সিএমজেএফ-বিএমবিএ আলোচনা
শেয়ারবাজার উন্নয়নে জরুরি কাঠামোগত সংস্কার
বাজেটে শেয়ারবাজারের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই * অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের অর্থনীতিতে শেয়ারবাজারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে এ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
আর সামগ্রিকভাবে বাজার উন্নয়নে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও এ খাতের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই।
শেয়ারবাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় বেশকিছু পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে খাতসংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর আরও কমানো, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ, মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার কমানো, মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তি, বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এবং নতুন নতুন পণ্য চালু।
বাজেট নিয়ে শনিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) যৌথভাবে এটি আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. হাসান ইমাম, বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান ও সিএমজেএফ সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল। সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাপনী বক্তব্য দেন বিএমবিএ’র সিনিয়র সহসভাপতি শুক্লা দাস।
সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান ও কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরেছে। লেনদেন এবং বাজারমূলধন বেড়েছে অনেকগুণ।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি বলেছে, সারা বিশ্বের মধ্যে ‘বেস্ট পারফর্মিং’ শেয়ারবাজার বাংলাদেশে। এক বছর ধরে শেয়ারবাজারে নতুন ধরন দেখছি। নতুন কমিশন অনেকগুলো সুন্দর পদক্ষেপ নিয়েছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা ইকুইটিভিত্তিক মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
বন্ড আসছে, সুকুক (ইসলামি বন্ড) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও করপোরেট ও পারপিচুয়াল বন্ড আসছে। সব মিলিয়ে শেয়ারবাজার ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে বলে মনে করছি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারমূল্যে নিুসীমা) তুলে দিয়েছে। এটি ইতিবাচক। পুঁজিবাজার যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বাজারের ভবিষ্যৎ ভালো। শেয়ারবাজার ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেকহোল্ডারদের দায়িত্ব বাড়বে।
এক্ষেত্রে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্টের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শেয়ারবাজার যেভাবে পরিচালিত হয় এবং সেখানে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, সেগুলো আমাদেরও চালু করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকের আলোচনায় চূড়ান্ত বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান বাড়ানো, লভ্যাংশে দ্বৈত করহার প্রত্যাহার, মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার কমানো, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগসহ যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর পেছনে যুক্তি আছে। বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে কিছু পরিবর্তন আসবে।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা উচিত। এবারের বাজেট ‘মেড ইন বাংলাদেশ বাজেট’। এটি পুঁজিবাজারের জন্যও ইতিবাচক। কমিশন ব্যবসাবান্ধব নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে কাজ করছে। সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কমিশন।
শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০ বছর ধরে একই রকম শেয়ারবাজার দেখে আসছি। সেখানে বিবর্তন দরকার। এজন্য নতুন প্রোডাক্ট আনা ও কৌশল নিতে হবে। আমাদের ইকুইটি মার্কেটের বাইরে গিয়ে বিবর্তন আনতে হবে। এ লক্ষ্যে কমিশন কাজ করছে। আমরা এখন মিউনিসিপ্যাল বন্ড নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া সরকারি সিকিউরিটিজ আনার জন্য গভীরভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।
ছায়েদুর রহমান বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। এর মাধ্যমে উভয় ক্ষেত্রের মধ্যে করহারের ব্যবধান ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলার কারণে ব্যয় অনেক বেশি হয়।
যে কারণে ভালো মুনাফা করা বৃহৎ কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে চাইবে না। এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন তিনি।
ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, প্রতিবছরের বাজেট পুঁজিবাজারের জন্য একটি সুবিধার কথা বলা থাকে। সেটি হলো অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ। কিন্তু এ বছর বাজেট পাশের আগে বলা যাবে না এ সুযোগ থাকবে কি না। তাই আগামী বছরেও চলতি বছরের মতো এ সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি জানাই।
সিএমজেএফ সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল বলেন, সারা বিশ্বে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে পুঁজিবাজার। তাই আমাদের অর্থনীতিকে উন্নত করতে শক্তিশালী পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সরকারি ঋণের বোঝা কমাতে বড়ো বড়ো উন্নয়ন প্রকল্পকে বাজারে আনতে হবে।
আসিফ ইব্রাহিম তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানান। এতে তালিকাভুক্ত ও তালিকার বাইরে থাকা কোম্পানির মধ্যে করের ব্যবধান বাড়বে। ভালো কোম্পানিগুলো কর সুবিধা পাওয়ার জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।
শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্রোকার হাউজের লেনদেনে বিদ্যমান অগ্রিম আয়কর নেওয়া যৌক্তিক নয়। উৎসে করের হার দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ০১৫ শতাংশ নির্ধারণ করার দাবি জানান তিনি। এছাড়া অগ্রিম কর বাবদ যে অতিরিক্ত উৎসে কর নেওয়া হয়েছে, তা বছর শেষে সমন্বয় করা জরুরি।
হাসান ইমাম বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের দিকে আগে নজর দিতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ড এবং অন্যান্য বিনিয়োগকে কাজে লাগানোর জন্য সমগোত্রীয় নতুন ফান্ড বাজারে আনতে হবে। আর এসব ফান্ডে প্রথম ৫ বছর করমুক্ত রাখতে হবে।
