নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি
তারপরও খেলাপি ঋণ কমেনি, বাড়েনি বিনিয়োগ
ড. আর এম দেবনাথ
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমগাছে তেঁতুল ধরে, নাকি তেঁতুলগাছে ফলে আম? এ প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা। প্রকৃতির নিয়মেই আমগাছে আম ফলবে, তেঁতুল গাছে তেঁতুল। এটাই বাস্তবতা ও চিরন্তন সত্য। কিন্তু দেশে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা লাগাচ্ছে তেঁতুলের চারা, আর আশা করছে ফজলি আম। এটা কীভাবে সম্ভব? এটা যে সম্ভব নয় তার প্রমাণ এখন হাতে হাতে মিলছে। সরকার ‘নয়-ছয়’ সুদ নীতি করিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে। আমানতে সুদ হবে ৬ শতাংশ আর ঋণের ওপর সুদ হবে ৯ শতাংশে। উদার হবে আনুষঙ্গিক সুদনীতি।
প্রত্যাশা, এতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। বড় বড় ঋণগ্রহীতারা সহজে ও স্বল্পসুদে ঋণ পেয়ে তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে পারবেন। ফলে তারা বাজারে-বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগী হবেন। এরকম অনেক যুক্তি দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে ঋণখেলাপ সমস্যার সমাধান হবে। ঋণগ্রহীতারা ঋণ ও সুদের ভারে কাহিল থাকবে। বলা হয়েছিল, ঋণের ওপর সুদের হার কম থাকলে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে, গ্রাহকরা উপকৃত হবেন।
এসব আশাবাদের পর অনেক দিন কেটে গেছে। নয়-ছয় ও উদার সুদনীতির ফলাফল কী? অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই নীতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি কি আশানুরূপ ফল দিচ্ছে/দিয়েছে? ঋণ বিতরণ কি ঠিকমতো হচ্ছে? বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কি বেড়েছে? খেলাপি ঋণ কি হ্রাস পেয়েছে? গ্রাহকরা কি ঠিকমতো টাকা-পয়সা ব্যাংককে ফেরত দিচ্ছেন? অনেক প্রশ্ন। আম পাওয়ার আশায় যে তেঁতুলগাছ লাগানো হয়েছিল, তার পরিণতি কী? কয়টা আম পাওয়া গেছে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে সংবাদপত্রের একটি রিপোর্টের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। গত মাসের শেষের দিকে প্রকাশিত এ রিপোর্টটি থেকে দেখা যাচ্ছে, উদার এ নয়-ছয় সুদনীতির বড় সুবিধাটি নিয়ে গেছে শিল্প খাত। শিল্প খাত মানে একশ্রেণির ধনী-অতিধনী ব্যবসায়ী। এর মানে কী? মানে খুবই সহজ। উদার ও সস্তা ঋণের সুবিধা পেয়েছেন বড় বড় শিল্পগ্রাহক, আর বাকি অন্যসব খাতের ব্যবসায়ীরা হয়েছেন বঞ্চিত/উপেক্ষিত। অথচ কে না জানে অর্থনীতি বলতে শুধু শিল্পকে বোঝায় না।
এতে আছে কৃষি, সিএমএসএমই এবং অন্যান্য খাত। এর মধ্যে কৃষি আমাদের বাঁচিয়ে রাখে খাদ্য, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি সরবরাহ করে। কৃষি শুধু চালই সবরাহ করে না, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কর্মস্থলও কৃষি। সিএমএসএমই খাতে আছে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটিরশিল্প ও মাঝারি মানের শিল্প। এ খাতে আছে কমপক্ষে ৮০-৯০ লাখ প্রতিষ্ঠান। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সেখানে।
প্রকৃত অর্থে তারাই কর্মসংস্থানের মূল ভিত্তি। এদিকে অন্যান্য খাতের মধ্যে রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, পাইকারি-খুচরা ব্যবসা ইত্যাদি, যাদের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। বলাই বাহুল্য, সবার সমন্বয়েই অর্থনীতি, সবার অবদানেই অগ্রগতি-উন্নয়ন। শুধু বড় বড় শিল্প আমাদের বাঁচায় না। অথচ দেখা যাচ্ছে, উদার ও নয়-ছয় সুদনীতি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঘরে ‘তেঁতুল’ তুলছে, যা টক। কেমন?
যেখানে ঋণ বণ্টনে সামঞ্জস্য রক্ষা করার কথা, ‘ব্যালেন্স’ রক্ষা করার কথা, সেখানে এখন হচ্ছে উলটো। যেখানে ঋণ যাওয়ার কথা, সেখানে ঋণ যাচ্ছে কম; আর যেখানে যাওয়ার কথা নয়, সেখানে যাচ্ছে বেশি। ফলে অর্থনৈতিক খাতগুলোর মধ্যে ঋণের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে এক বড় ‘মিস-ম্যাচ’, যা না শুধরালে পরিণামে ভুগতে হবে সবাইকে। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত ৯-১০ বছরে উদার নীতির কারণে স্বল্প লাভে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ যথেষ্ট বেড়েছে।
মোট ঋণের ৫৬ শতাংশই এখন শিল্প খাতে। কৃষি খাতে হ্রাস পেয়েছে ঋণ প্রবাহ। শতাংশের হিসাবে সিএমএসএমই খাতেও গত ২ বছরে ঋণের প্রবাহ কমেছে। কমেছে অন্যান্য খাতেও। ২০২০-২২ সালের মধ্যে বেশ কমেছে সিএমএসএমই খাতে ঋণের অংশ। এটা শুধু যে নয়-ছয় সুদনীতির ফল তা নয়; এটা ঘটছে নয়-ছয় সুদনীতির সঙ্গে ব্যাংকগুলোর অনুসৃত অন্যান্য নীতিমালার কারণেও। ব্যাংকগুলোর নজর বড় বড় ঋণে, শিল্পঋণে। তারা কৃষিঋণে আগ্রহী নয়, ক্ষুদ্রশিল্প কুটিরশিল্পে আগ্রহী নয়, আগ্রহী নয় অন্যান্য ব্যবসাতেও।
বড় বড় শিল্পের মালিকরা প্রভাবশালী। তারা ব্যাংকেরও মালিক। সরকারের নীতিও তাদের উদারভাবে সাহায্য করে। ফলে ব্যাংকাররা শিল্পের পেছনেই দৌড়ায়। তাদের কিছু সুবিধা এখানে আছে। লোন স্যাংশন, মনিটরিংয়ে ঝামেলা কম। ঋণ প্রশাসনে খরচও কম। কৃষি ক্ষুদ্রঋণ ও অন্যান্য ব্যবসায়িক ঋণে তদারকি খরচ বেশি। ঝামেলা অনেক বেশি। সরকারের উদার দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যাংকের নিজস্ব সুবিধা দুইয়ে মিলে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
অবস্থা এমন হয়েছে যে, বেসরকারি খাতে ঋণের ৬০-৭০ শতাংশই এখন বড় বড় শিল্প/শিল্প খাতে। এক্ষেত্রে ফল খুব ভালো নয়। উদার ও স্বল্পসুদে ঋণ পেয়ে শিল্প হাউজগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত ‘ক্যাপাসিটি’ তৈরি করে এখন বিপদে পড়েছে। বিদ্যুৎ, চিনি, ইস্পাত, সিমেন্ট ইত্যাদি শিল্পের ওভার ক্যাপাসিটির কথা সবারই জানা। ‘ওভার ক্যাপাসিটি’র অর্থ হচ্ছে ‘ওভার বরোইং’।
অর্থাৎ অতিরিক্ত সুদের বোঝা, মূল পরিশোধের বোঝা। এখন এটা একটা বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শিল্পের মালিকরা সরকারের অতিরিক্ত আনুকূল্য পেয়ে এমনসব খাতে টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যা থেকে রিটার্ন পাওয়া এখন কঠিন। করোনা অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এ সমস্যাকে জটিল করেছে মাত্র। দেখা যাচ্ছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ঋণের মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ পেয়েছে কৃষি খাত, ২৭ দশমিক ১ শতাংশ পেয়েছে সিএমএসএমই খাত, ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ পেয়েছে শিল্প খাত এবং অন্যান্য খাত পেয়েছে মাত্র ১২ দশমিক ৬ শতাংশ।
যাকে বলে সস্তার তিন অবস্থা! সস্তায় ঋণ পেয়ে তারা/বড়রা সমানে ঋণ নিচ্ছেন। অপ্রয়োজনীয় খাতেও ঋণ নিচ্ছেন। অভিযোগ আছে, শিল্প খাতের আমদানি ঋণপত্রে ‘ওভার ইনভয়েসিং’ হয়, টাকা পাচার হয়। অতিরিক্ত টাকাগুলো অর্থাৎ ঋণের টাকাগুলো পাচার হয়। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বড় বড় ঋণপত্র এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। বহু ‘ওভার ইনভয়েসিং’ তারা ধরেছেও।
এ প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন উঠেছে উদার ও নয়-ছয় সুদনীতির কার্যকারিতা সম্পর্কে। এতদিন দেশের ভেতরে অর্থনীতিবিদরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এখন সোচ্চার হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তাদের কাছে আমরা গিয়েছি ঋণ পেতে। অতএব, তাদের প্রশ্ন-কেন নয়-ছয় সুদনীতি? কেন বাজার অর্থনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না? এ প্রশ্ন তুলেই তারা ক্ষান্ত নয়, প্রশ্ন করছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ নিয়ে, যার সঙ্গে সম্পর্ক বড় বড় শিল্পের আমদানি ঋণপত্রের। তারা বলছে, তোমাদের রিজার্ভের সংজ্ঞা ঠিক নেই। বলছে, জিডিপির তথ্য, মূল্যস্ফীতির তথ্য ঠিক নেই।
১০-১২ বছর আগের বছরকে ভিত্তি বছর ধরে হিসাবের ফলে জিডিপির আসল পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে না, জানা যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির আসল অবস্থা। এক কথায় দশ কথা এসে যাচ্ছে। তবে আমাদের আলোচনার অন্যতম একটি বিষয়বস্তু উদার ও নয়-ছয় সুদনীতি। এর সঙ্গে আবার জড়িত রয়েছে ডলারের মূল্যমান। সবকিছু মিলে এক ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থা। অথচ এমন সময় আমরা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে পাচ্ছি না। তাকে একটি কাগজে ‘অ্যাবসেন্ট অর্থমন্ত্রী’ বলে শিরোনাম করেছে। তিনি আগে প্রায় প্রতিদিন আমাদের কত আশ্বাস দিতেন। বলতেন, আর একটি টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়তে দেওয়া হবে না। আমরা সবাই আশ্বস্ত হয়েছিলাম।
একজন জাঁদরেল অ্যাকাউন্টেন্ট যখন আশ্বাস দিচ্ছেন, তখন নিশ্চয়ই একটা কিছু হবে। তিনি খেলাপি ঋণ না বাড়ার পক্ষে বলেছিলেন নয়-ছয় সুদনীতির কথা। বলেছিলেন, অতিরিক্ত সুদের বোঝার জন্যই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু এখন? নয়-ছয় সুদনীতি করা হয়েছে, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় কত পরিবর্তন আনা হয়েছে। তারপরও কি দুই পয়সা খেলাপি ঋণ কমেছে? না, তা কমেনি। তাহলে কেন বাজার অর্থনীতি ছেড়ে সুদ নির্ধারণ করতে যাওয়া? অথচ এর সবচেয়ে বড় বলি হয়েছেন আমানতকারীরা, যারা ব্যাংক ব্যবসার মূল ভিত্তি। ‘নয়-ছয়’ সুদনীতিতে লাভবান হলেন বড় বড় শিল্পের একশ্রেণির মালিক, আর ক্ষতিগ্রস্ত হলেন সাধারণ আমানতকারীরা।
বর্তমানে সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে-লুকোচুরি করার পরও। অথচ আমানতের ওপর সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ। কেউ কেউ সুদই দিতে চায় না। ফল কী? ফল হচ্ছে, সঞ্চয়কারীরা হচ্ছেন নিরুৎসাহিত। এক খবরে দেখলাম, যে হারে ঋণ বাড়ছে সে হারে আমানত বাড়ছে না। ফলে ব্যাংকগুলো পড়ছে অর্থ সংকটে। অর্থ সংকট এমনিতেই রয়েছে। ডলার কিনে আমদানি ঋণপত্র খুলতে হয়। সেই ডলার কেনার টাকা নেই অনেক ব্যাংকের। আবার উলটো দিকে সমস্যা হচ্ছে বাজারে ডলারই নেই। ডলার নেই, টাকা নেই, আমানত নেই-তাহলে রইলটা কী? এ প্রশ্নের জবাব কী? কে দেবেন এর উত্তর? বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, নাকি অন্য কেউ? জানি না আমরা।
কাগজে দেখলাম, ব্যাংকের নির্বাহীরা বলছেন, ‘নীতিনির্ধারকরা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারছেন না।’ কী কারণে তারা এ কথা বলছেন, এটা বুঝতে বেশি বেগ পেতে হয় না। আমানত নেই, ডলার নেই, বেসরকারি খাতের শিল্পে ঋণবৃদ্ধি, বৈদেশিক ঋণ মেটানোর তাগিদ, রেমিট্যান্স প্রবাহে শ্লথগতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সরবরাহ সংকট, জ্বালানি সংকট, উৎপাদনে বিঘ্ন সৃষ্টি-এসব হচ্ছে মোটা দাগের সমস্যা। আর নয়-ছয় সুদনীতি, উদার ঋণনীতি, তফশিল নীতি, পুঁজি সংরক্ষণ, প্রভিশন সংরক্ষণ নীতির প্রশ্ন তো রয়েছেই। সমস্যা দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। অথচ কোনো সমাধানের সূত্র মিলছে না।
আইএমএফ অনেক কথা বলে। সব কথার সঙ্গে আমি একমত নই। কিন্তু সুদনীতি সম্পর্কে তাদের পরামর্শ ন্যায্য। অন্তত এ কাজটি তো কেন্দ্রীয় ব্যাংক করতে পারে। নাকি কেউ তাদের ঠেকিয়ে রেখেছে? অথচ আমানতকারীরা দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বস্তুত ব্যাংকে টাকা রাখতে গিয়ে তাদের উলটো নানা ধরনের ‘চার্জ’ দিতে হচ্ছে। ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি, ৪-৬ শতাংশ সুদ। তার মানে ৪-৬ শতাংশ টাকা নেই। রাখলাম ১০০ টাকা, ফেরত পেলাম ৯৪-৯৬ টাকা। এ লোকসানি কারবার আর কেউ না বোঝেন, প্রথিতযশা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, বড় ব্যবসায়ী মাননীয় অর্থমন্ত্রী তো বোঝেন।
দরিদ্রের দুঃখ-কষ্ট কী, মধ্যবিত্তের দুঃখ-কষ্ট কী-তাও তিনি বোঝেন। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? নয়-ছয় নীতি ছেড়ে বাজারের কাছে ফিরে এলে ক্ষতি কী? শত হোক, উদার ও সস্তা ঋণ/টাকা কখনো ভালো ফল বয়ে আনে না। সস্তার তিন অবস্থা। সস্তায় অপচয় বাড়ে, অদক্ষতা বাড়ে। সস্তা ঋণে শেয়ার বাজারের গুরুত্ব কমে, ব্যাংকে লাভের পরিমাণ হ্রাস পায়। তাই নয় কি?
ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
