Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

করোনাকালে ২৬ শতাংশ কিশোর কিশোরী সহিংসতার শিকার

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

করোনাকালে ২৬ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ছেলেরা শারীরিক সহিংসতা এবং মেয়েরা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে বেশি। তাদের মধ্যে কম বয়সি কিশোর-কিশোরীরা তুলনামূলক বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছে। ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের ২৭ শতাংশ এবং ১৫ বছরের বেশি বয়সিদের ২৩ শতাংশ সহিংসতার শিকার হয়েছে। করোনাকালে কিশোর-কিশোরীদের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা থেকে এখনো তারা বের হতে পারেনি।

বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে কিশোরীদের ঝুঁকি ও পরিবর্তিত পরিস্থিতি’ শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত গাইবান্ধা, নড়াইল ও কুমিল্লার ২৬টি উপজেলার ২ হাজার ৭৫৮ পরিবারের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং জিআইজেড বাংলাদেশ যৌথভাবে গবেষণাটি করে। এতে সহায়তা করেছে জার্মান সরকারের অর্থনৈতিক সহায়তা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয় (এফসিডিও)। অনুষ্ঠানে বলা হয়, জরিপে অংশ নেয় ৩ হাজার ১৩৯ কিশোর-কিশোরী। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মেয়ে। করোনার বড় প্রভাব পড়েছে পরিবারগুলোর আয়, জীবনযাত্রা ও সঞ্চয়ের ওপর। খাদ্যাভাবও ছিল। এর মধ্যে গাইবান্ধার নারীদের ওপর প্রভাব বেশি পড়েছে। বিধিনিষেধে প্রায় ২৯ শতাংশ নারী অন্তত এক বেলা খাওয়া বাদ দিয়েছিলেন।

গবেষণায় পাওয়া তথ্য হতে জানা যায়, ঝরে পড়া অন্তত ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, মহামারির কারণে তারা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। ১৬ শতাংশ ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরী জানিয়েছে, তারা এখন পড়াশোনার খরচই আর চালাতে পারছে না। গবেষণা বলছে, মহামারির আগে ও পরে বাল্যবিয়ের হারে সামান্য ব্যবধান হয়েছে। প্রায় ৫০ শতাংশ অভিভাবক জানিয়েছেন, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে করোনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। কিশোরী ও তার পরিবারের সম্মান সুরক্ষিত রাখতে তাকে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে- করোনাকালীন প্রতিনিয়ত এমন সামাজিক চাপের মুখে ছিল কিছু পরিবার। এর ফলে বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

গবেষণায় পাওয়া ফলাফলে দেখা যায়, বাল্যবিয়ে ও স্কুল ছেড়ে দেওয়ার পেছনে দারিদ্র্যের চেয়ে নিরাপত্তা এবং পারিবারিক সম্মান হারানোর ঝুঁকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্কুল বন্ধের প্রেক্ষাপটে অভিভাবকরা কিশোরদের কাজে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, করোনার সময় শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মনো-সামাজিক টানাপোড়েন, সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ-এমন বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে কিশোর-কিশোরীদের।

বিআইজিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, করোনাকালীন অর্থনৈতিক কারণ ও স্কুল বন্ধ থাকা-এই দুটি বিষয় কিশোর-কিশোরীদের জন্য আগে থেকেই চলমান ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে এবং নতুন ঝুঁকির ক্ষেত্র তৈরি করেছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, আমাদের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং একই সঙ্গে মানুষের সক্ষমতা ও সুস্থতাকে সামগ্রিকভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক উম্মে কুলসুম।

ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল, জার্মান দূতাবাসের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের উপপ্রধান ক্যারেন ব্লুম, জিআইজেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. অ্যাঙ্গেলিকা ফ্রেডারমান। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনের অতিথিরা একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। সেখানে ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি) এমএম মাহমুদুল্লাহ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, ব্র্যাকের সাবেক পরিচালক (শিক্ষা) ড. শফিকুল ইসলাম ও ক্ল্যারিসা কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. জিনিয়া আফরোজ প্রমুখ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম