বুড়িগঙ্গা উৎসবে বক্তারা
প্রভাবশালীদের ছাড় দিয়ে নদীতে সীমানা পিলার

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বুড়িগঙ্গা নদী উৎসবে বক্তারা বলেছেন, প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল বাঁচাতে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের ভেতরে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নদীর এক পাশের দখল পোক্ত করতে অন্য পাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতেও সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। রাজধানীর বসিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘বুড়িগঙ্গা নদী উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চা এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম।
অতিথিদের আলোচনায় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে বুড়িগঙ্গা বাঁচানোর আন্দোলন শুরু হয়েছে। এরপরও অনেক আন্দোলন হয়েছে। সরকারও উদ্যোগ গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর অক্সিজেনের মাত্রা বেড়েছে। তবে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগে সীমানা পিলারগুলো সঠিক জায়গায় বসানো হয়নি। প্রভাবশালীদের চাপে নদীর ভেতরে সীমানা পিলার বসানো হয়েছে। এখন ওই সীমানা পিলার ধরে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নদীর ব্যাপারে খুবই আন্তরিকতা রয়েছে। তবে যারা নদী রক্ষার কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের কাজের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর নদীরক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করেন। এরপর ঢাকার নদীকে বাঁচাতে মাস্টারপ্ল্যান গঠনের নির্দেশ প্রদান করেন। ইতোমধ্যে ঢাকার নদীর মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয়েছে। নতুন করে পদ্মা, মেঘনাসহ বড় নদীগুলোর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কাজ শুরু করেছে।
কাউন্টার পার্ট অব ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি শাহিন হোসেন বলেন, পৃথিবীর অনেক দূষিত ও মৃত নদীকে নতুন করে জাগিয়ে তোলার উদাহরণ রয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীকে বাঁচাতে সবকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, প্রভাবশালীদের দখল পোক্ত করতে অন্য পাশের ব্যক্তিগত জমিতে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এখন নদীর ভেতর পাইলিং করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, নদ-নদী বাঁচাতে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের সভা-সমাবেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিদের পেয়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। আমরা আস্থাশীল হতে চাই এ দেশের পরিবেশ উন্নয়ন হবে। আমরা পড়াশোনা করেছি সিন্ধু সভ্যতা, নীলনদ সভ্যতা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এসব থেকে ঢাকা শিক্ষা নিতে পারেনি। টেমস ও হোয়াংহোর নেতিবাচক দৃষ্টান্ত ছিল, যদিও সেটার পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে। ঢাকার ক্ষেত্রেও সেটা করা সম্ভব। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম বলেন, আগে নদীতে জাল ফেললে অনেক মাছ পাওয়া যেত, আর এখন মাছ পাওয়া যায় না। এ নদীতে মাছ বা প্রাণ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। নদী ও খালকে বাঁচাতে সবকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকায় খাল ভরাট করে অনেক হাউজিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। জায়গার দাম বাড়ার সঙ্গে তারা খেলার মাঠ, কাঁচাবাজার, স্কুল, মসজিদের জায়গা বিক্রি করে দেন। এ সময় তিনি ইস্টার্ন হাউজিংয়ের বনশ্রী ও মিরপুর প্রকল্পের কার্যক্রমের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।