ওয়েবিনারে জিইডি সদস্য ড. শামসুল আলম
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় হচ্ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এমন অনেকে ভাতা পাচ্ছেন অথচ যাদের ভাতার কোনো দরকার নেই। আবার যাদের ভাতা পাওয়ার কথা তাদের অনেকেই তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন। ভাতা পাওয়ার যোগ্য প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে রয়ে গেছেন। এর মানে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় হচ্ছে। রোববার এক অনলাইন সংলাপে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম এ সব কথা বলেন। জার্মানির ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) ও ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) আয়োজনে ‘করোনার প্রভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ : স্বাস্থ্য ও শিক্ষা’ শীর্ষক অনলাইন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মাহফুজ কবীর। অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের (এএসডি) নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, রোগতত্ত্ববিদ ও মানিকগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত শর্মী, উন্নয়ন কর্মী তাহমিনা শিল্পী, সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশীদ লাল, প্রতীক যুব সংসদের নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমান এবং ডিজেএফবির সভাপতি হুমায়ুন কবির।
ড. শামসুল আলম আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় অস্বীকার করব না। কারণ এটা একটা গবেষণার ফলাফল। আমরা চাইব ২০২৫ সালের মধ্যে সব দরিদ্র সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হোক। তিনি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা শিক্ষা ব্যয় ৪ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছি। যেটি বর্তমানে ২ দশমিক ৬ শতাংশে আছে। আসলে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, শিক্ষা ব্যয় ৬ শতাংশে যাওয়া উচিত। ২ দশমিক ৬ থেকে এটাকে ৪ শতাংশে নিতে পারলেও বড় রকমের উল্লম্ফন হবে। স্বাস্থ্য খাতে আমরা ১ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয় করছি। এটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা ২ শতাংশে নেওয়ার কথা বলেছি। এটি করতে পারলেও বড় রকমের উল্লম্ফন হবে। যেসব বরাদ্দ যাচ্ছে আর পরিকল্পনায় যা বলা হচ্ছে- সেগুলোর সঙ্গে সংযোগ কতটা হচ্ছে তা খেয়াল রাখতে হবে। যেমন পরিকল্পনায় আমরা বলেছি, অনুন্নত অঞ্চলগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল রাখার জন্য বা ওই এলাকায় স্কুল-কলেজ গড়ে তোলার জন্য। পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেটের সমন্বয় না হলে পরিকল্পনা করে ফল পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, শ্রেণিগত অসাম্য না থাকলেও বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে বৈষম্য আছে। স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে বৈষম্য আছে। এজন্য আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি।
ড. আলম বলেন, প্রাথমিকে প্রায় ১৮ থেকে ১৯ ভাগ শিশু ঝরে পড়ছে। এটা তো মানবসম্পদের বড় অপচয়। কত প্রতিভা হয়তো ঝরে যাচ্ছে। আমরা তা জানতে পারছি না। এ অপচয় অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, করোনায় বড় ক্ষতি হলো অনেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া। অনেকে কাজে যোগ দিয়েছে, অনেকের বাল্য বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? প্রধানমন্ত্রী অনেক জায়গায় বড় বড় প্রণোদনা দিয়েছেন। বেসরকারিভাবে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতেন সেগুলোর জন্য প্রণোদনার কথা শোনা যায়নি। তাদের অনেক বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ তারা তো সমাজকে সেবা দিচ্ছিলেন। মানুষ উপকৃত হচ্ছিল। কতগুলো বন্ধ হয়েছে তা নিয়ে জরিপ করার প্রয়োজন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বাজেটের আগেই এগুলো করা দরকার।
মূল প্রবন্ধে ড. মাহফুজ কবীর বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দরিদ্র, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে বরাদ্দ পৌঁছতে হবে। সরকারি সেবার মান উন্নত করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার পেছনে পরিবারের অর্থ ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আমূল সংস্কার জরুরি। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি দূর করতে হবে যাতে মানুষ হয়রানিমুক্তভাবে ও কম খরচে বেসরকারি সেবা পেতে পারে।
