Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

বিআইজিডির প্রতিবেদন

লকডাউন ব্যবস্থাপনা ও করোনা পরীক্ষা নিয়ে অসন্তোষ

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

করোনার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টি থাকলেও সরকারের লকডাউন ব্যবস্থাপনা, করোনা পরীক্ষা এবং ত্রাণ কার্যক্রমের কার্যকারিতা নিয়ে অসন্তুষ্ট জনগণ। সরকারের করোনা ব্যবস্থাপনা নিয়ে জনগণের অভিমতের ওপর জাতীয় পর্যায়ে চালানো ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘স্টেট অব গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ ২০২০-২১ : ম্যানেজিং দ্য কোভিড-১৯ প্যানডেমিক’ শিরোনামে বিআইজিডি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অ্যাকাউন্টিং রিসার্চ সেন্টার যৌথ উদ্যোগে এই গবেষণা পরিচালনা করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডির কার্যনির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিনের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সিপিডির ডিস্টিংগুইশ ফেলো ড. রওনাক জাহান, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির মহাপরিচালক ড. মোরশেদা চৌধুরী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন, পলিসি ইনস্টিটিউটের রেপিড অ্যান্ড রিসার্চ পরিচালক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সরকারের একটি সুস্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল। এই প্রবৃদ্ধি সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা ঘোষিত প্রণোদনায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। বৃহৎ, মাঝারি এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য জিডিপির তিন শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল। সেই তুলনায় আর্থিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠী, তাদের খাদ্য ও কর্ম নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ ছিল এক শতাংশেরও কম। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিক ও তাদের সংগঠনগুলো প্রণোদনার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরব ছিল। অন্য দিকে তুলনামূলকভাবে দুর্বল শ্রমিক ইউনিয়ন, তৃণমূল জনগণ ও তাদের সংগঠনগুলো সেভাবে সরব হতে পারেনি। এই ব্যাপারটিও প্রণোদনা নীতি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে ত্রাণ বা সামাজিক সুরক্ষা সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল। তার উপরে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাবে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ত্রাণ যাদের সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল, তাদের কাছে তথ্য ঠিকমতো পৌঁছেনি। জরিপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশই বিশ্বাস করেন যে, ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় কিছু না কিছু দুর্নীতি অবশ্যই হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা মহামারিকালীন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে মোটামুটি ব্যর্থ হয়েছে। মহামারির দুই মাস পরেও প্রতিটি উপজেলায় গড়ে মাত্র পাঁচটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল। সাড়ে ষোলো কোটি মানুষের জন্য ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ছিল মাত্র দুই হাজার ২৬৭টি। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার উপকরণ (পিপিই) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় ছিল খুবই কম এবং এসব উপকরণ ক্রয়েও ছিল ঢিলেমি। করোনা মোকাবিলার কোনো নীতি, কৌশল বা প্রাক-প্রস্তুতি বাংলাদেশের ছিল না। ২০১১ সালের পর থেকে ‘জাতীয় বায়ুবাহিত এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারি প্রস্তুতি ও সাড়াদান পরিকল্পনা’ হালনাগাদ করা হয়নি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে আক্রান্তের হার যখন খুব বেশি ছিল, সে সময়ে করোনা মোকাবিলার সর্বোচ্চ কমিটি মাত্র তিনবার সভা আয়োজন করেছে। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা ফুটে উঠেছে আমাদের পরীক্ষাসংক্রান্ত উপাত্তে; এখানে করোনা পরীক্ষার হার দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের চেয়ে অনেক কম।

স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ সংকট উত্তরণে বিভিন্ন সুপারিশের কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, সরকারের উচিৎ দ্রুত স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা। একই সাথে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে জনসুরক্ষা কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক নীতিমালা তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা খাত গত এক দশকে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। একে আরও শক্তিশালী করে তোলা দরকার, যাতে এ ধরনের বিপর্যয়ে জনসুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এই খাতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়াতে প্রয়োজন নিরপেক্ষ ও স্বাধীন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা, নীতিনির্ধারণে এসব পর্যবেক্ষণে প্রতিফলন নিশ্চিত করা এবং জনগণের দাবি ও অভিযোগ জানা ও সেগুলো মেটানোর কার্যকর ব্যবস্থা করা। এ দেশে রাষ্ট্র ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন এনজিও) মধ্যে সফল অংশীদারিত্বের প্রচুর উদাহরণ আছে। এ ধরনের অংশীদারিত্বকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করার সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার জায়গা নিশ্চিত করা।

এতে আরও বলা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে এক নীতি-এমন মনোভাব থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। সক্ষম প্রশাসন এবং বিকেন্দ্রীভূত কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রয়োজন মেটাতে বেশি কার্যকর হতে পারে। করোনার মতো বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজন শক্তিশালী জনপ্রশাসন, দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, মতামত গ্রহণের একটি কার্যকর প্রক্রিয়া, অভিজ্ঞতা থেকে শেখা ও সেই জ্ঞানকে সত্যিকারে কাজে লাগানো।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম