বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখা কি শুধু বাংলাদেশেরই দায়?
এ কে এম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এতদিন আমরা শুনে এসেছি ভারতের ‘জাতীয় নাগরিকপঞ্জি’ বা ‘এনআরসি’র ইস্যুটি কেবল ভারতেরই অভ্যন্তরীণ সমস্যা। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্তাব্যক্তি তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতেও এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে এসেছেন। গত অক্টোবরে ভারত সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে এনআরসির বিষয় নিয়ে কথা হয়। ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছিলেন, এনআরসির বিষয়ে নয়াদিল্লির প্রতিশ্রুতিতে ঢাকা আশ্বস্ত হয়েছে। দিল্লি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এনআরসি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। লক্ষ করে দেখেছি, বাংলাদেশের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভারতের এ স্পর্শকাতর বিষয়টিকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বক্তৃতা বা বিবৃতি দিলে ভারতের মিডিয়াগুলোয় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। ভারতের বুদ্ধিজীবী, মন্ত্রী, আমলারা ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ উল্লেখ করে প্রায়ই বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র। অথচ পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ময়দানে মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য নেতারা ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে তথাকথিত অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে তির্যক ভাষা ব্যবহার করেন, তাতে বন্ধুত্বের ন্যূনতম সৌন্দর্যবোধের লেশও পাওয়া যায় না। তারা তথাকথিত অনুপ্রবেশকারী বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে যখন বলেন, তখন আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না। এনআরসি সমস্যা অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে ভারত যতই যুক্তি দেখাক না কেন, তাদের বিষয়টি যে আর এখন অভ্যন্তরীণ থাকছে না, তা বলাই বাহুল্য। এখন তো দেখছি, এ সমস্যা বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করে দিয়েছে। সম্প্রতি সীমান্ত পেরিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া ও ‘নাগরিকত্ব সংশোধণ আইন’ নামক বিলটি ভারতের রাজ্য সভায় পাস হওয়ার পর আসামে বাংলাদেশ মিশন অফিস ও মিশন প্রধানের গাড়িবহরে হামলা তারই পূর্বলক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক আচরণের অংশ হিসেবে ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে এনে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। সঙ্গে এও বলে দিয়েছে, মিশন অফিস ও সহকারী হাইকমিশনারের গাড়িবহরে হামলা অপ্রীতিকর হলেও এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব ঘটনা ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। এ ঘটনার পরপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল বা স্থগিত হওয়ার ঘটনা নিয়ে কথা উঠেছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার এ দুজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এ সময় ভারতে সফরে না যাওয়ার পেছনে কিছু কারণ দেখিয়েছে। এসব কারণ যে খুব যুক্তিসঙ্গত, তা বলা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভারত আয়োজিত শুক্রবার ‘ষষ্ঠ ভারত মহাসাগর ডায়ালগ’ ও শনিবার ‘১১তম দিল্লি ডায়ালগ’-এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের অন্যতম অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি ছিল মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার আমন্ত্রণে। মন্ত্রীদ্বয়ের ভারত সফর বাতিল কিংবা স্থগিতের যত যুক্তিই দেখানো হোক না কেন, দেশের জনগণ এটিকে ভালো চোখেই দেখছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিরূপ আচরণের জন্য মাঝেমধ্যে প্রতিবাদ হওয়া উচিত, দেশের মানুষ তা চায়। তা না হলে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব অনুভব করা মানুষ ভুলে যাবে।
কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের খবরের কাগজগুলোয় ভারতের এনআরসি এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে বেশকিছু শিরোনাম হয়েছে। পার্শ্ববর্তী এ দুটো দেশের সমস্যা যে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। রোহিঙ্গা সমস্যা তো ঘাড়ের ওপর চেপে বসেই আছে, নতুন করে আবার ভারতের এনআরসিকে কেন্দ্র করে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তাতে বাংলাদেশ স্বস্তিতে বসে থাকতে পারে না। আসামের পর পুরো ভারতে জাতীয়ভাবে এনআরসি করা এবং নাগরিকত্ব সংশোধন বিল প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য সবার দৃষ্টি কেড়েছে। এ বিষয়ে তিনি তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভারত এমন কিছু করবে না, যাতে দেশের জনগণের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।’ বাংলাদেশে হিন্দুদের অত্যাচার করে দেশ থেকে বিতাড়ন করছে বলে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে দাবি করেছেন, তিনি তারও প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টিকারী এক দারুণ সম্প্রীতির দেশ। আমাদের দেশে সব ধর্ম, বর্ণ ও মতের মানুষ পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে যুগের পর যুগ বসবাস করে আসছেন।’ এ কথা সত্য, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা বেশ ভালো আছেন। ভারতে সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে মুসলিমরা চলতে, ফিরতে, কথা বলতে, এমনকি খাদ্য (গরু মাংস) গ্রহণেও যে ভারতের কট্টর হিন্দুদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নিগৃহীত হচ্ছেন, তা নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে আসছে। সে বিচারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের অভিযোগের ক্ষেত্রেও ভারত ক্লাসিফিকেশন করার চেষ্টা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করা প্রসঙ্গে তাদের আগের বক্তব্যকে জাস্টিফাই করার জন্য দেশটির বিদেশ মন্ত্রণালয় এখন নতুন এক বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছে। ভারতের পত্রিকা জানিয়েছে, বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেছেন, ‘ভারত কখনও বলেনি যে, শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে।‘ ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটু আগ বাড়িয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সামরিক শাসন ও বিএনপি আমলে ধর্মীয় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।’ ভারতের বিদেশ মন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পূর্ণ সত্য বলে গ্রহণ করা যাচ্ছে না বলে দুঃখিত। তাদের বক্তব্যে তথ্যের বিভ্রাট ঘটেছে, যা ইচ্ছাকৃত বলেই মনে হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে না বলা যাবে না। অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে। তবে ভারতের মুসলিমদের যেভাবে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা তেমন উল্লেখ করার মতো নয়। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা যদিও বা ঘটেছে, তবে কোনো ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটেনি। অবশ্য একটি অপরাধকে আরেকটি অপরাধ দিয়ে জাস্টিফাই করা যায় না। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের সব সরকারের আমলেই ঘটেছে। তবে এমন কোনো পর্যায়ে পৌঁছায়নি যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশ ছেড়ে যেতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল প্রসঙ্গে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের দিল্লি সফর বাতিলের পেছনে পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের কোনো সম্পর্ক নেই।’
নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে ভারতজুড়ে এখন তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে ভারতের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড রাজ্যের সাধারণ মানুষের ভেতর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু জীবনহানির ঘটনাও ঘটেছে। কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন তাদের রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বাস্তবায়ন হতে দেবেন না। ধর্মের ভিত্তিতে করা এ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর জাতিসংঘ নতুন আইনকে বৈষম্যমূলক বলে আখ্যায়িত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা মনে রেখে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অপরদিকে আসামে ব্যাপক সহিংসতার জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনঝু আবে তার ভারত সফর বাতিল করেছেন। আগামী সপ্তাহে আসামের গোহাটিতে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের পরিকল্পনা ছিল। এ কথা বলার প্রয়োজন নেই যে, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার মূল স্পিরিটের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এ কারণে ভারতের কোনো কোনো মহল এ বিলকে ‘অ্যান্টি মুসলিম সিটিজেনশিপ বিল’ বলে আখ্যায়িত করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে- তারপরও মোদি ও অমিত জুটি এ বিলটি সামনে নিয়ে এলেন কেন? প্রথমে অনেকে মনে করেছিলেন, এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল আসামজুড়ে, সে ক্ষত প্রশমনের দাওয়াই হিসেবে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল সামনে নিয়ে এসেছে কট্টর হিন্দুপন্থী এ দলটি। শুধু তা-ই নয়, এ সংশোধনী বিল উত্থাপনের পেছনে যে আরও কারণ আছে, তা ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বিজেপি গত টার্মে পাস করাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে ক্ষমতায় ফিরে এসে তারা তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো একে একে বাস্তবায়ন করে চলেছে। কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার আইন ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বাতিলের মাধ্যমে শুরু। বাবরি মসজিদ সম্পর্কিত আদালতের রায়ও তাদের পক্ষে গেছে এবং আদালত বলে দিয়েছেন, অযোধ্যাতেই রামমন্দির নির্মিত হবে। সর্বশেষ নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস করিয়ে তাদের আরেকটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করল। মোদি সরকার পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে কথিত ‘বিতাড়িত’ অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিয়ে ইসরাইলের পথ অনুসরণ করে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘এই তিন দেশের রাষ্ট্রধর্ম হল ইসলাম। মুসলিম বাদে অন্য সংখ্যালঘুরা সেসব দেশে যে নরক যন্ত্রণা ভোগ করে ভারতে এসেছে, এ বিল তাদের সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে। বাংলাদেশ নিয়ে অমিত শাহর এ ধরনের ধারাবাহিক বক্তব্য পরোক্ষভাবে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করার শামিল। অমিত শাহ এবারই প্রথম নয় যে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে এর চেয়ে আগ্রাসী ভাষায় তিনি কথা বলতে অভ্যস্ত। ভারতের ক্ষমতাসীনদের এরূপ আচরণ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের ইঙ্গিত বহন করে না। অথচ বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ভারত বিগত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে একের পর এক অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর নামমাত্র মূল্যে কর দিয়ে ভারতের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোয় পণ্য পরিবহনের সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। বাংলাদেশের সড়ক ও নৌপথগুলোও তাদের বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। বৈধ ও অবৈধ উপায়ে লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিক এ দেশে কাজ করে হাজার হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতের বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশিদের মেরে ফেলছে। অথচ বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যার বিচার তার পিতামাতা আজও পাননি। অবৈধ প্রবেশের জন্য গুলি বিনিময়কালে বিএসএফ সদস্যের মৃত্যু হলে উল্টো আমাদেরই তারা বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। প্রশ্ন জাগে, অমিত শাহরা বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব কুকথা বলার সময় ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হিংস কর্মকাণ্ড একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বাংলাদেশের অবদানের কথা ভুলে যান কী করে? আমরা ফারাক্কা-তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাইনি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যে গভীর সমস্যায় পড়েছে, অথচ বাংলাদেশ এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সোনালি অধ্যায়ের দাবিদার বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে পাশে পায়নি। এ কারণে স্বভাবতই এ দেশে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে- ভারতের এমন বিরূপ আচরণের পরও তাদের প্রতি আমাদের দুর্বলতার মূল রহস্য কোথায়? সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মনে হয়, বন্ধুত্ব রক্ষায় আমাদেরই শুধু বিসর্জন দিয়ে যেতে হবে, তাদের কোনো দায় নেই।
পুনশ্চ : ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক যুগান্তরে একটি চমকপ্রদ খবর বেরিয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরার ডিপিএস-এসটিএস ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অধ্যক্ষ ‘হর্ষওয়াল’কে তলব করেছেন হাইকোর্ট। অভিযোগ রয়েছে, ডিপিএস-এসটিএস ইংলিশ মিডিয়াম নামক স্কুলটিতে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন,’ জাতীয় ফল ‘আম,’ জাতীয় পশু ‘বাঘ,’ জাতীয় ফুল ‘পদ্ম,’ জাতীয় পাখি ‘ময়ূর’, জাতির পিতা ‘মহাত্মা গান্ধী’ শেখানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শুধু তা-ই নয়; বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ভারতের বিভিন্ন উৎসব, জাতীয় দিবস, প্রদেশ ও প্রদেশের রাজধানীর নাম, বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের নাম শেখানো হচ্ছে। এতৎসংক্রান্ত উকিল নোটিশ পাওয়ার পরও স্কুলটির অধ্যক্ষ উকিল নোটিশের তোয়াক্কা না করে স্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখান। অতঃপর এ বিষয়ে মামলা হলে ১২ ডিসেম্বর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হর্ষওয়ালকে তলব করেছেন এবং আগামী ১৩ জানুয়ারি তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা
