Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

শতফুল ফুটতে দাও

মানবজাতি কি বিপন্ন প্রজাতিতে পরিণত হবে?

Icon

ড. মাহবুব উল্লাহ্

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানবজাতি কি বিপন্ন প্রজাতিতে পরিণত হবে?

পৃথিবীতে এখন করোনাকাল চলছে। এর সূচনা ২০১৯ সালে। এ রোগটি প্রথম শনাক্ত হয় চীনে। রোগটির নিশ্চিত উৎপত্তিস্থল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এ রকম একটি অতিমারি রোগ বিশ্ব রাজনীতির দাবা খেলার ঘুঁটিতে পরিণত হয়েছে।

যেহেতু রোগটি প্রথম শনাক্ত হয় চীনে, এর ফলে রোগটি রাজনীতিকীকরণের ঘোর চক্করের মধ্যে পড়ে যায়। পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ভাইরাসঘটিত রোগটির নাম দিয়েছে চৈনিক ভাইরাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ না করে এটার নামকরণ করলেন চাইনিজ ভাইরাস।

কিন্তু চীনের সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিদ্বেষী এ অবস্থানকে মেনে নিতে চাইল না। কারণ তারা গোড়ায় একটি ভুল করেছিল। চীনেরই একজন তরুণ দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ বললেন, এটি একটি ভিন্ন ধরনের রোগ। এ রোগটি সৃষ্টি করেছে একটি নতুন ধরনের ভাইরাস। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোগটির ওপর কিছু পোস্ট দেন।

এসব পোস্ট দেখে চীনের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এগুলোকে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং গুজব বলে সন্দেহ করল। ওই চিকিৎসককে নিরাপত্তা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হয়। এরপর বেশ কিছুদিন এ ব্যাপারে আর কোনো ধরনের সংবাদ মিডিয়ায় পাওয়া যায়নি। কিন্তু ইতোমধ্যেই চীনা বিশেষজ্ঞরা গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হলেন একটি নতুন ভাইরাস এ রোগটি সৃষ্টি করছে। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি হিসাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়ল।

শুধু তাই নয়, রোগটি গোটা হুবেই প্রদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। চীনা কর্তৃপক্ষ এ মহামারিকে সামাল দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করল। স্থানীয় হাসপাতালগুলো এত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সক্ষম ছিল না। চীন সরকার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে বিশাল দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করল। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের জড়ো করা হয়। এরা রাত-দিন পরিশ্রম করে আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দিতে থাকেন।

এর পাশাপাশি কঠোর লকডাউন করায় উহানের বাসিন্দারা খাদ্যদ্রব্য কিনতে পারছিল না। চীনে সবচেয়ে ক্ষুদ্র সামাজিক ইউনিটকে বলা হয় কমিউনিটি। অনেকটা আমাদের দেশের ওয়ার্ডের মতো। প্রত্যেক কমিউনিটিতে কিছু সমাজকর্মী থাকে। এরা কমিউনিটির বাসিন্দাদের সেবা দেওয়ার জন্য খুবই তৎপর হয়ে উঠেছিল। এসব কমিউনিটি কর্মীদের মধ্যে যেমন আছে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, তেমনি আছে পার্টিবহির্ভূত অনেক মানুষ যারা মানুষের দুর্দিনে মানুষকে সেবা দিতে আনন্দ পায়।

লকডাউন আরোপ, নতুন হাসপাতাল তৈরি এবং বিপুলসংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের সমাবেশ ঘটিয়ে আক্রান্তদের সুস্থ করার কাজ চলল। আশানুরূপভাবে চীনা কর্তৃপক্ষের করোনাভাইরাস ও করোনা রোগবিরোধী পদক্ষেপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্যজনক ভূমিকা পালন করল।

চীন পাশ্চাত্য দেশগুলোর মতো ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র নয়। চীনে রাষ্ট্র ও সমাজে কমিউনিস্ট পার্টির একাধিপত্য জারি আছে। তবে বেশ কিছু ছোট রাজনৈতিক দল আছে যারা কমিউনিস্ট আদর্শ গ্রহণ করেনি, কিন্তু তারা কমিউনিস্ট পার্টির মিত্র হিসাবে ভূমিকা পালন করে। কমিউনিস্ট পার্টিতে কঠোরভাবে শৃঙ্খলা মেনে চলার ব্যবস্থা আছে। পার্টি প্রদর্শিত বিধানাবলি থেকে কোনো সদস্য বিচ্যুত হলে তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয়। এ ছাড়া পার্টির কর্মীদের পার্টির আদর্শ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য রয়েছে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

যে কোনো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মতপার্থক্য নিয়ে কমিউনিটি লেভেল থেকে তর্ক-বিতর্কের সূচনা হয় এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের পর ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এক কথায় বলা যায়, চীনের প্রশাসন সহমত সৃষ্টি করে দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে সামাজিক অনেক জটিল সমস্যারই হুট করে সমাধান হয় না। এতদসত্ত্বেও কনসাল্টেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে দেশটি অগ্রসর হচ্ছে তাকে কীভাবে অগণতান্ত্রিক বলা যাবে! গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কী হওয়া উচিত তা নিয়ে এখন পর্যন্ত রাজনীতি বিজ্ঞানীরা সুনির্দিষ্ট কোনো উপায় নির্ণয় করতে সক্ষম হননি।

একজন তরুণ দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের গল্পটি দিয়ে লেখাটির সূচনা করেছিলাম। মহান এ চিকিৎসক মহামারি শুরু হওয়ার কিছু পরে নিজেই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি চায়ের মধ্যে তিন-চার রকমের প্রাকৃতিক কেমিক্যাল শনাক্ত করেছিলেন যেগুলো করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সুস্থ হতে সাহায্য করে। চীনে কয়েক হাজার বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী স্বাস্থ্য সুরক্ষাব্যবস্থা চালু আছে। চীনা ডাক্তাররা আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী ওষুধ সহযোগে চিকিৎসা করতে তৃপ্ত বোধ করেন।

উহানে যখন লকডাউন চলছিল তখন এক রোগী বৈকালিক সূর্যের আকাশ দেখতে চেয়েছিল। তার সেই ইচ্ছা পূরণ করা হয়। তার চাকাওয়ালা রোগশয্যাটিকে হাসপাতালের বাইরে এনে প্রধান সড়কের মাঝখানে তাকে কিছু সময় অতিবাহিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। এমন সুযোগ আর কোথাও দেওয়া হয় কিনা, আমার জানা নেই।

চীনা বিজ্ঞানীরা করোনার এ নতুন ভাইরাসের জেনোম শনাক্ত করতে সক্ষম হন এবং এ আবিষ্কার অসুখটি প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কারে সহায়ক হয়। অবশ্য পৃথিবীর অনেক দেশেই জেনোমের গবেষণা চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি টিকারও প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কিছু টিকাজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও তা ধর্তব্যের মধ্যে নয়। তা সত্ত্বেও কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটলে তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস উন্মত্ত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে।

মিউটেশন-এর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের ভিন্ন আরেকটি সংস্করণের উদ্ভব ঘটেছে। এ ভাইরাসটি খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায় এবং বিপজ্জনকও বটে। আমরা এখনো জানি না, যে টিকা আমরা নিচ্ছি সেটা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে এবং কতদিন এ টিকা আমাদের সুরক্ষা দেবে। বিজ্ঞানীরা আরও উন্নত ধরনের টিকা আবিষ্কারের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অধিকাংশ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ মনে করেন মানুষজনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। টিকা নিলেও এসব বিধি মেনে চলতে হব। বোঝাই যাচ্ছে, টিকা এখনো পরিপূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে ৩টি বিধান মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এগুলো হলো-মাস্ক পরিধান করা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। এ ছাড়া রয়েছে জনাকীর্ণ স্থান পরিহার করা। যদি করোনা সংক্রমণ অব্যাহত থাকে এবং এ ভাইরাসগুলো আরও মরণঘাতী হয়ে ওঠে, তাহলে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী? আমার মনে হয় এসব নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করা দরকার। বর্তমান বিশ্বায়িত বিশ্বে সংক্রামক রোগগুলো খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিমানে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ এখন ব্যাপকভাবে বিমাননির্ভর। বিমান অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায়। বিমানযাত্রীদের মধ্যে কেউ যদি ভেতরে ভেতরে করোনা সংক্রমিত থাকে, তাহলে যে দেশে বিমানটি যাত্রাবিরতি করল সে দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এভাবেই ২০১৯ থেকে আজকের এই দিন পর্যন্ত করোনাভাইরাস এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে অতি দক্ষিণপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির উদ্ভব ঘটছে ইউরোপের অনেক দেশে। আমেরিকাও এ থেকে মুক্ত নয়। সদ্য উদ্ভূত এ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। তারা বিভিন্ন দেশের রাজপথে সরকার আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। তারা মনে করে সরকার বা রাষ্ট্র আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদকে হেয় করছে। তারা সরকারের পদক্ষেপগুলোকে ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থি বলে মনে করে।

এ ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ অত্যন্ত ক্ষতিকর। অ্যাডাম স্মিথের মতো দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এমন ধরনের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের কোনো ভূমিকা নেই বলে মনে করতেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার জন্য মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে। ঢাকা শহরেই আমার চেনা-জানা অনেক মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিজ আবাসগৃহের বাইরে আজ এতদিন পর্যন্ত একপাও ফেলেননি। বড়জোর টেলিফোনে তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়।

কী যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তা সহজেই অনুমেয়। সমাজ তার চিরাচরিত সংহতিবোধ হারিয়ে ফেলছে। করোনাভাইরাস যাতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য অনেক দেশেই বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিমান কোম্পানিগুলো ভয়াবহ ক্ষতির মধ্যে পড়েছে এবং আকাশ যোগাযোগের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শুধু বিমান যোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রেই নয়, বিভিন্ন দেশে কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে অথবা কম উৎপাদন হচ্ছে।

এর ফলে বহু দেশে শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছে এবং আয় রোজগার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেসব দেশে বেকার ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমুখী ব্যবস্থা নেই, সেখানকার শ্রমিকরা মারাত্মকভাবে সংকটে পড়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রকৃত শ্রমিকরা কাজ না পেলে চরম বিপন্নতার মধ্যে পড়ে। উন্নত পুঁজিবাদী দেশে সাধারণ মেহনতি মানুষ খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করে। বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। জিডিপি বাড়া দূরের কথা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে গেছে।

কোনো কোনো দেশে ঋণাত্মক অঙ্কটি ডাবল ডিজিট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে করোনাভাইরাসজনিত সংকট পরিস্থিতি কতদিন পর্যন্ত চলবে? এটা যদি একটি দীর্ঘকালীন বিষয় হয়, তাহলে সমগ্র বিশ্ব একটি ভয়াবহ মন্দার কবলে পড়বে। মন্দা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রচেষ্টা চলতে থাকবে। এর জন্যও অর্থের প্রয়োজন।

কিন্তু সংকোচনশীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের সংস্থান করাও দুরূহ হয়ে উঠবে। নতুন প্রযুক্তি, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি তেমন ধরনের সমাজ ব্যবস্থাতেই ব্যবহারযোগ্য যেখানে কোনো না কোনো ধরনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। যদি তা না থাকে, তাহলে তেমন একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সাবধানী পদক্ষেপ ও প্রয়াসের প্রয়োজন হবে। তবে করোনাভাইরাস নব নব রূপে উদ্ভূত হতে থাকলে অর্থনীতির সমাজতন্ত্রায়ন খুব একটা কার্যকর ব্যবস্থা হয়ে উঠবে না। অবশ্য পরিসংখ্যান বলে, করোনাভাইরাসজনিত রোগ ছাড়াও অন্যান্য রোগে এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে।

তাই বলে কি পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেছে? সব ধরনের কাজ কারবার বন্ধ হয়ে গেছে? মানুষ নতুন কোনো বিপদ দেখলে পুরোনো বিপদগুলোর কথা অনেকাংশেই ভুলে যায়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বন্ধ না হলে এবং এটি আরও মারমুখী হয়ে উঠলে মানব সভ্যতা বিপন্নতার মধ্যে পড়ে যাবে। পৃথিবীতে বেশ কয়েক লাখ বছর আগে ওপব ধমব (বরফ যুগ) এসেছিল।

এর ফলে মানুষ ও প্রাণিকুলের বড় একটি অংশের মৃত্যু ঘটে। মানুষ ঠাণ্ডা আবহাওয়া এড়ানোর জন্য বিষুবরেখার কাছাকাছি দেশগুলোতে বসবাস করার জন্য মাইগ্রেট করা শুরু করে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের জনবিন্যাসে পরিবর্তন আসে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মেনে চলতে গিয়ে অনেকেই মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং হতাশা ও নৈরাশ্যে নিমগ্ন হচ্ছেন। এভাবে দেখলে বলা যায় মানব চরিত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। জর্জ এলিয়ট রচিত সাইলাস মার্নার উপন্যাসে Insect-like existence-এর কথা আছে।

মানুষ কি কীটপতঙ্গের মতো চিকন ছিদ্রে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করবে? এটাও সম্ভব নয়। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের মুসিবত ধেয়ে আসছে। এর জন্যও সত্যিকার অর্থে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না এবং বাস্তবসম্মত কোনো অবস্থানও তৈরি হচ্ছে না। তাহলে কি মানবজাতি করোনাভাইরাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তার সব অর্জন হারিয়ে ফেলবে? এবং মনুষ্যজাতি বিপন্ন প্রজাতিতে পরিণত হবে?

ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

মানবজাতি কি বিপন্ন প্রজাতিতে পরিণত হবে?

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম