Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

অর্থনীতিতে কোভিড-১৯-এর প্রভাব

Icon

সুপ্রিম আহমেদ

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থনীতিতে কোভিড-১৯-এর প্রভাব

করোনাভাইরাস (COVID-19)-এই একক শত্রু বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিগুলোকে অত্যন্ত সীমাবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল আমাদের রফতানি ও বৈদেশিক মুদ্রার উৎস একেবারেই সীমিত এবং মোটেই ডাইভারসিফাইড না।

প্রথমত, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে আমদানি-রফতানি ভীষণভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে। গার্মেন্ট শিল্পের কাঁচামাল মূলত আমদানি করা হতো চীন থেকে আর রফতানি করা হতো মূলত ইউএসএ ও ইউরোপে। সব জায়গায়ই লকডাউন। তাই এই বিজনেসের মাজা ভেঙে গেছে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রচুরসংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন, যাদের অনেকেই অদূর ভবিষ্যতে ফিরতে পারবেন না। আর যারা বিদেশে আছেন তাদেরও আয় বহুলাংশে হ্রাস পাবে। ফলে এখন তাদের আয়ে আয়েশ করে চলা জনতা কিছুটা টের পাবে জীবন ও জীবিকার দ্বন্দ্ব কী জিনিস!

তৃতীয়ত, ফ্ল্যাটেনিং দ্য কার্ভের দোহাই দিয়ে অতি প্রয়োজনীয়ভাবেই দেশেও চলছে লকডাউন। কিন্তু এর ফলে দেশি ব্যবসায়ীদের ইনকাম ফ্ল্যাটেনিং হতে হতে কিছুদিনের মধ্যেই তা শূন্য অথবা নেগেটিভ ইনকামে পৌঁছে যাবে। এর মধ্যেই শুরু হবে চাকরি থেকে ছাঁটাই। না করেই বা কী করবে! তবে হ্যাঁ, করার আছে আরও কিছু। এর মধ্যে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী নিজেদের অসহায়ত্ব বিক্রি করে কিছু কম সুদে ব্যাংক লোন যেটাকে আমরা আদর করে নরম লোন বা সফট লোন বলে থাকি, তা নিয়ে তুলবে নিজের ঘরে। আর কিছু প্রকৃত ও সৎ ব্যবসায়ী মূলধন হারিয়ে পথে বসে যাবেন।

সব কথার শেষকথা অর্থনৈতিক লেনদেন কমে যাবে বহুলাংশে। কস্ট অব ‘ফ্ল্যাটেনিং দ্য কার্ভ’-এর নিচে চাপা পড়ে সাময়িকভাবে অজ্ঞান হয়ে যাবে প্রাইভেট সেক্টর। এদিকে সাপ্লাই নেই দেখে জিনিসপত্রের দাম যাবে বেড়ে। অলরেডি ফিসকল স্পেস সংকীর্ণ থাকায় সরকার কতটুকু সাবসিডি আর ট্যাক্স ছাড় দিতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। ফলে দাম বাড়া শুরু, বেকারত্বের পারদ ঊর্ধ্বমুখী। এটা হবে পারফেক্ট রেসিপি ফর স্ট্যাগফ্লেশন!

Stagflation/স্ট্যাগফ্লেশন = জিডিপি (GDP) গ্রোথ স্ট্যাগনেন্ট বা স্থবির হয়ে পড়বে বা কমতে থাকবে + ইনফ্লেশন বেড়ে যাবে + বেকারত্বও বেড়ে যাবে।

তবে কিছুটা আশার কথা ফিসকল স্পেস কম থাকলেও উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমাদের মনিটারি স্পেস মোটামুটি ভালো আছে। কিন্তু মনিটারি স্পেসের সুবিধা অর্থাৎ কম রেটে লোনসহ অন্যান্য মনিটারি স্টিমুলাস দেয়ার ক্ষেত্রে যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার এবং সম্পূর্ণ প্রজেক্ট সফল করতে যে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা দরকার, তা নেই বলেই বড় অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। একটা বিষয় মোটামুটি স্পষ্ট, তা হল ফিসকল স্টিমুলাস বলি আর মনিটারি স্টিমুলাস সব পলিসি স্টিমুলাসের লক্ষ্য থাকে চাহিদা (ডিমান্ড) সাইডকে বুস্ট করা। কারণ, ক্রেতা বাজারে এলে এবং ডিমান্ডের গাছে ফুল ধরাতে পারলে ব্যবসায়ী সাপ্লাইয়াররা মধু খেতে এগিয়ে আসবেনই। তখনই অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, তার আগে নয়।

সুপ্রিম আহমেদ : চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট

 

করোনাভাইরাস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম