Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

নেপথ্যে ছাত্রলীগের দাবি-দাওয়া

জাবিতে প্রভোস্ট অফিসে শিক্ষার্থীদের তালা

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শহীদ সালাম-বরকত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডুর পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রভোস্টের অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হল অফিস তালাবদ্ধ দেখা গেছে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন হলের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির ব্যবস্থায় ফিল্টার স্থাপন, লাইব্রেরির আধুনিকায়ন, ডাইনিং-ক্যান্টিনের খাবারের মানোন্নয়ন, গেস্টরুম, ওয়াশরুম ও হলে প্রবেশের রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়ে এলেও প্রভোস্ট তা বাস্তবায়ন করছেন না। এছাড়া প্রভোস্ট নিয়মিত হলে আসেন না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মানববন্ধন করলে (পরদিন) সোমবার সকালে উপপ্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবীব এসে হলের প্রবেশপথের রাস্তার পরিমাপ করে নিয়ে যান। এ সময় সিয়াম চত্বরে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে একটি ছোট নালা কেটে দিয়ে তিনি চলে যান। তবে হল প্রভোস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি।

সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় দাবি-দাওয়া না মানায় প্রভোস্টের সঙ্গে হল ছাত্রলীগের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। সম্প্রতি হলসংলগ্ন কয়েকটি নতুন দোকান বরাদ্দে হল ছাত্রলীগ তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করলেও প্রভোস্ট তা মেনে নেননি। গত সপ্তাহে হলের দুটি পদে এক ক্লিনার ও এক সুইপার নিয়োগের সার্কুলার প্রকাশিত হয়। আবার পিয়ন ও মালী পদে দুজনকে নিয়োগের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এসব নিয়োগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও কর্মচারীদের একাংশকে আর্থিক সুবিধা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রভোস্টকে চাপে রাখতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দ্বারা মানববন্ধন করিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি হলে অবস্থানরত ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নোটিশ দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগের হল ইউনিট ও হল প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরাফাত ইসলাম বিজয় এবং সহসভাপতি রাতুল রায় ধ্রুব হলে ক্লিনার পদে নিয়োগের জন্য একজনের সঙ্গে ১৪ লাখ টাকার চুক্তি করেছেন। আর রাঙামাটি এলাকার দুই লোককে মালী এবং পিয়ন পদে নিয়োগ দিতে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে। হলের একটি সূত্র বলছে, নিয়োগ পাওয়ার জন্য আরাফাত ইসলাম বিজয়ের সঙ্গে দেখা করতে ইতোমধ্যে কয়েকবার হলেও এসেছে চাকরিপ্রার্থীদের অভিভাবকরা। তবে হল প্রভোস্ট তার গৃহকর্মীকে ক্লিনার পদে নিয়োগ দিতে চাওয়ায় ছাত্রলীগের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে পারছে না। এ নিয়ে প্রভোস্টের সঙ্গে ছাত্রলীগের কিছুটা মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া হলের সামনের খাবারের দোকান স্থাপনের ভাগবাটোয়ারা নিয়েও ছাত্রলীগের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে বলে গুঞ্জন শোনা গেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে যুগ্ম সম্পাদক আরাফাত ইসলাম বিজয় বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়াকে নস্যাৎ করে দিতে একটা পক্ষ এসব কথা ছড়াচ্ছে। যারা এসব নোংরা রাজনীতি করছে তাদের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ। তারা আমাদের সামনে এসে এসব কথা বলুক। নিয়োগসংক্রান্ত এ বিষয়গুলোতে আমাদের সঙ্গে কারও কোনো কথা হয়নি। প্রভোস্ট স্যারকে বারবার বলার পরও কোনো কাজ করেন না। হলের সামনের রাস্তা এতবার বলার পরও ঠিক করছেন না।

সহসভাপতি রাতুল রায় ধ্রুব বলেন, এসব কথা যারা বলছে তারা সামনাসামনি এসে কথা বলুক। আমাদের নিজেদের সৎ সাহস আছে বলেই আমরা বিষয়গুলো সরাসরি ফেস করছি। আমরা কখনোই এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। হলের শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাঁড়িয়েছি বলেই এখন আমাদের বিরুদ্ধে এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াকে ফেলে দেওয়া যায় না। আমি এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। উপাচার্য প্রকৌশল অফিসকে ইতোমধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। দুই-তিন দিনের মধ্যে হল গেটের সামনে কাজ শুরু হবে। এতদিন পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দেওয়ায় কোনো কাজ করতে পারিনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম