এবার তাজুল ইসলাম, আহমদ হোসেন ও বদি গ্রেফতার
ধরা হয়েছে র্যাবের সাবেক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) সোহায়েলকেও
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামকে রাজধানীর গুলশান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে বনশ্রী এবং র্যাবের সাবেক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) এম সোহায়েলকে বনানী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ‘ইয়াবা ডন’খ্যাত আব্দুর রহমান বদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ খবরে ঢাকায় গ্রেফতারদের ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। এই তিনজনের গ্রেফতারের খবরে অধিকতর তথ্য সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকরা ডিবি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়নি।
এর আগে সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে গ্রেফতার করা হয়।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক শরিফুল হক রাত সাড়ে ১০টায় যুগান্তরকে বলেন, নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন জিইসি মোড় থেকে বদিকে আটক করা হয়েছে। কক্সবাজারের সাবেক এই এমপির নাম ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় রয়েছে। আব্দুর রহমান বদি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বদির পরিবর্তে তার স্ত্রী শাহীন আক্তারকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তিনি দুই দফায়ই সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজার-টেকনাফকেন্দ্রিক ইয়াবাসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে বদির বিরুদ্ধে। তবে তিনি প্রত্যেকবার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
তবে চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল আব্দুর রহমান বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কক্সবাজারের ১০ মাদক গডফাদারের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে বলে জানায় সংস্থাটি। অভিযোগ আছে, বদি তার প্রকাশ্য ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা পাচারে জড়িত। আর তার সম্পদের একটি বড় অংশই আসে মিয়ানমার থেকে মাদক এনে। কয়েক বছর ধরে বহুবার এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বদিকে মাদকের গডফাদার হিসাবে চিহ্নিত করেছে একাধিকবার।
ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৯৬ সালে একই আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। একই সঙ্গে তিনি দলটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন। কিন্তু পরে বাদ পড়েন।
আর গত সোমবার রাতে নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, গুম এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পর নৌবাহিনী এই ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়। ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ সোহায়েল কমোডর থেকে রিয়ার অ্যাডমিরালে পদোন্নতি পান। অভিযোগ ওঠে, কোনো জাহাজ বা ঘাঁটি কমান্ড কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কোর্স না করেই শেখ হাসিনা সরকারের অনুগ্রহভাজন হিসাবে রিয়ার অ্যাডমিরালে পদোন্নতি পান তিনি।
মোহাম্মদ সোহায়েল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত বছরের ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১০ সাল থেকে পরবর্তী দুই বছর মোহাম্মদ সোহায়েল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের ডিরেক্টর ছিলেন। এ সময় তার বিরুদ্ধে গুম এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
