বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশ সপ্তম
ইকবাল হোসেন
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন সপ্তম। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম।
‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মানওয়াচ থেকে সম্প্রতি এটি প্রকাশিত হয়েছে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ১৮০টি দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের তথ্য নিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। গত ২০ বছরে দুর্যোগের সংখ্যা, মৃত্যু, ক্ষয়ক্ষতির মোট হিসাব এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৮৫টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বড় দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, পাহাড়ধসের মতো দুর্যোগ রয়েছে। এতে ১১ হাজার ৪৫০ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩৭২ কোটি ডলার। এ বছরের প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পুয়ের্তোরিকো। গতবারও শীর্ষে ছিল দেশটি। এরপর যথাক্রমে রয়েছে মিয়ানমার, হাইতি, ফিলিপাইন, মোজাম্বিক, বাহামা। বাংলাদেশ সপ্তম। গতবারও একই অবস্থানে ছিল। এবার বাংলাদেশের পরে রয়েছে পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও নেপাল। প্রতিবেদনে শুধু ২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অবস্থানে ১৩তম। ২০১৮ সালে অবস্থান ছিল ৮৮তম। চলতি বছরের ঝুঁকির তালিকায় থাকা দক্ষিণ এশিয়ার অপর দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান ২০তম, শ্রীলঙ্কা ২৩তম, ভুটান ১০৫তম এবং মালদ্বীপ ১৭৪তম।
২০১০ সাল থেকে জার্মানওয়াচ বিশ্বের সব কটি দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ঝুঁকি নিয়ে ওই সূচকভিত্তিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্থিক ক্ষতি, জীবনের ক্ষতি ও দুর্যোগের আঘাতের মোট সংখ্যাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা এগিয়েছে। যে বছর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়, তার আগের ২০ বছরে ওই দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের আঘাত ও প্রভাব আমলে নেওয়া হয়। প্রথম তিন বছর বাংলাদেশের নাম শীর্ষে থাকার অন্যতম কারণ ছিল ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯৫ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা আমলে নেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছরের প্রতিবেদনে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও ফণির নাম এসেছে।
দেশের পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ বাংলাদেশে দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। এতদিন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকটে পড়তে দেখিনি। এখন আমরা একের পর এক বিপদ অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশে টের পাচ্ছি। এজন্য আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রস্তুতি ও উদ্যোগ নিতে হবে।
