বিআইডিএস ওয়েবিনার

খেলাপি ঋণ ও সুশাসনে কঠোর নজর দিতে হবে

টিকা পাওয়া নিয়ে জনমনে শঙ্কা -পরিকল্পনামন্ত্রী
 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২৪ মে ২০২১, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ও সুশাসনের বিষয়ে এখনই কঠোরভাবে নজর দিতে হবে। ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানে ক্ষমতা হ্রাস না করে সরকার একটু সহায়ক ভূমিকা নিয়ে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে পারে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। তারা বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা কতটা ভঙ্গুর সেটি উঠে এসেছে। স্বাস্থ্যবিধির পরিবর্তে এখন জনস্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা জারি করতে হবে।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয় উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সম্মানিত অতিথি ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। প্যানেল আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচির পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, টিকা নিয়ে যে একটা কালো মেঘ আছে এটা বলতে দ্বিধা নেই। টিকা পাওয়া নিয়ে জনমনে একটা ভীতি ও শঙ্কা বিরাজ করছে। চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার চেষ্টা চলছে। আমাদের দেশে বড় বড় হাসপাতাল শহরে অবস্থিত। চিকিৎসকেরাও শহরে অবস্থান করছেন। গ্রামের মানুষ চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা পান না। অথচ হওয়া উচিত ছিল ভিন্ন। সব হাসপাতাল হওয়ার কথা গ্রামে। তবে স্বাস্থ্যের এই অসমতার জায়গায় সমতা ফেরাতে সরকার কাজ করছে সরকার।

স্বাগত বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, লকডাউন একটি চরম ব্যবস্থা। কিছু ক্ষেত্রে বাস্তব কারণ ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিথিল করা হচ্ছে। এটি বৈপরীত্য তৈরি করছে। করোনাকালীন স্বাস্থ্য খাত কতটুকু ভঙ্গুর তা দেখিয়ে দিয়েছে। শিক্ষা খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, করোনায় শিক্ষা খাতে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ক্রম বা রোটেশন করে কিংবা গ্রুপ করে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর তারল্য, খেলাপি ঋণ (এনপিএল) ও মূলধন পরিস্থিতি ও সুশাসনের বিষয়ে এখনই কঠোরভাবে নজর দিতে হবে।

ড. রেহমান সোবহান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে করোনার পরীক্ষা সবচেয়ে কম। যদি পরীক্ষার হার বাড়ানো হতো, তাহলে সংক্রমণের মাত্রা জানা যেত।

ড. মসিউর রহমান বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক ও গ্রামীণ মানুষ দ্রুত প্রণোদনার অর্থ পাবে সেটি খুব কঠিন। এ সময়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা নেই। আবার অনেকের জন্য ইন্টারনেট খরচ বেশি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার বিষয়টি ভাবনার প্রয়োজন।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, জীবন ও জীবিকা ভারসাম্য আনতে কর্মসূচিগুলোর মধ্যে পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে তিন কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। প্রবৃদ্ধিভিত্তিক জিডিপি পুনর্মূল্যায়ন করে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে সে বিষয় ভাবতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। স্বাস্থ্য কিংবা একক কোনো বিভাগের মাধ্যমে যেটি সম্ভব নয়। ভুল তথ্যের মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত করা হচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করোনাপূর্ব অবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু করোনাপরবর্তী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য কোনো দেশই প্রস্তুতি ছিল না। একটি টিকার ওপর নির্ভর করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সব ধরনের সুযোগ কাজে লাগানো হয়েছে। টিকার উৎপাদন করতে পারলে টেকসই ব্যবস্থাপনা হবে।

আনির চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষ জীবনের চেয়ে জীবিকার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরা হলে সেটি লকডাউন থেকে বেশি কার্যকর হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে অনেক দিক বিবেচনা করতে হয়। শ্রেণিকক্ষ ছোট। তখন করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ঠিক হবে না।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন