Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

বিদেশ গেছেন ১০ লাখ কর্মী

জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও কমেছে রেমিট্যান্স

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১১ মাসে কাজ নিয়ে গেছেন ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন বাংলাদেশি কর্মী। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ৯৯ হাজার ৬৮৪। তবে এ সংখ্যা গত বছর ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯। এ বছর কর্মী পাঠানোর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ। চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৯ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন, যা গত বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ কম।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার বিকালে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতিপ্রকৃতি ২০২২ অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সেখানে আরও বলা হয়, ১১ মাসে যে সংখ্যক কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন, তা ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে অভিবাসন প্রবাহ ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বাড়বে। চলতি বছর যে সংখ্যক নারীকর্মী বিদেশ গেছেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকলে এর সংখ্যা ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এবারও সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। সেখানে গত ১১ মাসে গেছেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৭ জন, যা মোট অভিবাসনের ৫৬ শতাংশ। এরপর গেছেন ওমানে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪৮ জন, যা মোট অভিবাসনের ১৫ শতাংশ। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৯৪ হাজার ৫৮৯, সিঙ্গাপুরে ৫৯ হাজার ১৩১, মালয়েশিয়ায় ২৭ হাজার ৮০০ এবং কাতারে গেছেন ২২ হাজার ১৮৬ জন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি ১২ থেকে ১৩টি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটা বাড়াতে হবে। যদিও এবার ভালো খবর যে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বেশিসংখ্যক কর্মী পাঠানো গেছে। আবার তিন-চার বছর পর মালয়েশিয়া, বাহরাইনের বাজার খুলেছে। এবার সবচেয়ে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ঢাকা ও নরসিংদী থেকে বেশি কর্মী গেছেন বিদেশে। দক্ষতার দিক থেকে এবারও কম দক্ষ কর্মী গেছেন। গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে দক্ষ কর্মী কম পাঠানো গেছে ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রামরুর নির্বাহী পরিচালক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, এখনো সিংহভাগ কর্মী যান ব্যক্তিগত ভিসায়। কখনো আত্মীয়স্বজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশী যারা বিদেশে কর্মরত, তাদের মাধ্যমে পাওয়া ভিসা ব্যবহার করে বিদেশ যাচ্ছেন। ফলে সেখানে দক্ষতা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। দক্ষ কর্মী পাঠাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বেশকিছু প্রকল্প চলমান। রিক্রুটিং এজেন্সি বা সরকারের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো গেলে দক্ষতা নিয়ে কর্মীরা বিদেশ যেতে পারতেন। আর দক্ষ কর্মী পাঠানো গেলে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ বাড়ত।

ড. তাসনিম আরও বলেন, গত বছরের চেয়ে চলতি বছর কর্মী বেশি গেছে। কিন্তু সে তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে। অথচ ডলারের দাম বাড়তি, সে হিসাবে রেমিট্যান্স বাড়ার কথা। এক্ষেত্রে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। অন্তত ১০ শতাংশ বাড়ানো উচিত। ট্যাক্স পলিসির ভুল সংশোধন করতে হবে। এ কারণে হুন্ডি আমদানি বাড়ে। এটা বন্ধ করতে হবে।

গত ১১ মাসে বিদেশে যাওয়ার সংখ্যার পাশাপাশি ফিরে আসার সংখ্যাও কম ছিল না। বিশেষ করে তিন হাজারের মতো কর্মীর লাশ এসেছে। এদিকে নজর দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, রেমিট্যান্স তুলনামূলক কম আসার কারণ খুঁজে বের করা দরকার। সংশ্লিষ্ট ফোরামগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হবে। অভিবাসীদের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেট উদ্ঘাটন করে জনসম্মুক্ষে তুলে ধরতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো-রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো, সেজন্য অভিবাসীদের ব্যাংকের ওপর আস্থা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া, নবনির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর (টিটিসি) পরিচালনায় সরকার এনজিওগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা। এছাড়া নিরাপদ অভিবাসন সুনিশ্চিত করতে তরুণদের সহযোগিতা নিয়ে অভিবাসন সম্পর্কিত মোবাইল অ্যাপগুলোর প্রয়োগে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা, গন্তব্য দেশে অভিবাসীদের সন্দেহজনক অস্বাভাবিক মৃত্যুর কিছু কিছু কেস পুনরায় ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া, বায়রায় গঠিত অভিযোগ সেল দ্রুত সক্রিয় করে অভিবাসীদের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা এবং মানব পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলো প্রসিকিউশনের হার বাড়ানো।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম