Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

বৈষম্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে

Icon

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বৈষম্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে

খ্যাতিমান কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য’র ‘হে মহাজীবন’ কবিতার পঙ্ক্তি বিশ্লেষণে ক্ষুধা-যন্ত্রণার তীব্রতা কতটুকু ভয়াবহ, তা সহজেই অনুমেয়। ‘হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়/ এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,/ পদ-লালিত্য-ঝংকার মুছে যাক/ গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো।/ প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা-/ কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,/ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়ঃ/ পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্সানো রুটি॥’

দেশের সজ্জন বিবেকপ্রসূত জনগণের হৃদয়ে সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন অগ্রগতির অনুষঙ্গ হিসাবে অবকাঠামো তথা সেতু-মহাসড়ক-ফ্লাইওভার-বিদ্যুৎ-গ্যাস-শিল্পকারখানা-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনে পরিচালিত কর্মযজ্ঞ অবশ্যই বোধগম্য। অন্যদিকে দরিদ্র-হতদরিদ্র-দুবেলা আহার জোগাড়ে ব্যর্থ মুখগুলো অসহায়ত্বের করায়ত্তে ভবিষ্যতের দিকে না তাকিয়ে বিরাজিত বর্তমান দুঃসহ অবস্থান থেকে তারা পরিত্রাণ চায়।

আধুনিক যন্ত্রকৌশল-তথ্যপ্রযুক্তি-সমৃদ্ধবিজ্ঞান শস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মহাসড়কে পদার্পণ বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সরকার ও দেশবাসীকে করেছে অধিক মাত্রায় সমাদৃত।

দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রাকৃতিক-মানবসৃষ্ট দুর্যোগের বিপর্যস্ততা পরিহারে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বড় অসহায়। আয় বৈষম্যে বিশাল ব্যবধান ও ভারসাম্যহীন অসম প্রতিযোগিতা সুবিধাভোগী কিছু ব্যক্তির স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থ-সম্পদের আকাশচুম্বী ঊর্ধ্বগতি অবাক করার বিষয়।

অতিকষ্টে সঞ্চয়কৃত গ্রাহকের গচ্ছিত আমানত ছলচাতুরীর অপকৌশলে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে অর্থ আত্মসাৎ-ঋণখেলাপির কদর্য তকমা এসব চিহ্নিত-দাগি অপরাধীদের বোধে ন্যূনতম প্রতিক্রিয়া অনুভূত হচ্ছে না। অবৈধ-অনৈতিক পন্থায় দানবরূপী এসব হিংস্র মানুষের কুৎসিত মনোবৃত্তি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর অনুধ্যানে প্রতিফলিত হচ্ছে।

দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে, তা সবাই সম্যক অবগত আছেন। প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত অর্থ ও দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে সবল রাখতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের অসহনীয় অভিপ্রায় দমনে রাষ্ট্র পরিপূর্ণ সার্থক হতে পেরেছে; জোর গলায় তা দাবি করা সমীচীন হবে না।

বিস্ময়ের বোবা চোখে-অন্তরে শুধু সচেতন মহল নয়; আপামর জনসাধারণের ক্ষোভিত-বিক্ষুব্ধ সমালোচনা-আচরণে ক্ষেত্রবিশেষে তার বহিঃপ্রকাশও ঘটছে। দেশে কোটিপতির সংখ্যা কয়েকশগুণ বৃদ্ধি পেলেও দারিদ্র্যের হার কিভাবে অধোক্রমে তাড়িত হচ্ছে, তারও সঠিক পরিসংখ্যান নির্ধারিত হওয়া অতি জরুরি।

১৬ মার্চ ২০২২ গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রমতে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এর সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০, অর্থাৎ এক বছরে বেড়েছে ৮ হাজার ৮৬টি। ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরুতে এই কোটিপতি ব্যাংক হিসাবের অঙ্ক ছিল ৮২ হাজার ৬২৫। উল্লেখ্য, মহামারির ২১ মাসে দেশে কোটিপতির হিসাব বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৫১টি; যদিও করোনাকালে মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে এর অনেকগুণ বেশি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরিসংখ্যান কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে না। বাস্তবে কোটিপতি বেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তারা এই বৃদ্ধিকে সমাজে আয় বৈষম্যের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বলেও মনে করেন। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে কোটি টাকার হিসাব বাড়ছে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় দেশে কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোটি টাকার হিসাব বাড়ার অন্যান্য কারণ হিসাবে তারা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না হওয়া, পুঁজিবাজারের অস্থিরতা ও সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন শর্তের ব্যাপারও উল্লেখ করেছেন।

সচেতন মহলের অনেকের মতে, দেশের একটা শ্রেণির আয় বেড়েছে, যাদের সংখ্যা খুবই সামান্য। সমাজের অনেক মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্তে ও নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন আয়ে নেমে গেছে। একদিকে কিছু লোক অঢেল টাকার মালিক হচ্ছে, অন্যদিকে সিংহভাগ লোকের আয় কমে যাচ্ছে। এ কারণে সমাজে বৈষম্য বেড়ে এক ধরনের সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।

লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্সের প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে সম্পদশালী বৃদ্ধির হার ও ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রক্ষেপণ ধরে বলা হয়েছিল, ৩ কোটি ডলার বা আড়াইশ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে অতি ধনীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ হারে; যেটি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ মোট ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি। ওই সংস্থার ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও বিশ্বে গত এক দশকে ধনী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির হারে শীর্ষে থাকা দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে।

এ সময়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ হারে ধনাঢ্য ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে। তালিকায় শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ৬টিই এশিয়ার। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনাম এবং চীনে বেড়েছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯ এবং ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে কেনিয়া (১৩ দশমিক ১ শতাংশ), ফিলিপাইন্স (১১ দশমিক ৯ শতাংশ), থাইল্যান্ড (১০ দশমিক ৬ শতাংশ) ও নিউজিল্যান্ড (৮ দশমিক ৭ শাতংশ)। ৮ দশমিক ২ শতাংশ হার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে অষ্টম অবস্থানে। সাড়ে সাত শতাংশ পরিমাণ ধনী নিয়ে তালিকার নবম স্থানে পাকিস্তান এবং ৭ দশমিক ১ শতাংশ হারে দশম স্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ড।

আর্থিক খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, অতি ধনী ও ধনী বৃদ্ধির এ তথ্য ভবিষ্যতে আয় বৈষম্য আরও বাড়ার লক্ষণ। দেশে উচ্চবিত্ত বাড়ার হার বেশি হলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের চাপে পড়ার শঙ্কা থাকে। তারা আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি-আয় বৈষম্য-ঋণখেলাপি-দুর্নীতি ও অনিয়মের সামগ্রিক প্রভাবেই দেশে ধনীর সংখ্যা বেড়েছে। দেশে ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি হঠাৎ কোনো বিষয় নয়। তবে প্রবৃদ্ধির হারে বিশ্বের শীর্ষে থাকা ধনীর তালিকা বাংলাদেশের জন্য বেদনাদায়ক। এই বিপুল সম্পদ অর্জনের উৎস ও প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখা উচিত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) ২০১০ এবং ২০১৬ সালের খানা জরিপেও বাংলাদেশে আয় ও সম্পদ বৈষম্য বৃদ্ধির প্রতিফলন ঘটেছিল। দেশে ধনী বাড়ার কারণ উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একজন বিশেষ ফেলো বলেন, অনেকেই বিভিন্ন সম্পদ আয় করছেন, যেগুলো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। সেগুলোর কারণে আয় বৈষম্য বাড়ছে। ঋণ নিয়ে অনেকে ঋণখেলাপি হওয়ায় ঋণের টাকা ব্যাংকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। সেটার কারণেও কারো কারো হাতে অনেক সম্পদ জমা হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষের ধন-সম্পদ সৃষ্টি হবে, সেটি অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু ধনী বাড়ার ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হারে বিশ্বের শীর্ষে থাকা স্বস্তিদায়ক নয়। এটি হচ্ছে দুর্নীতি, ঋণখেলাপি ও আয়কর না দেওয়ার কারণে। ফলে একটা শ্রেণির কাছে অর্থের পাহাড় গড়ে উঠছে।

পক্ষান্তরে, দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর উপস্থাপনও প্রণিধানযোগ্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ গণমাধ্যম সূত্রমতে, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) পরিচালিত যৌথ সমীক্ষা অনুসারে, করোনার কারণে দেশে নতুন করে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ গরিব হয়েছে।

নতুন ও পুরোনো মিলে জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। গরিব মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটির বেশি। সিপিডির মতে, দেশে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশ এরং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৫ কোটি ৭৭ লাখের বেশি। অনুরূপভাবে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) জরিপের ফলাফলে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়ে ৪২ শতাংশ প্রাক্কলিত হয়েছে। বিআইজিডি ও পিপিআরসির সর্বশেষ জরিপে দেশে করোনাকালে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৫ কোটি ২০ লাখ মানুষ তীব্র ও মাঝারি খাদ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এবং ২ বছরে খাদ্য ঝুঁকিতে থাকা মানুষ বেড়েছে ১২ লাখ।

সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পণ্য সরবরাহের বিভিন্ন অন্তরায়ের অজুহাতে কালোবাজারি-মজুতদারি সিন্ডিকেটের কূটকৌশল অবলম্বনে অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি গণনির্দেশিত। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, রাজনীতি-বাণিজ্য-নাগ নাগিনীর অভিশপ্ত পদচারণার সর্বত্রই সিন্ডিকেটের কারসাজি পরিলক্ষিত। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ-প্রচারে দেশব্যাপী ভয়াবহ আতঙ্ক-আশঙ্কা তৈরি করছে। করোনা অতিমারির চেয়েও ভয়ংকররূপে আবির্ভূত এসব দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার নষ্ট চরিত্রের বিকৃত মানসিকতার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কিনা, তাও ভেবে দেখার বিষয়।

বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রে প্রতিনিয়ত প্রচারিত যে, দল ও সরকারে নানা কুৎসিত পন্থায় বিভিন্ন দেশের অনুচরবৃত্তির আড়ালে অনুপ্রবেশকারীদের দুর্দণ্ড প্রতাপ-আধিপত্য এবং পদ-পদবি-পদক দখলে বেপরোয়া মনোভাব অশুভ অন্ধকারের শক্তির অভিশপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে অন্তরায় তৈরিতে তৎপর। নির্দোষ ব্যক্তিকে ফাঁসানোর জন্য নয়; নৈর্ব্যক্তিক-বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের কঠোর আইনের আওতায় আনা সময়ের জোরালো দাবি।

দ্রব্যমূল্যের এহেন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সচলতায় দ্রব্যমূল্য হাতের নাগালে রাখতে সরকার ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি)’র মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ীমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ, বিতরণ বাড়াতে টিসিবির ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ, অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখা, দ্রব্যের দাম ভোক্তাদের কাছে সহনীয় রাখতে ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার, ভোজ্যতেল সয়াবিনের উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে ২০ শতাংশ এবং আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারসহ আরও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এ ছাড়াও রমজানের আগে সরকারের ১২টি সংস্থা আমদানি থেকে শুরু করে খুচরা, পাইকারি বাজার ও পণ্য পরিবহণ এই চার স্তরে নজরদারি করবে, যাতে রমজানকে পুঁজি করে কেউ অতি মুনাফা করে ভোক্তাকে ঠকাতে না পারে।

২১ মার্চ ২০২২ প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রমতে, উল্লেখিত ফ্যামিলি কার্ড বিতরণেও দেশব্যাপী নানা অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। পেশা পরিবর্তন করে দরিদ্র পরিবারের পরিবর্তে অনেক সচ্ছল পরিবারকে কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় সরকারি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরাও কার্ড পেয়েছেন। একবারে সাধারণ অভিযোগটি ছিল কার্ড না পাওয়ার।

ভুক্তভোগীদের মতে, কার্ড বিতরণকারীদের অনুসারী-পছন্দের লোকদের কার্ড দেওয়া হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও দ্রুত পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেককে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। এ দৃশ্যপট বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেকটুকু ক্ষুণ্ন করছে। বিশেষায়িত বিজ্ঞজনের সমন্বয়ে সুদৃঢ় পরিকল্পিত পন্থায় উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে জীবনযাপনে উপকৃত করার সরকারের সদিচ্ছা এবং দৃশ্যমান কর্মকাণ্ডের নিবিড় তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় মধ্যস্বত্বভোগীর লোলুপ দৃষ্টিভঙ্গির বেড়াজালে সরকারের সব প্রশংসিত-গ্রহণযোগ্য উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষুধা নিবারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দিয়ে সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপ সঠিক বাস্তবায়নে অপরাজিত থাকুক-এটুকুই প্রত্যাশা।

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : শিক্ষাবিদ; সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বৈষম্য সামাজিক অস্থিরতা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম