাদের ল্যাব থেকে পরীক্ষা করা হলে ল্যাব নম্বর থাকত। এর মানে আমরা রিপোর্ট দেইনি।

র‌্যাব জানায়, বেসরকারি এই হাসপাতালে বাংলাদেশে অনুমোদনহীন করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি র‌্যাপিড টেস্ট করা হয়েছে। পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছে তারা। করোনাভাইরাস নেগেটিভ রোগীকে পজিটিভ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রেখেছে। ভিন্ন ল্যাব থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের প্যাডে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল পরিচালনার লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হয়েছে।

নানা জালিয়াতি ঢাকতে অতিরিক্ত বিল আদায়ে হাসপাতালটি বিলের ডাটা পর্যন্ত ডিলিট করেছে বলেও জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। চলতি বছরের জুনের কোনো ডাটাই হাসপাতালের সার্ভারে নেই। তবে তারা ভর্তি রোগীদের বেশ কিছু বিলের ডকুমেন্ট হাতে পেয়েছেন।

এমডি গ্রেফতার. সাহাবউদ্দিন হাসপাতাল. লাইসেন্স ছাড়া.

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম