অবিস্মরণীয় সেই বিশ্বকাপ
মেক্সিকো ’৮৬ বিশ্বকাপে প্রথম যে বিষয়টির ওপর আমি গুরুত্ব দিয়েছিলাম তা হল, আমাদের মনকে আগে এই বলে তৈরি করতে হবে যে, জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা হবে আমাদের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
এজন্য আমাদের যদি হাজার হাজার কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করতে হয়, আমরা তা করব। যদি আমাদের সপ্তাহে চারটি খেলা খেলতে হয়, আমরা খেলব।
যদি আমাদের খুব ছোট ও নিুমানের কোনো হোটেলে থাকতে হয়, আমরা তা-ও মেনে নেব। জাতীয় দলের স্বার্থে নীল-সাদা পোশাকের জন্য আমরা সবকিছু ত্যাগ করব।
এই বার্তাটিই আমি দিতে চেয়েছিলাম। আমি নিজেকে কোনো রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরতে চাইনি, চেয়েছিলাম আমরা দলের জন্য যা করেছি, জনগণ যেন তাতে স্বীকৃতি দেয়।
বিশ্বকাপ চলাকালে একটি মাত্র ভাবনাই আমার মাথায় ছিল : আমি আর্জেন্টিনাবাসীকে দেখাতে চেয়েছিলাম যে, আমাদের একটি দল আছে যা চ্যাম্পিয়ন হতে পারুক আর না-ই পারুক, আর্জেন্টিনা যে বিশ্বের সেরা ফুটবলখেলুড়ে জাতি- এ ব্যাপারে কারও মনে যেন কোনো প্রশ্ন না থাকে।
২ জুন, ১৯৮৬ মেক্সিকোর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আমাদের প্রথম খেলা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে। আমরা ৩-১ গোলে জয় পাই। কোরিয়ানরা অবিশ্বাস্য রকম ফাউল করে খেলেছিল।
প্রথম পর্বে পরের দুটি খেলা ছিল ইতালি ও বুলগেরিয়ার সঙ্গে। ৫ জুন আমরা ইতালির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করি আর পাঁচদিন পর বুলগেরিয়াকে হারিয়ে দিই ২-০ গোলে। ইতালির বিপক্ষে আমি একটি চমৎকার গোল করেছিলাম। এটা ছিল আমার জীবনের সেরা একটি গোল।
ইতালি একটি পেনাল্টি পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত খেলাটি ড্র হয়। ১৬ জুন দ্বিতীয় পর্বের খেলায় আমরা উরুগুয়েকে ১-০ গোলে পরাজিত করি। এটা ছিল বিশ্বকাপে ৫৬ বছর পর উরুগুয়ের বিপক্ষে আমাদের জয়।
পরের খেলা ইংল্যান্ডের সঙ্গে। ২২ জুন, ১৯৮৬। আমি কখনও ভুলব না এ দিনটিকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের খুবই শক্ত লড়াই হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আমার দেয়া ২ গোলে আমরা জয়লাভ করি।
এটা যতটা না ছিল একটি ফুটবল দলকে পরাজিত করা, তার চেয়েও বেশি ছিল একটি দেশকে হারিয়ে দেয়া। খেলা শুরুর আগে আমরা বলেছিলাম, অবশ্যই মালভিনাস যুদ্ধের (ফকল্যান্ড যুদ্ধ) ব্যাপারে ফুটবলের কিছু করার নেই। কিন্তু আমরা জানতাম, সেখানে অসংখ্য আর্জেন্টাইন শিশু মারা গেছে, পাখির মতো গুলি করে তাদের মারা হয়েছে। তাই এ খেলাটি ছিল একটি প্রতিশোধ।
খেলার আগে দেয়া সাক্ষাৎকারে আমরা সবাই বলেছি, ফুটবল আর রাজনীতিকে মিলিয়ে ফেলা উচিত নয়। কিন্তু ওটা ছিল ডাহা মিথ্যা। এ খেলাটা ছিল খেলায় জয়ের চেয়েও এবং বিশ্বকাপ থেকে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দেয়ার চেয়েও বেশি কিছু।
আর্জেন্টিনার জনগণের দুর্দশার দায় এভাবে আমরা ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি। আমি জানি, এটাকে এখন পাগলামি আর অর্থহীন বলে মনে হবে। কিন্তু সত্যি বলতে কী, সে সময় আমাদের অনুভূতি ছিল এটাই।
দ্বিতীয় গোলটি ছিল যেন একটি শিশুর স্বপ্ন। গোলটি আমি করেছি বলে বলছি না, বরং এটি ছিল এমন এক গোল, যার জন্য আপনি স্বপ্ন দেখতে পারেন, কিন্তু কখনও করতে পারেন না।
প্রথম গোলটিতেও আমি প্রচুর আনন্দ পেয়েছি। কখনও কখনও মনে হয়, আমি প্রথমটির চেয়েও এ গোলটিকে বেশি উপভোগ করি। সে সময় আমি এটিকে বলেছিলাম, ‘ঈশ্বরের হাত’। অবিশ্বাস্য বিষয়টি ছিল- আসলে এটা ছিল দিয়েগোর হাত! আর এটাকে কিছুটা ইংল্যান্ডের পকেট মারার মতো মনে হয়।
২৫ জুন সেমিফাইনালে আমরা বেলজিয়ামের মুখোমুখি হই। আমরা খুব সহজভাবে খেলে জয় পাই। আমি পরপর দুটি গোল দিই। এরপর জার্মানির বিপক্ষে ফাইনাল।
জার্মানরা সব সময়ই অদম্য। তারা এমনকি মৃত্যুর সার্টিফিকেট পাওয়ার পরও এগিয়ে যেতে থাকে! ফাইনালে তারা আমার জন্য রাখে লোথার ম্যাথাউসকে। এটা সাধারণ ম্যান-টু-ম্যান মার্কিং ছিল না। সাধারণত যারা এ কাজটি করে, তারা হয় জবরজং টাইপের। কিন্তু লোথার জানতেন কীভাবে খেলতে হয়। তিনি ১০ নম্বর জার্সিধারী হতে পারেন, কিন্তু তিনি মার্ক করতে জানতেন।
শুরুতেই আমরা দুটি দারুণ গোল করি। প্রথমে হেড দিয়ে গোল করেন তাতা ব্রাউন। তিনি এ ব্যাপারে যে কারও চেয়ে বেশি দক্ষ। তাকে পাসারেলার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল। পরের চমৎকার গোলটি করেন ভালদানো।
জার্মানি গোল দুটি শোধ করে দিলে আমার মনে শঙ্কা দেখা দেয়। তারা দুজন। হেডারকে দিয়ে গোল দুটি করিয়েছে। কিন্তু যখন আমি দেখলাম ব্রিগেলের পা দুটি লাকড়ির মতো, তখন আমি নিশ্চিত হই, আমরা এটা কাটিয়ে উঠতে পারব। জয় আসবেই। সেন্টারে কিক-অফের পর বলটি আমার পায়ে এলে আমি বুরুর দিকে তাকাই এবং বলি, ‘দৌড়াও, দৌড়াও, ওরা কাহিল হয়ে গেছে, ওরা আর দৌড়াতে পারবে না। বল নিয়ে যাও, আমরা অতিরিক্ত সময়ের আগেই খেলা শেষ করব।’
ঘটনাটা ঘটেছিলও তা-ই। আমি তখনও আমাদের অর্ধে ছিলাম। মাথা তুলে দেখি, বুরুচাগার সামনে একটি বিশাল ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে, সে দৌড়ে গিয়ে সরাসরি গোল দিতে পারবে। সে ব্রিগেলকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। বুরুচাগাকে ধরার মতো গতি ব্রিগেলের ছিল না।
বল আমার পায়ে এসে গেল। আমি বুরুর দিকে ঠেলে দিলাম। বুরু, বুরু, বুরু... গোল! বুরু! আমি আসলেই চেঁচিয়ে উঠেছিলাম। খেলা শেষ হতে তখন আর ছয় মিনিট বাকি।
খেলা শেষ হওয়ার পর গোটা আজতেকা স্টেডিয়াম আর্জেন্টাইনদের গানে গানে ভরে উঠল। কারণ, মেক্সিকানরা ততক্ষণে নীরবে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেছে। আর তখনই আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করল। আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে কেঁদেছি। কিন্তু এটি ছিল সেরা, সবচেয়ে মহিমান্বিত।
আসিফ রশীদ সম্পাদিত ও অনূদিত ‘আমিই মারাদোনা’ গ্রন্থ থেকে
দিয়েগো ম্যারাডোনা : আর্জেন্টিনার সদ্য প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তি
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
অবিস্মরণীয় সেই বিশ্বকাপ
মেক্সিকো ’৮৬ বিশ্বকাপে প্রথম যে বিষয়টির ওপর আমি গুরুত্ব দিয়েছিলাম তা হল, আমাদের মনকে আগে এই বলে তৈরি করতে হবে যে, জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা হবে আমাদের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
এজন্য আমাদের যদি হাজার হাজার কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করতে হয়, আমরা তা করব। যদি আমাদের সপ্তাহে চারটি খেলা খেলতে হয়, আমরা খেলব।
যদি আমাদের খুব ছোট ও নিুমানের কোনো হোটেলে থাকতে হয়, আমরা তা-ও মেনে নেব। জাতীয় দলের স্বার্থে নীল-সাদা পোশাকের জন্য আমরা সবকিছু ত্যাগ করব।
এই বার্তাটিই আমি দিতে চেয়েছিলাম। আমি নিজেকে কোনো রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরতে চাইনি, চেয়েছিলাম আমরা দলের জন্য যা করেছি, জনগণ যেন তাতে স্বীকৃতি দেয়।
বিশ্বকাপ চলাকালে একটি মাত্র ভাবনাই আমার মাথায় ছিল : আমি আর্জেন্টিনাবাসীকে দেখাতে চেয়েছিলাম যে, আমাদের একটি দল আছে যা চ্যাম্পিয়ন হতে পারুক আর না-ই পারুক, আর্জেন্টিনা যে বিশ্বের সেরা ফুটবলখেলুড়ে জাতি- এ ব্যাপারে কারও মনে যেন কোনো প্রশ্ন না থাকে।
২ জুন, ১৯৮৬ মেক্সিকোর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আমাদের প্রথম খেলা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে। আমরা ৩-১ গোলে জয় পাই। কোরিয়ানরা অবিশ্বাস্য রকম ফাউল করে খেলেছিল।
প্রথম পর্বে পরের দুটি খেলা ছিল ইতালি ও বুলগেরিয়ার সঙ্গে। ৫ জুন আমরা ইতালির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করি আর পাঁচদিন পর বুলগেরিয়াকে হারিয়ে দিই ২-০ গোলে। ইতালির বিপক্ষে আমি একটি চমৎকার গোল করেছিলাম। এটা ছিল আমার জীবনের সেরা একটি গোল।
ইতালি একটি পেনাল্টি পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত খেলাটি ড্র হয়। ১৬ জুন দ্বিতীয় পর্বের খেলায় আমরা উরুগুয়েকে ১-০ গোলে পরাজিত করি। এটা ছিল বিশ্বকাপে ৫৬ বছর পর উরুগুয়ের বিপক্ষে আমাদের জয়।
পরের খেলা ইংল্যান্ডের সঙ্গে। ২২ জুন, ১৯৮৬। আমি কখনও ভুলব না এ দিনটিকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের খুবই শক্ত লড়াই হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আমার দেয়া ২ গোলে আমরা জয়লাভ করি।
এটা যতটা না ছিল একটি ফুটবল দলকে পরাজিত করা, তার চেয়েও বেশি ছিল একটি দেশকে হারিয়ে দেয়া। খেলা শুরুর আগে আমরা বলেছিলাম, অবশ্যই মালভিনাস যুদ্ধের (ফকল্যান্ড যুদ্ধ) ব্যাপারে ফুটবলের কিছু করার নেই। কিন্তু আমরা জানতাম, সেখানে অসংখ্য আর্জেন্টাইন শিশু মারা গেছে, পাখির মতো গুলি করে তাদের মারা হয়েছে। তাই এ খেলাটি ছিল একটি প্রতিশোধ।
খেলার আগে দেয়া সাক্ষাৎকারে আমরা সবাই বলেছি, ফুটবল আর রাজনীতিকে মিলিয়ে ফেলা উচিত নয়। কিন্তু ওটা ছিল ডাহা মিথ্যা। এ খেলাটা ছিল খেলায় জয়ের চেয়েও এবং বিশ্বকাপ থেকে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দেয়ার চেয়েও বেশি কিছু।
আর্জেন্টিনার জনগণের দুর্দশার দায় এভাবে আমরা ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি। আমি জানি, এটাকে এখন পাগলামি আর অর্থহীন বলে মনে হবে। কিন্তু সত্যি বলতে কী, সে সময় আমাদের অনুভূতি ছিল এটাই।
দ্বিতীয় গোলটি ছিল যেন একটি শিশুর স্বপ্ন। গোলটি আমি করেছি বলে বলছি না, বরং এটি ছিল এমন এক গোল, যার জন্য আপনি স্বপ্ন দেখতে পারেন, কিন্তু কখনও করতে পারেন না।
প্রথম গোলটিতেও আমি প্রচুর আনন্দ পেয়েছি। কখনও কখনও মনে হয়, আমি প্রথমটির চেয়েও এ গোলটিকে বেশি উপভোগ করি। সে সময় আমি এটিকে বলেছিলাম, ‘ঈশ্বরের হাত’। অবিশ্বাস্য বিষয়টি ছিল- আসলে এটা ছিল দিয়েগোর হাত! আর এটাকে কিছুটা ইংল্যান্ডের পকেট মারার মতো মনে হয়।
২৫ জুন সেমিফাইনালে আমরা বেলজিয়ামের মুখোমুখি হই। আমরা খুব সহজভাবে খেলে জয় পাই। আমি পরপর দুটি গোল দিই। এরপর জার্মানির বিপক্ষে ফাইনাল।
জার্মানরা সব সময়ই অদম্য। তারা এমনকি মৃত্যুর সার্টিফিকেট পাওয়ার পরও এগিয়ে যেতে থাকে! ফাইনালে তারা আমার জন্য রাখে লোথার ম্যাথাউসকে। এটা সাধারণ ম্যান-টু-ম্যান মার্কিং ছিল না। সাধারণত যারা এ কাজটি করে, তারা হয় জবরজং টাইপের। কিন্তু লোথার জানতেন কীভাবে খেলতে হয়। তিনি ১০ নম্বর জার্সিধারী হতে পারেন, কিন্তু তিনি মার্ক করতে জানতেন।
শুরুতেই আমরা দুটি দারুণ গোল করি। প্রথমে হেড দিয়ে গোল করেন তাতা ব্রাউন। তিনি এ ব্যাপারে যে কারও চেয়ে বেশি দক্ষ। তাকে পাসারেলার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল। পরের চমৎকার গোলটি করেন ভালদানো।
জার্মানি গোল দুটি শোধ করে দিলে আমার মনে শঙ্কা দেখা দেয়। তারা দুজন। হেডারকে দিয়ে গোল দুটি করিয়েছে। কিন্তু যখন আমি দেখলাম ব্রিগেলের পা দুটি লাকড়ির মতো, তখন আমি নিশ্চিত হই, আমরা এটা কাটিয়ে উঠতে পারব। জয় আসবেই। সেন্টারে কিক-অফের পর বলটি আমার পায়ে এলে আমি বুরুর দিকে তাকাই এবং বলি, ‘দৌড়াও, দৌড়াও, ওরা কাহিল হয়ে গেছে, ওরা আর দৌড়াতে পারবে না। বল নিয়ে যাও, আমরা অতিরিক্ত সময়ের আগেই খেলা শেষ করব।’
ঘটনাটা ঘটেছিলও তা-ই। আমি তখনও আমাদের অর্ধে ছিলাম। মাথা তুলে দেখি, বুরুচাগার সামনে একটি বিশাল ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে, সে দৌড়ে গিয়ে সরাসরি গোল দিতে পারবে। সে ব্রিগেলকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। বুরুচাগাকে ধরার মতো গতি ব্রিগেলের ছিল না।
বল আমার পায়ে এসে গেল। আমি বুরুর দিকে ঠেলে দিলাম। বুরু, বুরু, বুরু... গোল! বুরু! আমি আসলেই চেঁচিয়ে উঠেছিলাম। খেলা শেষ হতে তখন আর ছয় মিনিট বাকি।
খেলা শেষ হওয়ার পর গোটা আজতেকা স্টেডিয়াম আর্জেন্টাইনদের গানে গানে ভরে উঠল। কারণ, মেক্সিকানরা ততক্ষণে নীরবে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেছে। আর তখনই আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করল। আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে কেঁদেছি। কিন্তু এটি ছিল সেরা, সবচেয়ে মহিমান্বিত।
আসিফ রশীদ সম্পাদিত ও অনূদিত ‘আমিই মারাদোনা’ গ্রন্থ থেকে
দিয়েগো ম্যারাডোনা : আর্জেন্টিনার সদ্য প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তি