‘কালো চিতা’ মনু জীবনের ওপারে
স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রয়াত ফুটবলার মনির হোসেন মনু
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আশির দশকের ঢাকার ফুটবলের তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার সময়ে মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ। আবাহনী কলকাতা থেকে এনেছে সেসময়ের ইস্টবেঙ্গলের ডাকসাইটে গোলরক্ষক ভাস্কর গাঙ্গুলীকে।
আকাশি নীল শিবিরের আক্রমণভাগে নাইজেরিয়ার তুখোড় স্ট্রাইকার চিমা ওকোরি এবং সেসময়ের টগবসে তরুণ শেখ মো. আসলাম।
সেই ম্যাচে প্রায় মাঝমাঠ থেকে আচম্বিৎ তার বিদ্যুৎগতির শট ভাস্করকে বোকা বানিয়ে গোল। সেই দুরন্ত উইঙ্গার মনির হোসেন মনু চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শুক্রবার বেলা ১২টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিরদিনের জন্য চোখ বুজে নিলেন বাংলাদেশের ফুটবলের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। ৫৩ বছর বয়সে চলে গেলেন জীবনের ওপারে।
দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন লিভার সিরোসিস রোগে। সেই রোগই তাকে কেড়ে নিল জীবনের কাছ থেকে।
সেদিন মনুর চকিত শটে গোল হজম করা ভাস্কর রাতে হোটেল পূর্বাণীতে জনাকয়েক ক্রীড়া সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘গোলটা যে কীভাবে হয়ে গেল, আমি নিজেও বুঝতে পারিনি।’ মনু আরেকটি চোখ ধাঁধানো গোল করেছিলেন চীনের গোয়াংদং ক্লাবের বিপক্ষে।
বাঁকানো শটে সেই রংধনু গোল ঢাকার বর্ষীয়ান ফুটবলপ্রেমীদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। আশির দশকের শুরুতে ‘হিট অ্যান্ড রান’ ফুটবল খেলে মোহামেডান উত্তাল করে তোলে গ্যালারি। সেই সময় আক্রমণভাগে সালাম-বাদল রায় জুটি। উইঙ্গে মনু। গতিসম্পন্ন ফুটবলের সে এক মনোরম সৌকর্য।
সমর্থকরা মনুকে ডাকতেন ‘কালো চিতা’ বলে। দুরন্ত গতি এবং চকিত শটে গোল করার দুর্লভ ক্ষমতা তাকে সমর্থকদের প্রিয়পাত্রে পরিণত করেছিল। বিআরটিসি থেকে মোহামেডানে এসেই জাদু দেখাতে শুরু করেন। আবাহনীর বিপক্ষে তাক লাগানো সেই গোল করেছিলেন তিনি ১৯৮৬ সালে ঢাকা লিগে।
মোহামেডানের অপর গোলটি করেছিলেন ইলিয়াস। ওই ম্যাচে আবাহনীকে হারিয়ে তিন মৌসুম পর মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। পরের বছর প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে চীনের গোয়াংদং ক্লাবের বিপক্ষে বাংলাদেশ সাদা দলের হয়ে আরেকটি দুর্দান্ত গোল করেছিলেন মনু।
গত বছরের ১২ জুলাই লিভার সমস্যা নিয়ে বিএসএমএমইউতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন। এ বছর ফের হাসপাতালে ভর্তি হন। এবার আর বাড়ি
ফেরা হল না মনুর। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত মোহামেডানে খেলেছেন। ১৯৮৮-তে চলে যান ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে। ইনজুরি বাদ সাধে তার ক্যারিয়ারে।
১৯৮৪ থেকে ৮৬- তিন বছর মনু খ্যাতিমান স্ট্রাইকার সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে মোহামেডানে খেলেছিলেন।
১৯৮৬ সালে সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তার আগের বছর মনু জাতীয় দলের হয়ে ’৮৬ ও ’৮৭-তে দু’বার ঢাকার প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ এবং ’৮৫-’৮৬-’৮৭- তিন বছর জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন।
