সরকারিভাবে ক্যাপসুল এন্ডোসকপি চালু
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে পরিপাকতন্ত্রের রোগ নির্ণয়ের অত্যাধুনিক ‘ক্যাপসুল এন্ডোসকপি’ পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এ পরীক্ষা পদ্ধতিটির উদ্বোধন করা হয়।
হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম কিবরিয়ার সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গ্যাস্ট্রোএন্টোরোলজিস্ট ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. আজাদ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান ও চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিঞা। এছাড়া অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের গ্যাস্ট্রোলিভার বিভাগের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, এই পদ্ধতিতে একটি ভিটামিন সাইজ ক্যাপসুল সেবনের মাধ্যমে রোগীর পরিপাকতন্ত্রের (মুখ থেকে পায়ুপথ) চলমান ও স্থির ছবি সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। ভিটামিন ক্যাপসুল সাইজের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যাপসুলের মধ্যে রয়েছে একাধিক ক্যামেরা, লাইট, ব্যাটারি এবং তথ্য সংরক্ষণকারী যন্ত্র।
তিনি বলেন, পরিপাকতন্ত্রের রোগ নির্ণয়ের গতানুগতিক পদ্ধতির (এন্ডোসকপি ও কোলনসকপি) মাধ্যমে পেটের মধ্যকার ক্ষুদ্রান্তের ছয় মিটারের মতো জায়গার উপসর্গের কারণ নির্ণয় করা যায় না। কিন্তু ক্যাপসুল এন্ডোসকপি পরিপাকতন্ত্রের উল্লেখিত ৬ মিটার জায়গার সব রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি আরও বলেন, ক্যাপসুলটি একবারের বেশি ব্যবহার করা যায়। বেসরকারি পর্যায়ে এই পরীক্ষার খরচ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা হলেও এটির দাম ৪৫ হাজার টাকা। সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের সরবরাহ করলে রোগীর পরীক্ষার খরচ পড়বে মাত্র ৫ হাজার টাকা। তবে আমাদের প্রস্তাবনা হলো সরকার বা কেউ দিলে ৫ হাজার টাকাই রাখা হবে। প্রতিমাসে ১০ থেকে ১৫ জনের এই পরীক্ষা করার সক্ষমতা হাসপাতালের রয়েছে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে অত্যাধুনিক এই সেবাটি পরিপূর্ণভাবে শুরু হবে।
উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্যাপসুল এন্ডোসকপি বিশেষত ক্ষুদ্রান্ত্রের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্ষত (আলসার), প্রদাহ, পলিপ, রক্তস্বল্পতার অজ্ঞাত কারণ নির্ণয়, ক্রন্স ডিজিজ, টিবি, সিলিয়াক ডিজিজ, দীর্ঘকালীন ডায়রিয়া ও পেটে ব্যথার কারণ নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পরীক্ষা-পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। যেমন পরীক্ষার দিন সকালবেলা খালি পেটে ক্যাপসুল সেবন করতে হবে। রোগী ক্যাপসুলটি গিলে ফেলার পরে এটি পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিতে নিচে নামতে থাকে এবং পায়ুপথে বের হয়ে আসে। এ সময় ক্যামেরা কয়েক হাজার ছবি ধারণ করে। ক্যাপসুল সাধারণত এক থেকে তিন দিনে পায়ুপথে বের হয়ে আসে। বের হয়ে আসা ক্যাপসুলের ছবি চিকিৎসকরা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে পর্যবেক্ষণ এবং রোগ নির্ণয় করেন।
ক্যাপসুল এন্ডোসকপির সুবিধাগুলো হলো, এটি সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত, হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। পূর্ণ স্বাভাবিক কার্যক্রম করা যায়, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, অ্যানেস্থেশিয়া অথবা ঘুমের ওষুধের দরকার নেই। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যাপসুলের মাধ্যমে পেসমেকার বা যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ইমপ্ল্যান্ট করা রোগী এই পরীক্ষা করতে পারে। ১০ থেকে ঊর্ধ্বে যে কোনো বয়সের এবং ওজনের ব্যক্তি এই পরীক্ষা করাতে পারবে।
