প্রমাণ মিলল তোফাজ্জলের দুর্নীতির
আব্দুল মালেক, শ্রীপুর (গাজীপুর)
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গায়েবি আটটি প্রকল্প দেখিয়ে শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে জেলা প্রশাসক গঠিত তদন্ত কমিটি। নামমাত্র প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গত বছরের ৫ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তরে ‘শ্রীপুরে গায়েবি আট প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
দীর্ঘ তদন্তে কমিটি চেয়ারম্যান তোফাজ্জলের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ, প্রকৌশলী এবং অভিযোগকারী ইউপি সদস্যদের বক্তব্যসহ সরেজমিন তদন্ত করেছে কমিটি। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে ৮৫ পৃষ্ঠায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী-৪ নম্বর ওয়ার্ডে আটটি প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। যেসব রাস্তায় প্রকল্প দেখানো হয়েছে সেসব প্রকল্পের মধ্যে এলজিইডির চারটি প্রকল্পের ওভারল্যাপিং অর্থাৎ আগে থেকে এলজিইডি করা পাকা রাস্তায় বিধিবহির্ভূতভাবে প্রকল্প দেখানো হয়েছে। ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ মাত্র চারদিনে সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে কাজ শেষ করার আগেই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে চেয়ারম্যান তোফাজ্জল ছাড়াও তৎকালীন সচিব নজরুল ইসলাম ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হারুনুর রশীদ জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (ইউনিয়ন পরিষদ অধিশাখা) মোহাম্মদ ফজলে আজিম মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে দেওয়া বক্তব্যে শ্রীপুর উপ-সহকারী প্রকৌশলী রোমেল বড়ুয়া বলেন, আটটি প্রকল্পের প্রক্কলন তিনি তৈরি করেন। কিন্তু ওই কাজ সম্পর্কে কখনো তাকে জানানো হয়নি। এ কাজ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান যুগান্তরকে জানান, তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে কমিটি বেশ কিছু অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
চেয়ারম্যান তোফাজ্জলের অসদাচরণে অতিষ্ঠ সাত ইউপি সদস্য তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনের দুর্নীতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনগণের প্রাপ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বরমী ইউপি সদস্যরা গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। অবিলম্বে এর প্রতিকার চান তারা। তার দুর্নীতির প্রতিবাদে ইউপি সদস্যরা প্রায় ছয় মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছেন না। হাটে-বাজার ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে তারা জনস্বার্থে কাজকর্ম করছেন। ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য সুমন আহমেদ জানান, চেয়ারম্যান তোফাজ্জলের একঘেয়েমি অসদাচরণ ও দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে তারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাচ্ছেন। অবিলম্বে তিনি এর প্রতিকার চান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরমী ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন জানান, এলজিইডি রাস্তার সঙ্গে ওভারল্যাপিং প্রকল্পগুলোর মধ্যে তিনটি রাস্তা অন্য এলাকায় করে দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনে তার দুর্নীতির সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
