Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

আশা ইউনিভার্সিটি

রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে নগ্ন ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ

ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয় ছাত্রীদের * মামলায় সাক্ষী দেওয়া শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট আটকে রাখা হয়েছে

Icon

একে সালমান, মোহাম্মদপুর (ঢাকা)

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বেসরকারি আশা ইউনিভার্সিটির বাথরুমে গোপন ক্যামেরা বসিয়ে ধারণ করা নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগে উঠেছে রেজিস্ট্রার আশরাফুল হক চৌধুরী ওরফে তানভীর চৌধুরী ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বাদী হয়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। ওই ছাত্রী জানান, সেই মামলায় রেজিস্ট্রার তানভীর চৌধুরীকে বাদ দিয়ে শুধু আমিনুলকে আসামি করে পুলিশ।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে ভার্সিটিতে আমার দুটি সেমিস্টার ড্রপ হয়ে যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ফি বাবদ ৭৫ হাজার টাকা বকেয়া হয়। পরে টিউশন ফির ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে ডিপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে ভার্সিটির সব শাখায় ঘুরে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একদিন রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে গেলে তার ব্যক্তিগত সহকারী আমিনুল ইসলাম আমাকে অফিসের বাইরে ডেকে নিয়ে বাথরুমের ভেতরে আমার একটা অর্ধনগ্ন ভিডিও দেখিয়ে বলে, পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে চাইলে রেজিস্ট্রার স্যারের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে হবে। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। না হলে এরকম অনেক ভিডিও আছে রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে। যদি বাইরে কাউকে বলেন, ওইসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর আমি ২৯ অক্টোবর মোহাম্মদপুর থানায় পর্নোগ্রাফির অভিযোগে মামলা করি। এজাহারে আমিনুল ও রেজিস্ট্রার- দুজনের নামই উল্লেখ করেছি। কিন্তু কী কারণে রেজিস্ট্রার তানভীরের নাম বাদ পড়ল তা বুঝতে পারছি না। মামলার পর আশা এনজিওর লোক গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। এ ছাড়া ভার্সিটি আমার সার্টিফিকেট নিয়ে টালবাহানা করছে। আমি এখন আমার ফল নিয়ে সংশয়ে আছি। আমি আমার ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছি।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামলার পর ধারণ করা ভিডিও, একটি ওয়ালটন প্রিমিও মোবাইল ফোন, দুটি সিম, একটি মেমোরি কার্ড ও নগ্ন ভিডিও উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার সাক্ষী আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এবিএম মাহমুদুল বসরী জন যুগান্তরকে বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন ছাত্রীর এমন ভিডিও ও ব্ল্যাকমেইল করে শারীরিক সম্পর্কের কথা শুনেছি। কিন্তু যখন দেখলাম আমাদের বান্ধবী এমন ঘটনার শিকার হয়েছে- এরপর বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে যাই। তিনি এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী আমিনুল প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। তখন আমরা শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী বান্ধবীকে ডিবি পুলিশে অভিযোগ করতে বলি। ডিবিতে অভিযোগ করা হলে পুলিশ তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা সবকিছু স্বীকার করেন। সে সময় রেজিস্ট্রারকেও দুদিন ডিবিতে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার মা লিখিত মুচলেকা দিয়ে ছেলেকে (রেজিস্ট্রার) ছাড়িয়ে নিয়ে যান। কিন্তু এ ঘটনায় আমরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছি। আমরা মামলার সাক্ষী হলাম কেন- এ জন্য আমাদের সার্টিফিকেট আটকিয়ে রেখেছে। আমরা পড়াশুনা শেষ করলেও আমাদের সার্টিফিকেট দিচ্ছে না।

আশা ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, রেজিস্ট্রারের এরকম অনৈতিক চরিত্র সবার জানা। এর পরেও কেউ মুখ খোলেন না। কারণ তিনি একাধারে মালিক এবং রেজিস্ট্রার। তার আঙ্গুলের ইশারায় সবকিছু চলে। তিনি অনেক নারী শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করেছেন। ফল আটকে রেখে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। তার লালসার শিকার অনেক ছাত্রী লোক লজ্জার ভয়ে আইনি পদক্ষেপ নেননি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ছানোয়ার হোসেন বলেন, মামলাটি তদন্ত করে কোর্টে চার্জশিট জমা দিয়েছি। চার্জশিটে আমরা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণের প্রমাণ পেয়েছি। বিষয়টি বর্তমানে কোর্টে বিচারাধীন।

এ বিষয়ে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি ইকবাল খান চৌধুরী বলেন, আমি গত মার্চ মাসে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছি। আমি এখানে আসার আগে ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম