Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

করোনা নিয়ন্ত্রণ সামাজিক দায়িত্ব

Icon

ডা. মো. নাজমুল করিম মানিক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

করোনা নিয়ন্ত্রণ সামাজিক দায়িত্ব

গত চার মাস কোথাও বেড়াতে যাইনি। চাকরির সুবাদে হাসপাতালে যেতে হয়। কোনো আত্মীয়ের বাড়ি যাইনি। কোনো স্বজন বা আত্মীয় আসে না। এক অদৃশ্য ভীতির কারণে স্বাভাবিক চলাফেরা রুদ্ধ। পরিচিত কাউকে দেখলে আঁতকে উঠি। এই বুঝি ভাইরাস বয়ে এনেছে।

স্বাভাবিক সৌজন্য ভুলে গেছি। হাত মেলাই না, কোলাকুলি করি না। মাস্ক ছাড়া বের হই না। সামাজিক জীবন পাল্টে গেছে। বাচ্চাদের স্কুল-কলেজ নেই। ঘরের মাঝে সবার কলকাকলিতে বন্দি জীবন।

করোনা একটি আতঙ্কের নাম। রোগটি যতটা ছোঁয়াচে ততটা ভয়ঙ্কর নয়। কিন্তু এক ধরনের ভীতি আর আতঙ্কের কারণে রোগটি প্রতিটি মানুষের মনে হতাশা তৈরি করেছে। অনুজীবটি শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে সক্রিয় হয়। যেসব কোষে ACE-2 এনজাইম থাকে সেগুলোকে ভাইরাসটি আক্রমণ করে। বাইরের আস্তরণ খসে যায় এবং RNA সক্রিয় হয় ও বংশ বৃদ্ধি করে নতুন নতুন কোষকে আক্রান্ত করে।

ভাইরাসটি কোষের এনডোজমে অবস্থান নেয়। ভাইরাসের খসে যাওয়া আস্তর মৃতকোষ আর গলিত অংশে ফুসফুসের এলাভিওলাই পরিপূর্ণ হয়ে ফুসফুস অকার্যকর করে। শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেন স্বল্পতা আর নিউমোনিয়া তীব্র হয়। রক্ত জমাট বাঁধে এবং রক্তনালির প্রসারিত দেয়ালের ছিদ্র দিয়ে রস বের হয়ে ফুসফুসের ফাঁপা অংশ পূর্ণ হয়ে ফুসফুসের প্রসারণ সংকুচিত করে। হৃদযন্ত্র অকার্যকর হয়। প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যায়।

বস্তুত রেডিও, টিভি আর সংবাদপত্রের কল্যাণে রোগটি এত আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পরিবার, সমাজ সবার কাছে সে অবহেলার পাত্র আর অচ্ছুত হয়ে যায়। কেউ তাকে দেখতে আসে না, ছুঁতে চায় না আর সেবা ও চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। সে জন্য এ রোগে আক্রান্ত হলে এক ধরনের ভীতি রোগীকে কুরে কুরে খায়। রোগী সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরও অসুস্থ হয়ে যায়।

আসলে কি রোগটি ভীতিকর? না করোনা রোগে আক্রান্ত রোগীর শতকরা ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শতকরা ১০ জনের আইসিইউ প্রয়োজন হয়। শতকরা ৫ জনের কৃত্রিম শ্বাস যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। করোনা আক্রান্ত রোগীর সবার উপসর্গ থাকে না। রোগটি শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করাতে হবে। মনোবল অটুট রাখতে হবে। আতঙ্ক বা ভয় নয়, সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে।

দেশে প্রতিনিয়ত করোনায় আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। কোনো এক অদৃশ্য শত্রু যা দেখা যায় না, অনুভব করা যায় না অথচ নীরবে প্রলয় ঘটিয়ে সারা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে আর অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এ মহামারীর শেষ কোথায়? কোথায় এর পরিণতি ভবিতব্য জানে।

এক অদৃশ্য শক্তি, প্রাণহীন অণুজীব চীনের উহান থেকে যার যাত্রা শুরু, সেখানকার বন্য প্রাণীর বাজারের বাদুড় থেকে, আবার কারও মতে উহানের ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে মানুষ সংক্রমিত হয়। মানুষের নাক মুখ বা চোখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে আক্রান্ত করে প্রথমে হালকা জ্বর, হাঁচি-কাশি, গা ম্যাজ ম্যাজ করা; কেউ বা উপসর্গহীন। অণুজীবটি মুকুটের মতো দেখতে তাই এর নাম করোনাভাইরাস। আগে একই গোত্রের সার্স- যা ২০০৩ সালে মহামারী আকারে এসেছিল। সে জন্য করোনাকে সার্স কোভ-২-ও বলা হয়।

