সেনেগালের স্বপ্নসারথি সাদিও মানে
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুন ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাদিও মানে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাড়িতে অনেক ভাইবোন। নিজেদের মধ্যে মারপিট লেগেই আছে। এর মধ্যে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিল ছেলেটা। বাড়িতে মন বসত না। বেরিয়ে যেত রাস্তায়।
কাগজ-চামড়া জড়িয়ে গোলাকার একটা বস্তু বানিয়ে সমানে লাথি মারত। মাঝে পেরিয়ে গেছে ২৩টা বছর। সেনেগালের অখ্যাত গ্রামের সেই ছেলে আজ বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন। আদর করে যাকে ‘কালো হীরা’ নামে ডাকেন সমর্থকরা।
দক্ষিণ সেনেগালের হতদরিদ্র গ্রাম বামবোলিতে জন্ম সাদিও মানের। তার পরিবার ছিল আরও গরিব। সন্তানদের প্রাথমিক চাহিদাগুলোও মেটাতে পারতেন না মানের বাবা-মা। পড়াশোনার সুযোগ না থাকায় সকাল-বিকাল বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলেই কাটত সময়।
নিজের শৈশব নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে মানে বলেছিলেন, ‘যখন আমার দু-তিন বছর বয়স, তখন থেকে বল ছাড়া আমি আর কিছুই দেখতে পেতাম না। রাস্তায় যখনই কেউ বল খেলছে, আমি নেমে গিয়ে ওদের সঙ্গে যোগ দিতাম। কোথাও ম্যাচ হলে দেখতে যেতাম। যাদের খেলা ভালো লাগত, তাদের মতো করে খেলার চেষ্টা করতাম।’
মানের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে আরও রং লাগে ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগাল অংশ নেয়ার পর। প্রথম ম্যাচেই ফ্রান্সকে হারানো সেনেগালে আলোড়ন ফেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনালে তুরস্কের কাছে হেরে সেনেগালের স্বপ্নযাত্রার সমাপ্তি ঘটেছিল।
এল-হাজি দিউফ ছিলেন সেই দলের সবচেয়ে বড় তারকা। এবার মানেকে ঘিরেই মূলত আবর্তিত হচ্ছে সেনেগালের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। লিভারপুল তারকার মাঝে বিশ্বসেরার ছায়া দেখছেন সেনেগাল কিংবদন্তি দিউফ, ‘ছেলেটা একইসঙ্গে দারুণ প্রতিভাবান ও বিনয়ী।
রাশিয়া বিশ্বকাপে গোটা বিশ্বের সামনে নিজের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাবে সে। আমার মনে হয় এই বিশ্বকাপের অন্যতম বড় তারকা হবে মানে, আগামীবার হয়তো ব্যালন ডি’অরও জিতবে সে।’
দিউফদের দেখেই পেশাদার ফুটবলার হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে চাচার সহায়তায় ডাকারের একটি স্থানীয় ক্লাবে যোগ দেন মানে। মাত্র দুই মৌসুমেই ১৩১ গোল করেছিলেন।
এ সময় হঠাৎই তার ভাগ্য ঘুরে যায়। ফ্রান্স থেকে কিছু স্কাউট এসেছিলেন সেনেগাল থেকে গরিব এবং প্রতিভাবান ফুটবলার তুলে আনতে। মানের দক্ষতা দেখে তারা মুগ্ধ হয়ে যান। ফ্রান্সের ক্লাব মেৎজে তাকে খেলার প্রস্তাব দেয়। রাজি হয়ে যান মানে।
১৫ বছর বয়সে মেৎজেতে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আত্মপ্রকাশ মানের। এই মেৎজে থেকেই উঠে এসেছেন রবার্ট পিরেস, লুইস সাহা, এমানুয়েল আদেবায়েরোর মতো ফুটবলার। চোটের কারণে প্রথমদিকে অনেকদিন খেলতে না পারলেও, ধীরে ধীরে মানিয়ে নেন মানে। মেৎজেতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। ২০১২ অলিম্পিকে দারুণ খেলার পর তাকে কিনে নেয় অস্ট্রিয়ার ক্লাব রেডবুল সালজবুর্গ।
ইংল্যান্ডে মানের আসা সাউদাম্পটনের হাত ধরে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মাত্র দুই মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে হ্যাটট্রিক করেন, যা আজও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দ্রুততম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড। তার গোল করার দক্ষতা চোখে পড়ে লিভারপুল কোচ জুর্গেন ক্লপের। মানেকে নিয়ে আসেন লিভারপুলে।
মোহামেদ সালাহ, রবার্তো ফিরমিনো, ফিলিপ কুতিনহোর সঙ্গে ‘আক্রমণের চতুর্ভুজ’ গড়ে তোলেন মানে। মূলত সালাহ ও তার দক্ষতাতেই লিভারপুল এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে। ফাইনালে রিয়ালের বিপক্ষেও গোল রয়েছে তার। ওয়েবসাইট।
