বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার
ব্যাংকে টাকার প্রবাহ বাড়াতে আরও ছাড়
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়াতে নীতি-সহায়তায় আরও বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ দফায় কিছু ঋণের ক্ষেত্রে প্রভিশন রাখার বিষয়ে ছাড় দেয়া হয়েছে।
আগে ভোক্তাসহ বেশ কিছু ঋণের বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হতো, এখন ২ শতাংশ হারে রাখতে হবে। ফলে বাড়তি অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পড়ে না থেকে বাজারে চলে আসবে।
এতে কমবে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়, বাড়বে তারল্য প্রবাহ। তবে এতে ব্যাংকের ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
করোনার প্রভাব মোকাবেলায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকিং খাতে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এ কারণে নীতি-সহায়তায় ছাড় দেয়া হয়েছে।
আগের নিয়ম অনুযায়ী ভোক্তাঋণ, গৃহায়ন ঋণ, পেশাজীবীদের নামে যেসব ব্যক্তিগত ঋণ দেয়া হতো এর বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখার বিধান ছিল। এ খাতে ৩ শতাংশ প্রভিশন ছাড় দেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে আগে গৃহায়ন ঋণে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখার বিধান ছিল। এখন তা কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। এ খাতে ৪ শতাংশ প্রভিশন ছাড় দেয়া হয়েছে।
ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে দেয়া ঋণ নিয়মিত থাকলে ২ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হতো। এখন তা অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া সব ধরনের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয় ঝুঁকি এড়ানোর জন্য। যে ঋণে যত বেশি ঝুঁকি সেই ঋণে তত বেশি প্রভিশন।
এতে ঝুঁকির মাত্রা কমে যায়। কিন্তু তারল্য বাড়াতে গিয়ে প্রভিশনে ছাড় দেয়ায় ব্যাংকের ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে গেল। কেননা ঋণ আদায় না হলে ব্যাংক প্রভিশন থেকে কিছুটা হলেও সমন্বয় করতে পারে। এখন ঋণখেলাপি হলে এবং প্রভিশন কম থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
সূত্র জানায়, ভোক্তা ঋণ ও ব্যক্তিগত ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো অডিট ফার্ম দিয়ে সম্পদের মূল্যায়ন করা হয় না। যে কারণে এ খাতে ঝুঁকি বেশি। ভোক্তা ঋণের অপব্যবহারের মাত্রাও বেশি। ফলে এসব ঋণকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। গৃহায়ন খাতেও ঝুঁকির মাত্রা বেশি।
কেননা এ খাতে বেশি ঋণ দিয়ে আমেরিকার ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়েছিল। ব্যাংলাদেশেও গৃহায়ণ ঋণে ভর্তুকি বেশি। বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দায় প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না। এতে গৃহায়ন খাতে দেয়া ঋণ আটকা পড়েছে, খেলাপি হচ্ছে।
এরই মধ্যে এ খাতের ঋণে প্রভিশনে ৪ শতাংশ ছাড় দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গৃহায়ন খাতকে চাঙ্গা করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ খাতে বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে।
একই সঙ্গে গৃহায়ন খাত চাঙ্গা হলে অর্থনীতিতে বহুমুখী ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ খাতে প্রভিশন কমানোর ফলে ব্যাংকগুলো যেমন নতুন ঋণ দিতে উৎসাহিত হবে, তেমনি ঋণের খরচও কমবে।
এদিকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশনের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। খেলাপি ঋণের চারটি শ্রেণি। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের আগের ধাপ কোনো ঋণ বিশেষ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হলে ৫ শতাংশ, নিুমান হিসেবে চিহ্নিত হলে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হলে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ হিসেবে চিহ্নিত হলে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়।