নতুন এসেছে বলে এর নাম নোভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। গত বছরের শেষ দিকে যার জজন্ম, মুহূর্তের মধ্যেই দাবানলের মতো চীন থেকে যাত্রা শুরু করে ইউরোপের ইটালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ল্যাটিন আমেরিক, ব্রাজিল হয়ে দক্ষিণ এশিয়া ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন মৃত্যু আর আক্রান্তের হার বাড়ছে। ভাইরাসটি ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ক্ষুদ্র অণুজীব অথচ ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্র এর কাছে নাস্যি। এ বৈশ্বিক করোনা মহামারী (প্যানডেমিক), যা এর আগে মানুষ আর কখনও দেখেনি।

প্লেগ, স্পানিশ ফ্লু, কলেরা, ইবোলা, এইডস, বার্ডফ্লু, নিপা ভাইরাস বিভিন্ন সময়ে আত্মপ্রকাশ করলেও নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীকে আক্রান্ত করেছে; কিন্তু করোনাভাইরাস এত দ্রুত সময়ে পৃথিবীর প্রায় সব এলাকাকে সংক্রমিত করেছে। একমাত্র নিউজিল্যান্ড ছাড়া আর কোনো দেশ এ ভাইরাসের অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। কবে পারবে তা শুধু বিধাতাই বলতে পারেন।

বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দরিদ্র দেশ। শুধু দুটি অন্ন খোঁজে কষ্টক্লিষ্ট প্রাণ। এখানে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেই, শৃঙ্খলা নেই, নিয়ম মানার প্রবণতা নেই। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, সচেতনতা নেই, হাসপাতালের বিছানা নেই। মহামারী নিয়ন্ত্রণে যেভাবে আন্তরিকতা নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার, সেরূপ আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার মতো চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নেই। আগেই বলেছি- ভাইরাসটি নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে প্রবেশ করে; এজন্য হাত বারবার সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

নাকে মুখে মাস্ক পরতে হবে তা কাগজের বা কাপড়ের হলেই হল। চোখে চশমা, হাত না ধুয়ে নাক, মুখ বা চোখ স্পর্শ করা যাবে না। যেখানে সেখানে কফ থুথু ফেলা যাবে না। ব্যবহৃত রুমাল বা টিস্যু, মাস্ক ফেলা যাবে না। রুমাল বা টিস্যু না থাকলে কনুই দিয়ে নাক মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। মাস্ক ছাড়া বের হওয়া যাবে না। উপরোক্ত ব্যবস্থা নিলেই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব। অহেতুক দামি নভোচারী পোশাক, উচ্চমূল্যের মাস্ক, ক্যাপ, গগলস, গ্লাভস ব্যবহার রোগীর চিকিৎসার পূর্বশর্ত হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসার নামে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বা অর্থ খরচ করা যাবে না।

করোনাভাইরাসটি বেশি বেশি পরীক্ষা করে শনাক্ত করতে হবে। আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার সুযোগ সম্প্রসারিত করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ রোগীও যেন করোনার অজুহাতে চিকিৎসাবঞ্চিত না হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ থাকতে হবে। জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর ব্যবস্থা রাখতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালেও কোভিড রোগীর চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা রাখতে হবে, চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হাসপাতাল ও রোগীর চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্লিনিক, হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবা কর্মীদের ওপর ভাংচুর-হামলার বিরুদ্ধে আইন করে শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

কোভিড-১৯ এর নিয়ন্ত্রণ ত্বরান্বিত করতে হলে আমাদের সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক দূরত্ব, মুখে মাস্ক আর হাত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার পরিষ্কার করে রোগটি প্রতিরোধ করি। বেশ কিছু দেশ রোগটির ভ্যাকসিন আবিষ্কারে উঠে পড়ে লেগেছে। বেশ কিছু ট্রায়াল হয়েছে, কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে বেঁচে থাকার জন্য সতর্কতাই আসল।

এজন্য যা করতে হবে- ১. যাদের বয়স ৫০-এর ওপর ও যে কোনো বয়সের যাদের কো-মরবিডিটি অর্থাৎ অন্য রোগ আছে যেমন শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট বা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। ২. শুধু বেড হলেই কী হয়, সঙ্গে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী লাগবে। ৩. জ্বর ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি ০২ থেকে ০৩ দিন, তার পরই মারাত্মক দুর্বলতা (Fatigue মানে বিছানা থেকে উঠতে কষ্ট), তীব্র গলাব্যথা যার কারণে কথা বলতে পারছেন না এমনটি (এমনটি নয় যে কেমন ব্যথা ব্যথা লাগে) ও শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট- এই ৩টি উপসর্গ দেখা দিলে তিনি করোনা টেস্ট করে চিকিৎসা নেবেন। ৪. এই নভেল করোনাভাইরাস আমাদের প্রতি বছর হয়ে যাওয়া ইনফ্লুয়েঞ্জার সমগোত্রীয়।

তাই করোনার উপসর্গ আর ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ ৯০ শতাংশ প্রায়ই একই রকম, তাই এ ধরনের উপসর্গ হলেই করোনা টেস্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই, নিজের বাড়িতে সামাজিক ও পারিবারিক দূরত্ব মেনে চলুন। ১৪ দিন পর জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট না থাকলে আপনি মনে করবেন আপনি করোনা বা ইনফ্লুয়েঞ্জামুক্ত। কিন্তু সর্বসাধারণের করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। মনে রাখবেন ৪নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত উপসর্গ না থাকলে আপনি করোনা টেস্ট করতে যাবেন না।

কারণ তা শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, আপনার জন্য ভিড়ের কারণে আসল করোনা রোগীর টেস্টে দেরি হবে ও একটি করোনা টেস্ট কিট খামোখা নষ্ট হবে, এই কিট আমাদের বাইরে থেকে আনতে হয়। আর এই কিট আনতে সময় লাগে এবং এর অভাবে অনেক RT PCR ল্যাব বা পরীক্ষা কেন্দ্র অনেক সময় বন্ধ থাকে।

৫. প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ক) ট্যাবলেট জিঙ্ক, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়াম খাবেন। খ) আমিষ-প্রধান খাদ্য যেমন- ডিম, মাছ ও মাংস এবং সঙ্গে সামান্য তরকারিও খাবেন। আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য দেশি ফল যত পারেন খাবেন (কামরাঙ্গা ছাড়া); কিন্তু তা মূল খাবারের পরে। দু’সপ্তাহ পর করোনাভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করে না।

কাজেই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করে পরীক্ষার কিট অপচয় করা উচিত নয়। ৬. জরুরি প্রয়োজনে মাস্ক পরে বাইরে বের হবেন, নয়তো বাসায় থাকবেন। বাসায় ফিরেই প্রথমে হাত ধোবেন। বাসায় বানানো বা গেঞ্জির মাস্ক ঘরে এসে ধুয়ে শুকিয়ে নেবেন। স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে বারবার হাত পরিষ্কার করবেন। মাস্ক ও চশমা ছাড়া ঘরের বাইরে বেরোবেন না। কাপড়ের মাস্ক হলে বাসায় এসেই তা ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে আবার ব্যবহার করতে পারবেন।

৭. ফুসফুসের কোষ আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে থাকে ফলে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এটাকে ইমিউন রেসপনস বা প্রতিরোধী সক্রিয়তা বলে। করোনার সংক্রমণের ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইমিউন রেসপনসটা অস্বাভাবিক। মানব শরীরে তৈরি অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে আক্রমণ করে। কিন্তু নির্দিষ্ট ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে না। ফলে অস্বাভাবিকভাবে অ্যান্টিবডিগুলো দ্বিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। রক্তনালির দেয়ালের ছিদ্রগুলো প্রসারিত হয়ে রক্তরস রক্তনালি থেকে বের হয়ে আসে। এ অস্বাভাবিক ইমিউন সক্রিয়তাকে সাইটোকাইন স্টর্ম বলে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার ফলে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও অন্য উপসর্গগুলো তীব্র হয়।

করোনাভাইরাসটি যেভাবেই মানব শরীরে এসে থাকুক এখন একমাত্র মানুষ থেকেই রোগটি সংক্রমিত হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা কফ থেকে অন্য মানুষের নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে সংক্রমিত হয়। সার্স কোভ-২ বাতাসে তিন ঘণ্টা ভেসে থাকতে পারে এ ছাড়াও প্লাস্টিকের ওপর ৭২ ঘণ্টা, স্টিলের ওপর ৪৮ ঘণ্টা, কার্ডবোডের ওপর ২৪ ঘণ্টা, তামার ওপর মাত্র ৪ ঘণ্টা থাকতে পারে। যেখানেই থাকুক একমাত্র নাক, মুখ ও চোখ দিয়েই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কাজেই বাইরে বেরোলেই মাস্ক, চশমা পরতে হবে।

হাত না ধুয়ে মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করা যাবে না। করোনাভাইরাস করোনা রোগীর হাঁচি, কাশি থেকে নির্গত হয়ে বাতাসে জলীয় কনা হিসেবে ভেসে বেড়ায়। ওই জলীয়কণা সুস্থ মানুষের নাক, মুখ দিয়ে প্রবেশ করে আক্রান্ত করতে পারে। এ জন্য মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে এবং হাত না ধুয়ে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করা যাবে না।

স্বাস্থ্য সচেতনতাই পারে রোগটি থেকে মুক্ত রাকতে। যেহেতু নাক, মুখ এবং চোখ দিয়ে ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করে এ জন্য নাকে মুখে মাস্ক, হাত বারবার সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করা, হাত না ধুয়ে নাক, মুখ বা চোখ স্পর্শ না করলে এ রোগটির সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। রোগটি প্রতিরোধে সারা বিশ্ব সামাজিক দূরত্ব এবং লকডাউনকে মূল ভরসা হিসেবে গ্রহণ করেছে। হাত না মেলানো, উজন্মুক্ত স্থানে হাঁচি, কাশি বা কফ থুথু না ফেলা।

কোলাকুলি না করা ভিড় বা জনসমাগম এড়িয়ে চলা এসব-ই করোনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দুর্ভাগ্য আমাদের দেশে নিষ্ফল প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব তেমন সফল হয়নি। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দরিদ্র দেশে এর চেয়ে বেশি সম্ভব নয়। তারপরও বাংলাদেশে তূলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনেক কম।

তবে যতক্ষণ করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী ভ্যাক্সিন তৈরি না হচ্ছে অদৃশ্য শত্রুর আতঙ্ক নিয়েই আমাদের এ পৃথিবীতে বসবাস করতে হবে। করোনাভাইরাস ড্রপলেট আকারে নাক, মুখ বা চোখ দিয়ে প্রবেশ করে। অতএব, নাক, মুখ ঢাকতে মাস্ক অবশ্য পরতে হবে চোখে পরতে হবে চশমা। এভাবেই করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। করোনা সংক্রামক ব্যাধি কিন্তু ততখানি ভয়ঙ্কর নয়। প্রতিরোধ আর শুরুতে চিকিৎসা নিলে দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। শিশুদের থাইমাস গ্রন্থি সক্রিয় থাকে তাই শিশুদের করোনা হলেও তেমন মারাত্মক হয় না।

শ্বাসকষ্ট বা কাশি মারাত্মক হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। অক্সিজেন দিতে হবে। শ্বাস নিতে কষ্ট হলে আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা থাকতে হবে। উপজেলা পর্যন্ত আইসিইউ থাকতে হবে। সহজ চিকিৎসার নিয়ম থাকতে হবে। এজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন, ইভার মেকটিন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কার্যকর চিকিৎসা।

সঙ্গে ইকোস্প্রিন বা এনক্সাপাইরিন, কলেস্টেরলবিরোধী ওষুধ দিতে হবে। খুব অল্প ক্ষেত্রে স্টেরয়েড, অক্সিজেন, এন্টিভাইরাল প্রয়োজন হয়। যতদ্রুত করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে, তত দ্রুত করোনা রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এক সময় করোনা দুর্বল হবে মানুষকে সংক্রমণের ক্ষমতা কমে আসবে। ভাইরাসটি হয়তো নির্মূল হবে না। কিন্তু কার্যকারিতা লোপ পেলে মানুষ এত ভীত বা আতঙ্কিত হবে না। চিকিৎসকদের আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

ডা. মো. নাজমুল করিম মানিক : অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

 

ডা. মো. নাজমুল করিম মানিক করোনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম