Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

খালেদা জিয়ার সামান্য জ্বর থাকলেও অবস্থা স্থিতিশীল: চিকিৎসক

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খালেদা জিয়ার সামান্য জ্বর থাকলেও অবস্থা স্থিতিশীল: চিকিৎসক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল টিমের প্রধান অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো ও স্থিতিশীল রয়েছে।

গত ৩ দিন ধরে তার শরীরে জ্বর উঠানামা করছিল। শনিবার সারা দিন জ্বর আসেনি। কিন্তু সন্ধ্যার পরে একটু জ্বর ছিল (১০০.২ ডিগ্রি)। এছাড়া তার শরীরের পালস, ব্লাড প্রেসার সবকিছুই স্বাভাবিক আছে।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ফিরোজায় রাত সোয়া ৯টায় মেডিকেল টিমের সদস্যরা প্রবেশ করেন। সেখানে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় লন্ডন থেকে ডা. জোবাইদা রহমান ও নিউইয়র্ক থেকে আরেকজন চিকিৎসক অনলাইনে অংশ নেন।

ডা. এফএম সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়ার যে সিটি স্ক্যান রিপোর্টে সংক্রমণ খুবই সামান্য। যেটা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মাইল্ড বা মাইনর বলা হয়।

এর বাইরে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন সব সময় ভালো। যেটা ৯৮ ও ৯৭-এর মধ্যে উঠানামা করছে। যেটা শরীরের জন্য খুব ভালো, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে এখন পর্যন্ত কোনো অক্সিজেন দেয়া লাগেনি। খালেদা জিয়া মানসিক দিক দিয়ে খুবই স্ট্রং আছেন।

এফএম সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য যে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করছি তার ভালো ফলাফল পাচ্ছি বলে মনে হয়। আজ ৯ দিন অতিবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ করোনার দ্বিতীয় সপ্তাহের কঠিন সময় পার করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত উনার কোনো জটিল সমস্যা দেখা যায়নি। এ পুরো সপ্তাহ না যাওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে কোনো শিথিলতা হবে না। এর মধ্যে যদি কোনো জটিলতা কিংবা বিপদ সংকেত পেলে তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সেরকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে না। যদি তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটে তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

খালেদা জিয়ার কোনো উন্নতি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিনের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে উন্নতির লক্ষণ বলা যেতে পারে। তবে এ কদিনে শুধু একটি উপসর্গ দিয়ে করোনার উন্নতি বলা যাবে না। সব দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। কোনো ঢিলেঢালা ভাব দেখানো যাবে না।

সিটি স্ক্যানের বিষয়ে এফএম সিদ্দিকী বলেন, করোনা রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত খুব অল্প সময়ে ফুসফুস আক্রান্ত হয়। যেটা অনেক সময় ৩০ ভাগ, কোনো সময়ে ৫০ ভাগও হয়ে থাকে। যা ওই রোগী নিজেও টের পান না। কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেরকম কিছু হয়নি। তার যেটা রয়েছে তা খুবই সামান্য।

খালেদা জিয়ার ক্ষুধামন্দার বিষয়ে জানতে চাইলে এ চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকার সময়ে তার মারাত্মক ক্ষুধামন্দা, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ছিল। তার ব্লাডসুগার যেটা সব সময়ে গড়ে ১১-এর উপরে ছিল। কিন্তু তিনি বাসায় ফিরে আসার পর এবং আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর সে অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এখন তার ডায়াবেটিস মাত্রা ৮-এর ঘরে নিয়ে আসতে পেরেছি। ব্যথাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হওয়ায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও তিনি ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারছেন। কিন্তু এটাকেই আমরা শেষ বলতে চাই না।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও অধ্যাপক ডা. শাকুর খান। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান করা হয়। গুলশানের বাসা থেকে তাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ নিরাপত্তায় এভারকেয়ারে নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আবার গুলশানের বাসায় ফিরিয়ে আনা হয়।

১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর প্রখ্যাত ‘বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকীরে নেতৃত্বে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের টিম গুলশানের বাসায় তার চিকিৎসা শুরু করে। ‘ফিরোজা’র বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরও ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসাও সেখানে চলছে।

৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে তাকে ৬ মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেয়। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তার মুক্তির সময় আরও ৬ মাস বাড়ায় সরকার। এ বছরের মার্চে তৃতীয় বারের মতো ৬ মাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ সীমিত।

খালেদা জিয়া.

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম