শতফুল ফুটতে দাও
কালো প্রবৃদ্ধি নয়, চাই সবুজ প্রবৃদ্ধি
ড. মাহবুব উল্লাহ্
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অতি সম্প্রতি যুগান্তরে আমার ‘শতফুল ফুটতে দাও’ কলামে টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করেছিলাম। টেকসই উন্নয়ন হল এমন এক ধরনের উন্নয়ন যার ফলে বর্তমান প্রজন্মের ভোগের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভোগ হ্রাস পায় না। সময়ের প্রবাহে উন্নয়নকে কেন্দ্র করে আমরা তিন ধরনের দৃশ্যকল্প চিন্তা করতে পারি। প্রথম দৃশ্যটি হল, উপর্যুপরি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি এবং তার সঙ্গে ভোগের হারেও বৃদ্ধি।
দ্বিতীয় দৃশ্যকল্পটি হল, সময়ের প্রবাহে প্রবৃদ্ধির হারে উল্লেখযোগ্য কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি হবে না, ফলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ভোগের মাত্রা স্থীতিশীল থাকবে। তৃতীয় দৃশ্যকল্পটি হল, বর্তমান প্রজন্মের আমলে উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং তার ফলে উচ্চ ভোগ হার। এ দৃশ্যকল্প অনুযায়ী অতিউচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্থাৎ বেশি করে উৎপাদনের জন্য বেশি করে সম্পদের ব্যবহার করতে হবে। অবস্থা এমন দাঁড়াতে পারে যে, অতিমাত্রায় সম্পদ ব্যবহার করার ফলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উৎপাদনের মাত্রা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ থাকবে না। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের ভোগের মাত্রা হ্রাস পাবে অর্থাৎ জীবনযাত্রার মানে অধোগতি আসবে। সময়ের প্রবাহে ভোগের মাত্রা সব প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীল রাখা বাঞ্ছনীয়।
আমরা সমাজে বিদ্যমান গরিব-ধনীর মধ্যে বৈষম্য নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। সমাজে আয় বণ্টন সুষম না হলে নানা ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এ রকম অস্থিরতার দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে আমরা লক্ষ করেছি। ইন্দোনেশিয়ায় সুহার্তোর সামরিক সরকারকে বলা হতো Nwe Order regime। সুহার্তো প্রেসিডেন্ট সুকর্ণের সরকারকে উচ্ছেদ করে বলেছিলেন, সুকর্ণের আমলে দেশে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফলে অর্থনীতি প্রচণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছিল। এরপর সুহার্তো তার সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে গোলকার নামে একটি দল সৃষ্টি করে।
এ দলে সেনা কর্মকর্তাদের প্রাধান্য ছিল। গোলকার দলের শাসনামলকে গোলকার ডেমোক্রেসি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ডেমোক্রেসির অনুশীলন এমনভাবে করা হয়েছিল যাতে গোলকার ছাড়া অন্য কোনো দল জয়ী হতে না পারে। প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর সরকার বলতে গেলে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে শক্ত হাতে ইন্দোনেশিয়ার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। এভাবে ২০ বছর চলার পর ইন্দোনেশিয়াতে অকল্পনীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সূচনা হয়। ধনী লোকদের বাড়ি-গাড়ি এবং মূল্যবান ভোগ্যসামগ্রীতে সাজানো বিপণিবিতানগুলো ক্ষুব্ধ জনতার আক্রমণের শিকার হয়। রাজধানী জাকার্তায় দিনের পর দিন আগুন জ্বলতে থাকে। প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর সরকারকে বিদায় নিতে হয়।
সুহার্তোর আমলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু গরিব-ধনীর মধ্যে বৈষম্য তীব্র হচ্ছিল। এর ফলে যে নেতিবাচক সামাজিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তা এত মারাত্মক ছিল যে, সুহার্তোর মতো লৌহমানবকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এখানে যে বৈষম্যের কথা বলা হয়েছে সেই বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে একই প্রজন্মের জীবদ্দশায়। বাংলাদেশেরও অর্থনৈতিক বৈষম্য দিনের পর দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। সমাজের ওপরের দিকের ধনীদের আয় সবচেয়ে নিচের দিকের গরিবদের তুলনায় ১২১ গুণ বেশি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় দেশে কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম নেই। এখানে সেখানে ছোটখাটো মাত্রার গোলযোগ দেখা গেলেও, যেভাবেই হোক সেগুলোকে বোতলবন্দি করে রাখা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিস্থিতি এ রকম নাও থাকতে পারে। সময়মতো এই সমস্যার বিহিত করা সম্ভব না হলে অকল্পনীয় সামাজিক-রাজনৈতিক বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে!
এমন ধরনের ঘটনা ঘটেছিল তিউনিশিয়ার স্বৈরশাসক জায়নাল আবেদীন বেন আলীর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে। তিউনিশিয়ার সাধারণ মানুষ বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিল না। এমনই এক মুহূর্তে ছোট্ট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্রোহের দাবানল জ্বলে ওঠে। তিউনিশিয়ার সংসদ ভবনের কাছে ভ্যানগাড়িতে ফল বিক্রি করার অভিযোগে পুলিশ ভ্যানগাড়ি থেকে ফলগুলো রাস্তায় ছুড়ে ফেলে।
ভ্যানগাড়িওয়ালা নিজের গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভ্যানগাড়িওয়ালার মৃত্যু হয়। কিন্তু সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা তিউনিশিয়ায়। বেন আলী দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। তিউনিশিয়ার এ ঘটনা থেকেই পশ্চিমা গণমাধ্যম আখ্যায়িত ‘আরব বসন্তের’ সূচনা হয়। কাজেই অর্থনৈতিক বৈষম্যকে খুব হালকাভাবে নেয়ার কোনো অবকাশ নেই। মাও জে দং বলেছিলেন, ‘একটি স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানলের সৃষ্টি হতে পারে।’ তাই শান্ত ও প্রতিবাদহীন অবস্থা দেখে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই।
আরেক ধরনের বৈষম্য আছে, যে বৈষম্য সৃষ্টি হয় পূর্ব প্রজন্মের সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের। এটাকে অর্থনীতিবিদরা Intergenerational in equality-র সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ বৈষম্যও গ্রহণযোগ্য নয়। এ বৈষম্য সৃষ্টি হয় টেকসই উন্নয়ন না হলে। সুতরাং টেকসই উন্নয়নের প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন হল, বর্তমান প্রজন্ম কেন পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে ভোগ স্পৃহাকে দমন করবে? এর একটি কারণ হল পরবর্তী প্রজন্মে যারা আসছে তারা তো বর্তমান প্রজন্মের লোকদেরই সন্তান কিংবা নাতি-পুতি। নিজ সন্তান এবং দৌহিত্র-দৌহিত্রীকে ভালোবাসা বা তাদের ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তা করা মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। এভাবে স্নেহ-ভালোবাসা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবহমান থাকে। এ প্রবহমানতা আছে বলেই টেকসই উন্নয়ন নিয়ে দুশ্চিন্তা করার খুব কারণ দেখা যায় না।
কয়েকদিন আগের লেখায় আমি পুঁজির শ্রেণিকরণ করে দেখিয়েছিলাম। এর মধ্যে যে ধরনের পুঁজি পরিবেশের স্বাস্থ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত তা হল প্রাকৃতিক পুঁজি। প্রকৃতি পরম মমতায় আমাদের জন্য যেসব সম্পদ বিছিয়ে রেখেছে তার মূল্য কোনো বাজারে নির্ধারিত হয় না। নির্মল বায়ুর কি কোনো বাজার আছে? নদী ও বিলের কাকচক্ষু স্বচ্ছ পানির কি কোনো বাজার আছে? বন-বনানীতে বৃক্ষরাজি, ফুল ও ফলের যে সমাহার তারও কি কোনো বাজার আছে? যে জীববৈচিত্র্যের কথা আমরা অহরহ বলি তার মূল্য কত তা কি আমরা জানি?
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ, সমুদ্রের নীল, মুক্ত খোলা আকাশ, প্রজাপাতির পাখার বিচিত্র রং, ফুলের সৌন্দর্য, রাত্রির নীরবতা- সব কিছুই গুণগতভাবে একটি সুন্দর জীবনের জন্য কত প্রয়োজন, তা কি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি? শরৎকালে আমাদের দেশে রাতের বেলায় শিশির পড়তে শুরু করে। ছোটবেলায় যখন গ্রামের বাড়ি যেতাম তখন ছিল শীতের মৌসুম। কুয়াশা সৃষ্টি করত রহস্যময়তা। অন্যদিকে ঘরের পাশে গাছের পাতায় যখন শিশির ঝরত তখন টুপটাপ আওয়াজ শুনতে পেতাম। এ শব্দ এখন হারিয়ে গেছে। নৈঃশব্দ্য কোথায় যে শিশির পড়ার শব্দ শুনব, আর বলব পাতায় পাতায় পড়ে নিশির শিশির। এ সবকিছুই হল প্রাকৃতিক পুঁজি। শিল্প বিপ্লব (১৭৬০ সাল) সূচিত হওয়ার আগে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক পুঁজির ওপর সামান্যই আঁচড় লেগেছে।
শিল্প বিপ্লব সূচিত হওয়ার পর দানবরূপী যন্ত্রগুলো প্রাকৃতিক সম্পদকে পিষে ফেলে মানুষের জন্য উপহার দিয়েছে নতুন নতুন ভোগ্যসামগ্রী। এর যেমন মানুষের আরাম-আয়েশ সৃষ্টিতে অনেক অবদান রয়েছে, ঠিক তেমনি তা শূন্য করে ফেলছে জলাশয়ের মাছ, সমুদ্রের তিমিসহ অন্যান্য প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী, পাক-পাখালি, বিচিত্র সব পশু। বিচিত্র সব কীটপতঙ্গসহ আরও অনেক কিছু। এখন নাকি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চলছে। এদের পর এক শিল্প বিপ্লবের ফলে একদিকে অঢেল ভোগ এবং অন্যদিকে প্রকৃতির বিষাক্ত হয়ে ওঠা মানুষসহ সব প্রজাতির প্রাণীর জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে।
গত ২৫ নভেম্বরের সংবাদপত্রে শিরোনাম ছিল, ‘ঢাকার বাতাস কাল ছিল সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর।’ সকাল ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-ই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। ঢাকার দূষণ কতটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটি তুলে ধরেছে বৈশ্বিকভাবে বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর সকাল ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় ঢাকাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। এরপর কয়েক ঘণ্টার জন্য মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোর ও ভারতের কলকাতা শহর দূষণের দিক থেকে ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায়।
তবে রাত সাড়ে ৮টার পর ঢাকা আবার শীর্ষে চলে আসে। রাত পৌনে ১২টার সময়ও ঢাকার অবস্থান বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে শীর্ষেই ছিল। এয়ার ভিজ্যুয়াল বিশ্বের ৯১টি শহরের বায়ুর মান প্রতি ঘণ্টায় পর্যবেক্ষণ করে। ঢাকার বায়ু এত দূষিত হয়ে পড়ল কেন? এর জন্য দায়ী কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া, গাছপালা একেবারেই কমে যাওয়া, উন্মুক্ত মাঠগুলো দখল হয়ে যাওয়া, নদী-নালা দখল হয়ে যাওয়া এবং দালান কোঠার নির্মাণ কাজের ফলে বাতাসে ধূলিকণা ও ভারি ধাতুর জঞ্জাল। নদী ও খালগুলোর কথা নাই বা বললাম।
কেন আমরা এসব করছি? এসব করার বড় একটা কারণ আমাদের বর্তমান জীবনযাত্রাকে সুখকর করার প্রয়াসে আমরা লিপ্ত। কিন্তু আমরা কি সুখে থাকতে পারছি? ভালো একটি ফ্ল্যাটে বাস করার জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে গিয়ে যে মাত্রায় বায়ুদূষণ করা হচ্ছে তার ফলে যারা ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে তারা যেমন ভুগছে অন্যরাও এর কুফল ভোগ করছে। অর্থনীতি শাস্ত্রের ভাষায়, একে বলা হয় নেতিবাচক বাহ্য প্রভাব (Negative externality)। দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগব্যাধি। বিশেষ করে বক্ষব্যাধি, শ্বাসযন্ত্রের ব্যাধি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এলার্জি এবং ক্যান্সারসহ নানা ধরনের জীবনবিনাশী ও কর্মবিনাশী রোগব্যাধি।
এর ফলে শুধু শারীরিক কষ্টই হয় না, কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটে এবং চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। উন্নয়ন করতে গিয়ে এবং উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে বায়ু, পানি, গাছগাছালি, জীবজন্তু এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে অপরিমেয় ক্ষতি হচ্ছে এবং রোগব্যাধির জন্য যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে এ ধরনের ক্ষতি প্রবৃদ্ধির অঙ্ক থেকে বিয়োগ করলে আসল প্রবৃদ্ধি অঙ্ক অনেক নিচে নেমে আসবে। তারপরও প্রশ্ন ওঠে, জীবনযাত্রাকে সুখকর করার জন্য মানুষ এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কেন? এমনকি কিছু করা যায় না, যার ফলে জীবনযাত্রার মান সার্বিক অর্থেই সুখকর ও শান্তিময় হয়ে উঠবে। এর জন্য প্রয়োজন সবুজ প্রবৃদ্ধি, কালো প্রবৃদ্ধি নয়।
আসলে পরিবেশ রক্ষা করা সত্যিই এক কঠিন কাজ। এর জন্য পরিবেশবিদ ও অর্থনীতিবিদরা নানা ধরনের পলিসি গ্রহণের সুপারিশ করে। এ পলিসির মূল কথা হল পরিবেশের ক্ষতি করার জন্য তিরস্কার এবং পরিবেশ রক্ষা করার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা।
মার্কিন দার্শনিক জন রল্স পরিবেশের এ সমস্যা সৃষ্টির জন্য অজ্ঞানতার অবগুণ্ঠনকে (Veil of Ignorance) দায়ী করেছেন। এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি একটি কাল্পনিক অবস্থার কথা বলেছেন। এ অবস্থায় সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করে স্বর্গে রেখে দিয়েছিলেন। মানুষ জানত না কাকে কখন সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে পাঠাবেন। ফলে যারা যখন পৃথিবীতে এসেছে তখন তারা পরবর্তীকালে যারা আসবে তাদের কথা বিবেচনায় না নিয়েই অতিরিক্ত ভোগ করতে চেয়েছে। যদি তারা জানত কাদের কখন পৃথিবীতে পাঠানো হবে তাহলে তারা পৃথিবীতে আসার আগেই নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে ঠিক করে নিত নিজ নিজ ভোগের মাত্রা কতটুকু হবে। শিল্প বিপ্লবের সূচনার পর পৃথিবীতে যা ঘটেছে তা দেখে মনে হয় অজ্ঞানতার অবগুণ্ঠনের কারণেই ঘটেছে। এ প্রখ্যাত দার্শনিকের কল্পনাশ্রিত ব্যাখ্যা একেবারেই উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়।
ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ
