ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠা ও ভাষা আন্দোলন

 কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক (অব.) 
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম  |  প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠা দিবস আজ। ৭৫ বছর আগে ১৯৪৮ সালের এই দিনে ঢাকার কুর্মিটোলা বর্তমান জিয়া কলোনি এলাকায় পাক-ভারত উপমহাদেশের এ ঐতিহাসিক ঘটনার সৃষ্টি হয় বাঙালি জাতির জন্য একটি সামরিক রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, যা ছিল বাঙালি মুসলমানদের দীর্ঘ দু’শ বছরের ইতিহাসে এটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। একই দিনে একই অনুষ্ঠানে আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনার সৃষ্টি হয়, যা ছিল পাকিস্তানের সেনানায়কের উর্দুতে কথা বলার নির্দেশ কোনো বাঙালি অফিসার কর্তৃক তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান ও অমান্য করার দুঃসাহস।

যে ‘বঙ্গশার্দুল বাহিনী’ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জন্ম না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতালাভ কঠিন হতো, সেই রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা হয় আজকের এই দিনে। এর অন্যতম পুরোধা ছিলেন মেজর গণি। বাংলার আকাশ তখন ঘন কালো মেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন। ভারতীয় উপমহাদেশে অন্য প্রায় সব বৃহত্তম জাতি-গোষ্ঠীর নামে সেনাবাহিনীতে নিজস্ব রেজিমেন্ট থাকলেও ছিল না কেবল বাঙালি জাতির নামে নিজস্ব কোনো রেজিমেন্ট। এমন কঠিন এক সময় রাজনৈতিক নেতারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় ও মুক্ত হওয়ার জন্য দেনদরবার করছিলেন। তেমনিভাবে মেজর মুহাম্মদ আব্দুল গণিও ব্রিটিশ-ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে বাঙালি মুসলমানদের অংশীদারত্ব বাড়ানো ও নিজ জাতির জন্য সেনাবাহিনীতে একটি রেজিমেন্ট গঠনে তার অদম্য ইচ্ছা, সাহসিকতা নিয়ে যুগপৎ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনকালে এ প্রচেষ্টা আলোর মুখ না দেখলেও পাকিস্তান কায়েম হওয়ার সূচনালগ্নেই তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন ১ ইস্ট বেঙ্গল বা ‘সিনিয়র টাইগারস’। পরবর্তীকালে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে এ রেজিমেন্টই নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে একটি দেশ সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখে।

বাঙালি রেজিমেন্ট গঠনে চিন্তাচেতনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ শেষে ১৯৪৬ সালে ক্যাপ্টেন এম এ গণিকে ভারতের ঝালনায় কোর সেন্টারে বদলি করা হয়। তখন থেকে তার চিন্তাচেতনায় কাজ করতে থাকে কীভাবে বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে একটি রেজিমেন্ট গঠন করা যায়। এ সময় তিনি দাক্ষিণাত্যের বিশাখা পট্টম, হায়দরাবাদ, সেকান্দারাবাদ ও মুম্বাইয়ে সেনাবাহিনীতে লোক ভর্তির দায়িত্ব পালন করেন, যা তার জীবনে স্বপ্ন পূরণের জন্য বড় ধরনের একটি অভিজ্ঞতা হিসাবে কাজে লাগে। সেখানে তিনি ১২৫৬ ও ১৪০৭ দুটি পাইওনিয়ার কোম্পানির অধিনায়ক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাপ্টেন গণি তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে রেজিমেন্ট গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সিনিয়র ব্রিটিশ ও বাঙালি অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ব্রিটিশ জেনারেল মেসারভি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। আগে থেকেই তিনি ক্যাপ্টেন গণিকে চিনতেন এবং মহাযুদ্ধে বাঙালি সৈনিক, অফিসার ও ক্যাপ্টেন গণির বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। সে সুবাদে তিনি জেনারেল স্যার মেসারভিকে বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে একটি রেজিমেন্ট গঠনের অনুরোধ জানিয়ে ডেমি অফিসিয়াল (ডিও) পত্র লিখেন। এ পত্রের সঙ্গে তিনি সব তথ্য ও যুক্তিসহ ২০ পৃষ্ঠার একটি স্মারকলিপিও পেশ করেন। মেসারভি এ প্রস্তাবকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেন এবং পত্রের উত্তরে জানান : ‘আমি আশা করি, বিশ্বকে তোমরা দেখাতে পারবে বাঙালি মুসলমান সৈনিকরা অন্যান্য সৈনিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’

ঝালনার কোর সেন্টারের অধিনায়ক লে. কর্নেল মারিয়াটি বাঙালি রেজিমেন্ট গঠনের বিষয়ে ক্যাপ্টেন গণিকে পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করেছিলেন। উল্লেখ্য, ক্যাপ্টেন গণির অধীনে ১২৫৬ ও ১৪০৭ নম্বর পাইওনিয়ার কোম্পানি দুটি বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে গঠিত ছিল বলে এগুলো পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধীনে প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে ১৯৪৭ সালে ক্যাপ্টেন গণির নেতৃত্বে কোম্পানি দুটি বিশেষ ট্রেনযোগে মুম্বাই থেকে ঢাকায় আনা হয় এবং তাদেরকে বর্তমান ঢাকা সিএমএইচের উত্তর পাশে তাঁবু গেড়ে ক্যাম্প তৈরি করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

রেজিমেন্ট গঠনের তৎপরতা : ঢাকায় আসার পর বাঙালি রেজিমেন্ট গঠন করার জন্য ক্যাপ্টেন গণি জোর তৎপরতা শুরু করেন। পাকিস্তানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ক্যাপ্টেন গণিকে ভালোভাবে চিনতেন এবং তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। ফলে তিনি তাকে বাঙালি রেজিমেন্ট গড়ার বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময়ে হঠাৎ ক্যাপ্টেন গণিকে রংপুরে ন্যাশনাল গার্ডের অধিনায়ক হিসাবে বদলি করা হয়। অল্পদিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রংপুর থেকে তাকে নারায়ণগঞ্জে রিক্রুটিং অফিসার হিসাবে বদলি করা হয় বাঙালি যুবকদের সৈনিক পদে ভর্তি করার জন্য, যারা প্রশিক্ষণ শেষে নবগঠিত রেজিমেন্টে যোগ দেবে। তিনি এ সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগান এবং ছয় ফুট লম্বা সুস্বাস্থ্যবান যুবকদের বেছে বেছে সৈনিক পদে ভর্তি করান, যেন অন্যান্য রেজিমেন্টের চেয়ে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা তুলনামূলক আকর্ষণীয় ও শক্তিশালী হয়। সারা পূর্ব পাকিস্তান তিনি ঘুরে বেড়াতে থাকেন উপযুক্ত লোকদের ভর্তি করার জন্য। কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন সঠিক ব্যক্তিকে রিক্রুট করার জন্য, যাতে পাকিস্তানের সব রেজিমেন্টের মধ্যে বাঙালি রেজিমেন্টের সৈনিকরা হয় সেরা। এসব রিক্রুটকে ঢাকার কুর্মিটোলায় কঠোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠা : অবশেষে ক্যাপ্টেন গণির আজীবন লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করতে শুরু করে। পাকিস্তান জন্মলাভের শুরুতেই সরকার ক্যাপ্টেন গণি ও আরও অনেকের ইচ্ছানুযায়ী বাঙালি মুসলমানদের জন্য একটি রেজিমেন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর নামকরণ করা হয় ‘দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে এ রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন ১ ইস্ট বেঙ্গল গঠন করার জন্য পত্র জারি করা হয়। ক্যাপ্টেন গণি ও ক্যাপ্টেন এসইউ খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা সেনানিবাসে এ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করার জন্য। মেজর মুহাম্মদ তোহাম্মল হোসেনকে (এমটি হোসেন) প্রশিক্ষণ কোম্পানির অধিনায়ক এবং মেজর এডব্লিউ চৌধুরী ও মেজর সাজাউয়াল খানকে এ ইউনিটের দুটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। ক্যাপ্টেন গণি ও অন্যান্য অফিসারের আপ্রাণ চেষ্টায় মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল গঠনের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে ব্রিটিশ সেনা অফিসার লে. কর্নেল ভিজেই প্যাটারসনকে প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়।

প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান : টান টান উত্তেজনা! পাক-ভারত উপমহাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঙালি মুসলমানদের বহু প্রতীক্ষিত ও লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। মেজর গণির কঠিন ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। অবশেষে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি রেজিমেন্ট, যা বিগত দু’শ বছরেও সম্ভব হয়নি। ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলায় বাঙালি মুসলমানদের বহু প্রতীক্ষিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হয়। এ ঐতিহাসিক দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন ১ ইস্ট বেঙ্গল, যা ‘সিনিয়র টাইগার’ নামে পরিচিত। অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল স্যার ফ্রেডারিক ব্রেবর্ন, মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নবাব হাবিবউল্যাহ, হাসান আলী, নূরুল আমীন, আফজাল খান, হাবিবুল্লাহ বাহার, আবদুল হামিদ খান, সামরিক বাহিনীর উপ-আঞ্চলিক অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খানসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের পর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করেন গভর্নর জেনারেল স্যার ফ্রেডারিক ব্রেবর্ন। শুরু হয় বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসের শুভযাত্রা এবং মার্শাল রেস (যোদ্ধা জাতি) হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ।

ভাষা আন্দোলন : আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান শেষে চা-চক্রে এক অনাকাঙ্ক্ষিত, অভাবনীয় ও দুঃসাহসী ঘটনার অবতারণা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের এরিয়া কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আইয়ুব খান সবার উদ্দেশে তার বক্তব্যে বলেন : ‘From now on-words Bengali Soldiers will speak in Urdu and NOT in BENGALI.’ সঙ্গে সঙ্গে এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করে উপস্থিত মেজর মুহাম্মদ তোহাম্মল হোসেন বলে ওঠেন : ‘Excuse me Sir, in West Pakistan Patthan soldiers have allowed to speak in Pestoo and Urdu. Similarly our Bengali soldiers should be allowed to speak in Bengali and Urdu.’

ক্ষুব্ধ আইয়ুব খান কঠিন ভাষায় বলে ওঠেন : ‘Nonsense, absurd, sit down.’

ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খানকে লক্ষ করে ক্যাপ্টেন গণি সবার সামনে আবেগতাড়িত হয়ে বলে উঠলেন : ‘Excuse me Sir, whatever Major MT Hossain has said is correct. We Bengali soldiers will never speak in Urdu, but in our mother tongue Bengali.’

এর জবাবে আইয়ুব খান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে ‘Shut up. Sit down’ বলে ক্যাপ্টেন গণিকে থামিয়ে দেন। ১৪ ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং তথা পূর্ব পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পদের সামরিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আইয়ুব খান এ দুই নির্ভীক অফিসারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে তাদের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হন। এ দুঃসাহসিক ভূমিকার জন্য এ সময় থেকেই তাকে ‘টাইগার গণি’ হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়। এর কিছুদিনের মধ্যে উর্দুতে কথা বলার নির্দেশ জারি হলে মেজর এমটি হোসেন ও ক্যাপ্টেন গণি তা অমান্য করেন এবং এজন্য তাদের ওপর নিবর্তন চলতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যে তাদের পাল্টুন থেকে বদলি করা হয় এবং তাদের পদোন্নতি বন্ধ করা হয়। এ রকম স্পষ্টবাদিতার উদাহরণ আজকের দিনে একেবারেই বিরল এবং ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় অকল্পনীয়। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ১৯৪৮ সালেই প্রকৃতপক্ষে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয় এবং মেজর এমটি হোসেন ও মেজর গণি এ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জাতি হিসাবে আমরা প্রায় অকৃতজ্ঞ। কারণ এসব বীরপুরুষকে আমরা কদাচিৎ স্মরণ করি এবং নতুন প্রজন্ম তাদের ইতিহাস সম্পর্কেও অবহিত নয়। তাই হয়তো কবি বলেছেন :

‘God and soldier all men adore,

In times of danger and not before.

When danger is over and things are righted,

God is forgotten and poor soldier is slighted.’

কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক, পিএসসি (অব.) : সামরিক ইতিহাস ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

hoque2515@gmail.com

 

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন