Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপ

রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধির জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ জরুরি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধির জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ জরুরি

করোনা মহামারির মধ্যেও অত্যধিক রেমিটেন্স প্রবাহ সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এত রেমিটেন্স কোথা থেকে আসছে, কেন আসছে, কীভাবে আসছে এবং ভবিষ্যতে কতদিন এ ধারা চলবে- এমন সব প্রশ্ন অনেকের মধ্যে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে রোববার ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করে ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ নামের একটি সংগঠন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সিপিডির অপর বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বক্তব্য দেন। এছাড়া দূতাবাস কর্মকর্তা, বিদেশ ফেরত কয়েকজন এবং বিদেশে অবস্থানরত কয়েকজন প্রবাসীও আলোচনায় অংশ নেন। সংলাপে বক্তারা রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে প্রণোদনা বাড়ানো ও তা ধরে রাখতে বড় পরিসরে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উন্নত প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।

সিপিডির তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ। ফিলিপাইনে কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগৃহীত রেমিটেন্সের পরিমাণ দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার। অন্যদিকে শুধু ছয় মাসের ব্যবধানে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৮ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘গত বছর দুই লাখেরও বেশি প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। তারপরও প্রবাসী আয়ের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন, প্রবাসীরা শেষ সঞ্চয় নিয়ে দেশে ফিরছেন। আবার কেউ সরকারি ২ শতাংশ প্রণোদনাকে রেমিটেন্স বাড়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটা কতটা যৌক্তিক সেটা খুঁজে দেখার সময় এসেছে।’

অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই প্রবাসীদের অবস্থার ক্ষেত্রে টেকসই কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি। তাই নীতিনির্ধারকদের এ নিয়ে কাজ করতে হবে। জাতীয় সংসদেও এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, প্রবাসী আয়ের ওপর সরকারি ২ শতাংশ প্রণোদনা যদি আরও কিছুটা বাড়ানো যায়, তবে এই প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে। এরকম প্রণোদনা যদি আমরা পোশাক খাতের জন্য করতে পারি তাহলে আরও লাভবান হতে পারব। ইতিমধ্যেই ফিরে আসা বাংলাদেশিদের জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ টাকা ঋণ হিসাবে বিতরণ করা হবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে। এটা নিয়ন্ত্রণ করবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু ব্যাংকটির যথেষ্ট লোকবল নেই। এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ফিরে আসা বাংলাদেশিদের কাজে লাগাতে মাত্র ৪% সুদে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন এই ঋণের ব্যবস্থা করছে সরকার।

সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস (এনআরবি)-এর চেয়ারপারসন এমএস শেকিল চৌধুরী বলেন, একটি সময় হুন্ডির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি অর্থ দেশে আসত। কিন্তু সেটাও এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। আবার প্রবাসীরা প্রতিবছর এক থেকে দুইবার দেশে আসার সময় অনেক টাকা বয়ে আনতেন। এখন সেটার প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এছাড়াও যেসব ব্যবসায়ী হুন্ডির মাধ্যমে ভারি লেনদেন করতেন তাদের মধ্যেও বৈধ পথে টাকা লেনদেনের আগ্রহ বেড়েছে।

সিপিডি জানায়, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় পুরো বিশ্বের অর্থনীতি পর্যুদস্ত। কমে গেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। বিপুল সংখ্যক তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেননি। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে সবাই শঙ্কিত ছিলেন এবং এ কারণে বিশ্বব্যাপী প্রবাসী আয় হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেকর্ড করে চলেছে। প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা যেমন আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক, ঠিক একইভাবে তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটিং মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বগতি মানে প্রবাসীরা ভালো আছেন, এটা ভাবা উচিত নয়। তবে যেসব প্রবাসী ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়ে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন তাদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

সমাপনী বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কর্মহারাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ। কারণ কর্মসংস্থানের ওপর ভিত্তি করেই বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি অর্জন নির্ভর করছে। অনেকেই বলছেন,

রেমিটেন্সের প্রবাহ ২০২১ সালে শেষ পর্যন্ত চলতে পারে। কারও কারও মতে অব্যাহত থাকবে প্রবৃদ্ধি। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রণোদনার ২০০ কোটি টাকা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র কয়েক লাখ টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। নানা অসুবিধার কারণে প্রবাসীদের কাছে টাকা পৌঁছাতে পারছে না তারা। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কেন অন্য কোনো সিডিউল ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করা হবে না?

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম