গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়াল
হামিদ বিশ্বাস
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঋণ বিতরণের শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক। ব্যাংকটির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী-২০২০ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি, যা দেশের অন্য সব ব্যাংকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
ঋণ আদায়ের দিক থেকেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। ব্যাংকটির ঋণ আদায়ের হার ৯৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ সময় ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ আদায় হয়েছে। গ্রামের অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে ১৪ হাজার ২০১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বকেয়া আছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী-২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ লাখ ২১ হাজার ৭০৪ জন।
এসব সদস্যের মধ্যে ১ হাজার ২২৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা গৃহঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যতিক্রমধর্মী এক ধরনের ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংকটি। বিনা সুদে সংগ্রামী সদস্যদের (ভিক্ষুক) মধ্যে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ টাকার মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত সংগ্রামী সদস্যের সংখ্যা ৮৩ হাজার ২১৩ জন।
জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অধ্যায়ের পর দীর্ঘদিন টানাপোড়েনে ছিল ব্যাংকটি। সর্বশেষ গত বছরের মার্চে এ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদ।
তিনি জানান, গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন, উচ্চশিক্ষা ঋণ বিতরণ, নবীন উদ্যোক্তা ঋণ, গৃহনির্মাণ ঋণ, বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ বিতরণ (এক লাখ টাকার উপরে), দৃষ্টিনন্দন নিজস্ব ভবন ও বৃক্ষরোপণ।
তিনি বলেন, সারা দেশে ১০ কোটি চারাগাছ রোপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ কোটি চারাগাছ রোপণ করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান বলেন, করোনার মধ্যেও ৩৪৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে ব্যাংক।
জানতে চাইলে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল খায়ের মো. মনিরুল হক বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক সমাজের অবহেলিত ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিয়োজিত একটি ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাংকিং সুবিধা ও আর্থসামাজিক উন্নতির লক্ষ্যে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এ ব্যাংক থেকে ঋণের সুবিধা পেতে গ্রাহককে আসতে হয় না। বরং গ্রাহকের কাছে ছুটে যাচ্ছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, এ সেবা দিতে গিয়ে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। তবুও ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ব্যাংকটি টিকে আছে ও মুনাফাও করছে।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক সদস্য ও সদস্যের স্বামীদের মাঝে ঋণবিমা কর্মসূচি চালু করেছে। সদস্য এবং সদস্যের স্বামীর নামে বিমা করা থাকলে সদস্য কিংবা স্বামী যে কেউ মারা গেলে তাদের কাছে ব্যাংকের সমুদয় পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব পরিবারের কাউকে নিতে হয় না। তহবিল দ্বারাই ব্যাংক তাদের ঋণ পরিশোধ করে।
সদস্যদের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি গ্রাম অঞ্চলের মানুষের জন্য করেছে সুন্দর যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং সহজ আয়-রোজগারের পথ। বর্তমানে ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে পল্লীফোনের কার্যক্রম নতুন আঙ্গিকে পরিচালিত হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চশিক্ষা ঋণ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষাজীবন সম্পন্নকারী বা অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরির জন্য ‘নবীন উদ্যোক্তা ঋণ’ কর্মসূচি চালু করেছে। ব্যাংকটি সদস্যের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ মোট পাঁচটি খাতে বৃত্তি দিয়ে আসছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ১১ হাজার ১৩১ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৬০ কেটি ৪৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান থেকে আরও দেখা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৪টি গৃহনির্মাণে ঋণ বিতরণ করেছে ১ হাজার ২২৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর ৫৪ হাজার ৪৬৫ জন শিক্ষার্থীকে বিনা সুদে দেওয়া হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। একই সঙ্গে নবীন উদ্যোক্তা তৈরিতে ২ হাজার ৪৬২ জন গ্রাহকের মাঝে ৫০ কোটি ৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে ১৯৭৬ সালের আগস্ট থেকে একটি গবেষণা প্রকল্প হিসাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৩ সালের অক্টোবর থেকে পৃথক ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে দেশের সব জেলায় ব্যাংকটির কাজ চলছে। গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও কার্যক্রম চলছে।
