বিচারপতির ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা
jugantor
যৌতুক দাবি
বিচারপতির ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা

  যুগান্তর প্রতিবেদন  

১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০  |  প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ ফাতেমা নাসরিনের (৪৫) ওপর বর্বর নির্যাতন চালান স্বামী মির্জা সাখাওয়াত হোসেন। যৌতুকের মামলায় জামিনে বের হয়ে ধারালো বঁটি ও মসলা বাটার কাঠের বাটলা দিয়ে স্ত্রীকে নির্মমভাবে আঘাত করেন তিনি। আগারগাঁওয়ে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে দশ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শুক্রবার রাত ১টায় মারা যান ফাতেমা।

নিহত ফাতেমা নাসরিন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ভাতিজি। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করেছেন এই বিচারপতির স্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহনাজ বাবলী। শনিবার সকালে হাসপাতালে ফাতেমার লাশ দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি জানান।

এ ঘটনায় ফাতেমার বড় বোন আরজিনা বেগম (৫২) বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় মূল অভিযুক্ত করা হয় সাখাওয়াত হোসেনকে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ফাতেমা নাসরিন ও মির্জা সাখাওয়াত হোসেনের দীর্ঘ ১৯ বছরের দাম্পত্য জীবন। দাম্পত্য জীবনে ১৭ বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। তবে বিয়ের পর থেকে সাখাওয়াত বিভিন্ন সময় ফাতেমার কাছে যৌতুক দাবি করে আসছিল। সাখাওয়াত বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীকে চাপ দেয় যে, সে যেন ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থিত তার পৈতৃক বাড়ি বিক্রি করে তাকে ১ কোটি টাকা দেয়। কিন্তু ওই পৈতৃক বাড়িতে আরও অনেকের অংশ রয়েছে, তাই একা বিক্রি করা যাবে না বলে ফাতেমা তার স্বামী সাখাওয়াতকে জানায়। এতে সাখাওয়াত ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। সন্তান ও সংসারের কথা চিন্তা করে এসব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে আসছিলেন ফাতেমা।

দিন দিন সাখাওয়াতের নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় ফাতেমা আর সহ্য না করতে পেরে জানুয়ারি মাসে পঞ্চগড় সদর থানায় নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সাখাওয়াত গ্রেফতারও হয়েছিলেন। পরে তিনি জামিনে বের হয়ে আবারও যৌতুকের টাকার জন্য ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকেন। সর্বশেষ গত ৮ মার্চ যৌতুকের টাকার দাবিতে সাখাওয়াত তার মোহাম্মদপুরের বাসায় ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকে। এতে প্রতিবাদ করলে সাখাওয়াত ধারালো বঁটি ও মসলা বাটার কাঠের বাটলা দিয়ে ফাতেমার মাথায় আঘাত করে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। যখন সাখাওয়াত তার স্ত্রীকে দা দিয়ে জবাই করতে উদ্যত হয় তখন তাদের সন্তান এসে বাধা দেয়। পরে ফাতেমাকে দ্রুত উদ্ধার করে আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

শনিবার সকালে ভাতিজির মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন, শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার সকালে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ফাতেমার স্বামীকে আমরা ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান। ফাতেমার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

যৌতুক দাবি

বিচারপতির ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
১৯ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ ফাতেমা নাসরিনের (৪৫) ওপর বর্বর নির্যাতন চালান স্বামী মির্জা সাখাওয়াত হোসেন। যৌতুকের মামলায় জামিনে বের হয়ে ধারালো বঁটি ও মসলা বাটার কাঠের বাটলা দিয়ে স্ত্রীকে নির্মমভাবে আঘাত করেন তিনি। আগারগাঁওয়ে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে দশ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শুক্রবার রাত ১টায় মারা যান ফাতেমা।

নিহত ফাতেমা নাসরিন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ভাতিজি। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করেছেন এই বিচারপতির স্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহনাজ বাবলী। শনিবার সকালে হাসপাতালে ফাতেমার লাশ দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি জানান।

এ ঘটনায় ফাতেমার বড় বোন আরজিনা বেগম (৫২) বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় মূল অভিযুক্ত করা হয় সাখাওয়াত হোসেনকে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ফাতেমা নাসরিন ও মির্জা সাখাওয়াত হোসেনের দীর্ঘ ১৯ বছরের দাম্পত্য জীবন। দাম্পত্য জীবনে ১৭ বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। তবে বিয়ের পর থেকে সাখাওয়াত বিভিন্ন সময় ফাতেমার কাছে যৌতুক দাবি করে আসছিল। সাখাওয়াত বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীকে চাপ দেয় যে, সে যেন ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থিত তার পৈতৃক বাড়ি বিক্রি করে তাকে ১ কোটি টাকা দেয়। কিন্তু ওই পৈতৃক বাড়িতে আরও অনেকের অংশ রয়েছে, তাই একা বিক্রি করা যাবে না বলে ফাতেমা তার স্বামী সাখাওয়াতকে জানায়। এতে সাখাওয়াত ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। সন্তান ও সংসারের কথা চিন্তা করে এসব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে আসছিলেন ফাতেমা।

দিন দিন সাখাওয়াতের নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় ফাতেমা আর সহ্য না করতে পেরে জানুয়ারি মাসে পঞ্চগড় সদর থানায় নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সাখাওয়াত গ্রেফতারও হয়েছিলেন। পরে তিনি জামিনে বের হয়ে আবারও যৌতুকের টাকার জন্য ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকেন। সর্বশেষ গত ৮ মার্চ যৌতুকের টাকার দাবিতে সাখাওয়াত তার মোহাম্মদপুরের বাসায় ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকে। এতে প্রতিবাদ করলে সাখাওয়াত ধারালো বঁটি ও মসলা বাটার কাঠের বাটলা দিয়ে ফাতেমার মাথায় আঘাত করে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। যখন সাখাওয়াত তার স্ত্রীকে দা দিয়ে জবাই করতে উদ্যত হয় তখন তাদের সন্তান এসে বাধা দেয়। পরে ফাতেমাকে দ্রুত উদ্ধার করে আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

শনিবার সকালে ভাতিজির মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন, শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার সকালে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ফাতেমার স্বামীকে আমরা ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান। ফাতেমার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন