বাইফোকাল লেন্স
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পার হয়ে গেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা আগেই বলেছিলেন, এ যুদ্ধ সহজে বন্ধ হওয়ার নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বরাবরই এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক, এমনটাই চেয়ে এসেছে। এ কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনকে যুদ্ধের সব ধরনের রসদও তারা সরবরাহ করে যাচ্ছে। এর পেছনে পশ্চিমাদের আরও একটি অভিসন্ধি আছে, তা হলো-যুদ্ধে রাশিয়ার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে নেওয়া। অপরদিকে রাশিয়া এ যুদ্ধের সম্মানজনক পরিসমাপ্তি চায়। সে লক্ষ্যে বলা যায়, অনেকটা রাশিয়ার আগ্রহেই চীন ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনাসহ যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। চীনের এ শান্তি পরিকল্পনায় যুদ্ধরত দুই পক্ষকেই সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে চীনের এ প্রস্তাবে যুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের দায়ী করে তীব্র সমালোচনা করা হয়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো যেভাবে নাক গলাচ্ছে, চীন তার সমালোচনা করে বলেছে-এ যুদ্ধ বন্ধ বা মীমাংসার ইচ্ছা এখন পর্যন্ত অনেক দূরের বিষয় হয়ে রয়েছে। পশ্চিমারা সাহস জোগাচ্ছে বলেই এখনো যুদ্ধের ময়দান ছাড়তে অস্বীকার করে যাচ্ছে ইউক্রেন এবং বলছে-রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ করে যাবে। অপরদিকে, ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, তাতে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাশিয়া কেবল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয়, গোটা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন শান্তি আলোচনার একটি রূপরেখা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা খুব কমই আগ্রহ দেখিয়েছে চীনের এ প্রস্তাবের প্রতি। তারা যুদ্ধ বন্ধে চীনের এমন উদ্যোগকে সন্দেহের চোখে দেখছে। এ শান্তি উদ্যোগের চেয়ে চীন ভবিষ্যতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কি না, সে সম্ভাবনার প্রতিই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কন ইতোমধ্যে বলেছেন, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাশিয়াকে যদি অস্ত্র দেওয়া হয়, তাহলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের ঘোরতর পরিণতি হবে।
ওয়াশিংটনের এমন একতরফা মনোভাব বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র একক শক্তিধর দেশ হিসাবে কর্তৃত্ব ফলানোর যে চর্চা শুরু করেছে, এক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো যুদ্ধ বন্ধের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা তো দূরে থাক; বরং উলটো ইউক্রেনকে অস্ত্র ও যুদ্ধের রসদ জোগান দিয়ে যুদ্ধকে যে দীর্ঘায়িত করছে, তাতে কোনো দোষ নেই, অথচ চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে তাতে তারা দোষ খুঁজে পায়। যুদ্ধ বন্ধে চীনের প্রস্তাবকেও তারা সন্দেহের চোখে দেখছে। চীন তাদের শান্তি প্রস্তাবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেশ সতর্কতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম যে বিষয়টি তারা শান্তি প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে তা হলো, ‘সব দেশের স্বাধীনতা, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে।’ চীনের এ দাবির ভেতর দিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, ইউক্রেনে রাশিয়া এখন পর্যন্ত যা কিছু করেছে বা এখনো করে যাচ্ছে, তা আগ্রাসনের ছাড়া কিছু নয়। ইউক্রেন শান্তি উদ্যোগকে যে চোখেই দেখুক না কেন, চীনের এ প্রস্তাবনাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে তারা। বিশেষ করে সার্বভৌমত্ব বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে খুব দ্রুত তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। চীনে নিযুক্ত ইউক্রেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এরই মধ্যে বলেছেন, ‘এই প্রস্তাবনার পর তারা আশা করছেন, যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে চীন এখন নিশ্চয়ই রাশিয়াকে রাজি করাতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’
চীনে নিযুক্ত ইউক্রেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে এটাই বোঝাতে চাইছেন যে, চীন ১২ দফা প্রস্তাব দিয়ে যুদ্ধ বন্ধে যত উদ্যোগই গ্রহণ করুক না কেন, ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সব সৈন্য প্রত্যাহার করা ছাড়া এ যুদ্ধ বন্ধ করা কোনো অবস্থায়ই সম্ভব নয়। অপরদিকে রাশিয়াও ইউক্রেনের ন্যাটো জোটে যোগ না দেওয়ার বিষয় এবং পূর্বাঞ্চলের দখলকৃত চারটি অঞ্চলে রাশিয়া অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। রাশিয়া চীনের উদ্যোগকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। তারা বলছে, চীনের এ পরিকল্পনার অর্থ হলো-‘যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা, অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জামাদি সাহায্য দিয়ে ইউক্রেনকে যে যুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া, ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থানে ফিরে যাওয়া, সে দেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য নতুন সীমানার বিন্যাস করা ও তার স্বীকৃতি প্রদান করা।’ রাশিয়ার এ ধরনের বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, রাশিয়া যে পরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেন অভিযান শুরু করেছিল, তা থেকে এক পা পিছু হটবে না।
সম্প্রতি ইউক্রেনে তাদের আক্রমণ জোরদার করার মাধ্যমে তারা যেন সে বার্তাই দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি খুব ভালো, তা বলা যাবে না। রাশিয়া তাদের পরিকল্পনা থেকে এক পা পেছাবে না বলেই সম্প্র্রতি ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পূর্ব ইউক্রেনে রণকৌশলের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুত শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যখন দুপক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে, তখন ইউক্রেনজুড়ে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন, এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়া প্রথমবারের মতো কিনজাল ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। এ কারণে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। মস্কো এ ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘হাইপারসনিক অস্ত্র’ বলে অবহিত করে থাকে। এ ক্ষেপণাস্ত্রের বিশেষ গুণ হলো, এটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারদর্শী। উত্তরে খারকিভ ও দক্ষিণের ওদেসা, পশ্চিমের জাইটোমি থেকে রাজধানী কিয়েভেও হামলা চালানো হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ চীন ও রাশিয়ার সম্পর্কে ভারসাম্য তৈরিতে সুযোগ করে দিয়েছে। কয়েক দশক ধরে চীনের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে আসছে রাশিয়া। ২০১৫ সালে চীনের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তিও করেছে রাশিয়া। অথচ এখন অস্ত্রের জন্য সেই চীনের কাছে ধরনা দিচ্ছে তারা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাশিয়া ৯ হাজার ৪০০টি যুদ্ধ সরঞ্জাম হারিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৫০০টি ট্যাংক। গত এক বছরে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রচুর গোলাবারুদের সংকটেও পড়েছে মস্কো। এমন পরিস্থিতিতে চীনের কাছে একাধিকবার অস্ত্র সহায়তা চেয়েছে রাশিয়া। কিন্তু বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে চীন। এত দিন পর্যন্ত প্রাণঘাতী নয়, এমন যুদ্ধ সরঞ্জামাদি দিয়ে সহায়তা করেছে তারা। চীনের পক্ষ থেকে বৈমানিকের হেলমেট ও বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া চীনের কাছে ড্রোন চেয়েছে। চীন বিংগো ইন্টেলিজেন্ট অ্যাভিয়েশন টেকনোলজি আক্রমণের কাজে ব্যবহার করা যায়, এমন ড্রোন তৈরি করে থাকে। রাশিয়া এ ধরনের ড্রোন পেতেই চেষ্টা করছে।
ইউক্রেন যুদ্ধকে পশ্চিমারা যে দৃষ্টিতে দেখে, চীনের ঠিক বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি আছে এ ব্যাপারে। পশ্চিমারা যেভাবে ভাবে বা যেভাবে এ যুদ্ধকে সবার কাছে উপস্থাপন করে থাকে, চীন সেভাবে দেখে না। তাদের অবস্থান বরং একেবারে মৌলিকভাবে ভিন্ন। চীনের কৌশলগত ধারণা পশ্চিমাদের বিপরীত। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তারা যত না রাশিয়ার দোষ দেখে, এর চেয়ে বেশি দোষ দেয় পশ্চিমাদের ন্যাটোর সম্প্রসারণ প্রচেষ্টাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যখন ইউক্রেন যুদ্ধকে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ এবং আগ্রাসনবাদ বলে মনে করে, তখন এ যুদ্ধকে চীন কেবল আরও একটি হস্তক্ষেপমূলক যুদ্ধ বলে মনে করে। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লিবিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের নামে যেভাবে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, এর চেয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ অনেক কম তাৎপর্য বহন করে বলে তারা মনে করে। চীনের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধের মৌলিক পার্থক্য হলো-এবারের হস্তক্ষেপটা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ন্যাটো জোটভুক্ত কোনো দেশের পক্ষ থেকে হয়নি। চীন মনে করে, বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের পরিসমাপ্তিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে, সেটা এখন পূরণ করতে চলেছে রাশিয়া। মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া, ইয়েমেন এবং লেবাননে বড় শক্তিগুলো যেভাবে যুদ্ধ উসকে দিয়েছে, ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও পশ্চিমারা একই কাজ করেছে বলে চীন মনে করে। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে চীনের এ দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যুক্তি আছে। পশ্চিমাদের সম্পর্কে বাকি বিশ্ব যে ধারণা পোষণ করে, চীনের ধারণার সঙ্গে মৌলিক কোনো পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বিশ্বে এ পর্যন্ত যত যুদ্ধবিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে, এর বেশির ভাগ ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ইন্ধন ও উসকানিতেই।
ইউক্রেন যুদ্ধের এ পর্যায়ে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে চীনের হঠাৎ আবির্ভাব পশ্চিমাদের ভাবিয়ে তুলেছে সন্দেহ নেই। চীন নতুন কৌশল নিয়ে সতর্ক পদক্ষেপে এগোচ্ছে বলা যায়। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে চীন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণের সুযোগ হাতছাড়া করবে বলে মনে হয় না। দীর্ঘদিন ধরে রুশ সামরিক প্রযুক্তি আমদানি করছে চীন। এখন হয়তো দেওয়ার পালা। পশ্চিমা সামরিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীন হয়তো রাশিয়ার ডাকে সাড়া দিতে পারে। ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও আধুনিক অস্ত্রের প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম পাঠিয়ে রাশিয়াকে সাহায্য করতে পারে। এর পরিবর্তে রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নত সাবমেরিন ও জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি চাইতে পারে চীন।
এ যাবত রাশিয়াকে চীনের যুদ্ধ সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করার যে তথ্য বেরিয়েছে, তা নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ায় ব্যাপক হইচই পড়ে গেছে। সর্বশেষ মার্কিন একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ তথ্যের বিষয় জানা গেছে। চীন ইতোমধ্যেই এ ধরনের সংবাদ পরিবেশনের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে ধারণা করা যাচ্ছে, চীনের যুদ্ধে জড়িত হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে নিকট ভবিষ্যতে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং ইউক্রেনের মিত্ররা নতুন করে কী কৌশল গ্রহণ করে, এর ওপর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, চীন যদি সত্যিই রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করে, তাহলে চীন সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। রাশিয়াকে বড় পরিসরে অস্ত্র সরবরাহ করার সামর্থ্য চীনের আছে। সেক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধের গতি পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে ইউক্রেন ঘিরে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কলাম লেখক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু
বাইফোকাল লেন্স
একেএম শামসুদ্দিন
১৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পার হয়ে গেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা আগেই বলেছিলেন, এ যুদ্ধ সহজে বন্ধ হওয়ার নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বরাবরই এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক, এমনটাই চেয়ে এসেছে। এ কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনকে যুদ্ধের সব ধরনের রসদও তারা সরবরাহ করে যাচ্ছে। এর পেছনে পশ্চিমাদের আরও একটি অভিসন্ধি আছে, তা হলো-যুদ্ধে রাশিয়ার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে নেওয়া। অপরদিকে রাশিয়া এ যুদ্ধের সম্মানজনক পরিসমাপ্তি চায়। সে লক্ষ্যে বলা যায়, অনেকটা রাশিয়ার আগ্রহেই চীন ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনাসহ যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। চীনের এ শান্তি পরিকল্পনায় যুদ্ধরত দুই পক্ষকেই সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে চীনের এ প্রস্তাবে যুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের দায়ী করে তীব্র সমালোচনা করা হয়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো যেভাবে নাক গলাচ্ছে, চীন তার সমালোচনা করে বলেছে-এ যুদ্ধ বন্ধ বা মীমাংসার ইচ্ছা এখন পর্যন্ত অনেক দূরের বিষয় হয়ে রয়েছে। পশ্চিমারা সাহস জোগাচ্ছে বলেই এখনো যুদ্ধের ময়দান ছাড়তে অস্বীকার করে যাচ্ছে ইউক্রেন এবং বলছে-রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ করে যাবে। অপরদিকে, ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, তাতে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাশিয়া কেবল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয়, গোটা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন শান্তি আলোচনার একটি রূপরেখা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা খুব কমই আগ্রহ দেখিয়েছে চীনের এ প্রস্তাবের প্রতি। তারা যুদ্ধ বন্ধে চীনের এমন উদ্যোগকে সন্দেহের চোখে দেখছে। এ শান্তি উদ্যোগের চেয়ে চীন ভবিষ্যতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কি না, সে সম্ভাবনার প্রতিই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কন ইতোমধ্যে বলেছেন, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাশিয়াকে যদি অস্ত্র দেওয়া হয়, তাহলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের ঘোরতর পরিণতি হবে।
ওয়াশিংটনের এমন একতরফা মনোভাব বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র একক শক্তিধর দেশ হিসাবে কর্তৃত্ব ফলানোর যে চর্চা শুরু করেছে, এক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো যুদ্ধ বন্ধের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা তো দূরে থাক; বরং উলটো ইউক্রেনকে অস্ত্র ও যুদ্ধের রসদ জোগান দিয়ে যুদ্ধকে যে দীর্ঘায়িত করছে, তাতে কোনো দোষ নেই, অথচ চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে তাতে তারা দোষ খুঁজে পায়। যুদ্ধ বন্ধে চীনের প্রস্তাবকেও তারা সন্দেহের চোখে দেখছে। চীন তাদের শান্তি প্রস্তাবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেশ সতর্কতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম যে বিষয়টি তারা শান্তি প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে তা হলো, ‘সব দেশের স্বাধীনতা, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে।’ চীনের এ দাবির ভেতর দিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, ইউক্রেনে রাশিয়া এখন পর্যন্ত যা কিছু করেছে বা এখনো করে যাচ্ছে, তা আগ্রাসনের ছাড়া কিছু নয়। ইউক্রেন শান্তি উদ্যোগকে যে চোখেই দেখুক না কেন, চীনের এ প্রস্তাবনাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে তারা। বিশেষ করে সার্বভৌমত্ব বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে খুব দ্রুত তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। চীনে নিযুক্ত ইউক্রেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এরই মধ্যে বলেছেন, ‘এই প্রস্তাবনার পর তারা আশা করছেন, যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে চীন এখন নিশ্চয়ই রাশিয়াকে রাজি করাতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’
চীনে নিযুক্ত ইউক্রেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে এটাই বোঝাতে চাইছেন যে, চীন ১২ দফা প্রস্তাব দিয়ে যুদ্ধ বন্ধে যত উদ্যোগই গ্রহণ করুক না কেন, ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সব সৈন্য প্রত্যাহার করা ছাড়া এ যুদ্ধ বন্ধ করা কোনো অবস্থায়ই সম্ভব নয়। অপরদিকে রাশিয়াও ইউক্রেনের ন্যাটো জোটে যোগ না দেওয়ার বিষয় এবং পূর্বাঞ্চলের দখলকৃত চারটি অঞ্চলে রাশিয়া অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। রাশিয়া চীনের উদ্যোগকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। তারা বলছে, চীনের এ পরিকল্পনার অর্থ হলো-‘যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা, অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জামাদি সাহায্য দিয়ে ইউক্রেনকে যে যুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া, ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থানে ফিরে যাওয়া, সে দেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য নতুন সীমানার বিন্যাস করা ও তার স্বীকৃতি প্রদান করা।’ রাশিয়ার এ ধরনের বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, রাশিয়া যে পরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেন অভিযান শুরু করেছিল, তা থেকে এক পা পিছু হটবে না।
সম্প্রতি ইউক্রেনে তাদের আক্রমণ জোরদার করার মাধ্যমে তারা যেন সে বার্তাই দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি খুব ভালো, তা বলা যাবে না। রাশিয়া তাদের পরিকল্পনা থেকে এক পা পেছাবে না বলেই সম্প্র্রতি ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পূর্ব ইউক্রেনে রণকৌশলের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুত শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যখন দুপক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে, তখন ইউক্রেনজুড়ে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন, এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়া প্রথমবারের মতো কিনজাল ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। এ কারণে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। মস্কো এ ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘হাইপারসনিক অস্ত্র’ বলে অবহিত করে থাকে। এ ক্ষেপণাস্ত্রের বিশেষ গুণ হলো, এটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারদর্শী। উত্তরে খারকিভ ও দক্ষিণের ওদেসা, পশ্চিমের জাইটোমি থেকে রাজধানী কিয়েভেও হামলা চালানো হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ চীন ও রাশিয়ার সম্পর্কে ভারসাম্য তৈরিতে সুযোগ করে দিয়েছে। কয়েক দশক ধরে চীনের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে আসছে রাশিয়া। ২০১৫ সালে চীনের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তিও করেছে রাশিয়া। অথচ এখন অস্ত্রের জন্য সেই চীনের কাছে ধরনা দিচ্ছে তারা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাশিয়া ৯ হাজার ৪০০টি যুদ্ধ সরঞ্জাম হারিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৫০০টি ট্যাংক। গত এক বছরে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রচুর গোলাবারুদের সংকটেও পড়েছে মস্কো। এমন পরিস্থিতিতে চীনের কাছে একাধিকবার অস্ত্র সহায়তা চেয়েছে রাশিয়া। কিন্তু বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে চীন। এত দিন পর্যন্ত প্রাণঘাতী নয়, এমন যুদ্ধ সরঞ্জামাদি দিয়ে সহায়তা করেছে তারা। চীনের পক্ষ থেকে বৈমানিকের হেলমেট ও বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া চীনের কাছে ড্রোন চেয়েছে। চীন বিংগো ইন্টেলিজেন্ট অ্যাভিয়েশন টেকনোলজি আক্রমণের কাজে ব্যবহার করা যায়, এমন ড্রোন তৈরি করে থাকে। রাশিয়া এ ধরনের ড্রোন পেতেই চেষ্টা করছে।
ইউক্রেন যুদ্ধকে পশ্চিমারা যে দৃষ্টিতে দেখে, চীনের ঠিক বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি আছে এ ব্যাপারে। পশ্চিমারা যেভাবে ভাবে বা যেভাবে এ যুদ্ধকে সবার কাছে উপস্থাপন করে থাকে, চীন সেভাবে দেখে না। তাদের অবস্থান বরং একেবারে মৌলিকভাবে ভিন্ন। চীনের কৌশলগত ধারণা পশ্চিমাদের বিপরীত। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তারা যত না রাশিয়ার দোষ দেখে, এর চেয়ে বেশি দোষ দেয় পশ্চিমাদের ন্যাটোর সম্প্রসারণ প্রচেষ্টাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যখন ইউক্রেন যুদ্ধকে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ এবং আগ্রাসনবাদ বলে মনে করে, তখন এ যুদ্ধকে চীন কেবল আরও একটি হস্তক্ষেপমূলক যুদ্ধ বলে মনে করে। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লিবিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের নামে যেভাবে লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, এর চেয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ অনেক কম তাৎপর্য বহন করে বলে তারা মনে করে। চীনের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধের মৌলিক পার্থক্য হলো-এবারের হস্তক্ষেপটা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ন্যাটো জোটভুক্ত কোনো দেশের পক্ষ থেকে হয়নি। চীন মনে করে, বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের পরিসমাপ্তিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে, সেটা এখন পূরণ করতে চলেছে রাশিয়া। মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া, ইয়েমেন এবং লেবাননে বড় শক্তিগুলো যেভাবে যুদ্ধ উসকে দিয়েছে, ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও পশ্চিমারা একই কাজ করেছে বলে চীন মনে করে। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে চীনের এ দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যুক্তি আছে। পশ্চিমাদের সম্পর্কে বাকি বিশ্ব যে ধারণা পোষণ করে, চীনের ধারণার সঙ্গে মৌলিক কোনো পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বিশ্বে এ পর্যন্ত যত যুদ্ধবিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে, এর বেশির ভাগ ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ইন্ধন ও উসকানিতেই।
ইউক্রেন যুদ্ধের এ পর্যায়ে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে চীনের হঠাৎ আবির্ভাব পশ্চিমাদের ভাবিয়ে তুলেছে সন্দেহ নেই। চীন নতুন কৌশল নিয়ে সতর্ক পদক্ষেপে এগোচ্ছে বলা যায়। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে চীন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণের সুযোগ হাতছাড়া করবে বলে মনে হয় না। দীর্ঘদিন ধরে রুশ সামরিক প্রযুক্তি আমদানি করছে চীন। এখন হয়তো দেওয়ার পালা। পশ্চিমা সামরিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীন হয়তো রাশিয়ার ডাকে সাড়া দিতে পারে। ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও আধুনিক অস্ত্রের প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম পাঠিয়ে রাশিয়াকে সাহায্য করতে পারে। এর পরিবর্তে রাশিয়ার কাছ থেকে উন্নত সাবমেরিন ও জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি চাইতে পারে চীন।
এ যাবত রাশিয়াকে চীনের যুদ্ধ সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করার যে তথ্য বেরিয়েছে, তা নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ায় ব্যাপক হইচই পড়ে গেছে। সর্বশেষ মার্কিন একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ তথ্যের বিষয় জানা গেছে। চীন ইতোমধ্যেই এ ধরনের সংবাদ পরিবেশনের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে ধারণা করা যাচ্ছে, চীনের যুদ্ধে জড়িত হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে নিকট ভবিষ্যতে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং ইউক্রেনের মিত্ররা নতুন করে কী কৌশল গ্রহণ করে, এর ওপর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, চীন যদি সত্যিই রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করে, তাহলে চীন সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। রাশিয়াকে বড় পরিসরে অস্ত্র সরবরাহ করার সামর্থ্য চীনের আছে। সেক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধের গতি পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে ইউক্রেন ঘিরে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কলাম লেখক
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023