আগামী দিনের শিক্ষা ও সেবায় যা করতে হবে
ড. হাসনান আহমেদ
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় শিক্ষাসেবা পরিষদ (জাশিপ) নিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা এ কলামে ইতোমধ্যেই লিখেছি। অনেকেই জেনে গেছেন, এটি কোনো রাজনৈতিক জোট নয়, নয় কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন। এত কথা এভাবে বলছি এ কারণে যে, আমাদের এ সমাজে শিক্ষা ও সেবার গুরুত্ব ও বাস্তব দশার তুলনায় রাজনৈতিক এজেন্ডা, হার-জিত, পক্ষ-বিপক্ষ, আঘাত-প্রত্যাঘাত নিয়ে অনুসন্ধিৎসা ও কর্ম-অপকর্ম অনেক বেশি। এদেশে রাজনীতির আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা, দমকা হাওয়া চলছে। মানুষ এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এদেশের মানুষ ও সমাজ রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই বুঝতে চায় না। রাজনীতি সব পেশার সেরা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিকদের জিভ দিয়ে আমরা প্রাত্যহিক জীবন, জীবনের চাওয়াপাওয়া ও কর্মের উৎকর্ষের স্বাদ গ্রহণ করি। কম পড়লে পরে টের পাই, যদিও জীবনের সবকিছু রাজনীতি দিয়ে পরিচালিত হয় না। যে দেশের শিক্ষার মান ভালো নয়, সমাজে সুশিক্ষিত লোকের অভাব, সেদেশের রাজনীতিও ভালো হয় না। সমাজের মানুষ যা ডিজার্ভ করে, তাই পায়।
যদি প্রশ্ন করা হয়, জীবন ও সমাজের জন্য শিক্ষা ও সেবা আগে নাকি রাজনীতি আগে? আমি নিশ্চিত, এদেশের অনেক নমস্য ব্যক্তিই ভ্রু কুঞ্চিত করে একটু আঁতেল ভাব দেখিয়ে বলবেন, ‘না, রাজনীতিই আগে’। কারণ, আমরা অনেকেই রাজনীতিকে রুটি-রোজগার ও জীবনোন্নয়নের সিঁড়ি হিসাবে ভাবতে শিখেছি। আসলে জন্ডিস রোগীর প্রকৃতিকে হলুদরঙা দেখাটাই স্বাভাবিক। এদেশের রাজনৈতিক দল ও কোনো মামলার উকিল একচোখা বলেই জানি। কেউ বাম চোখে দেখেন, কেউবা ডান চোখে দেখেন। অথচ বিচারককে স্বভাবত দুচোখ মেলে দেখতে হয়। নইলে বিচার নিরপেক্ষতা হারায়। তেমনই একজন শিক্ষককেও ছাত্রছাত্রীদের দুচোখ দিয়ে দেখতে হয়, সবাইকে সমান চোখে দেখে মূল্যায়ন করতে হয়। শিক্ষা ও জনসেবা সর্বজনীন। এসব নিয়ে রাজনীতি করলে চলে না। এর পরিণতি শুভ হয় না।
রাজনীতি এদেশকে প্রকৃত প্রস্তাবে ৫১ বছরে ভালো কিছু দিতে পারুক বা না পারুক, রাজনীতি নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। রাজনীতি অন্তত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মান শূন্য করেছে, দলবাজিকে উসকে দিয়ে মনের মধ্যে জিঘাংসার বীজ বপন করেছে। সামাজিক শিক্ষা ধ্বংস করেছে। এদেশের সব অনিষ্টের মূল এ দিগ্ভ্রষ্ট রাজনীতি। আবার রাজনীতি আমাদের অবকাঠামোগত উন্নতি দিয়েছে। জীবনের এ বেলাশেষে এসে এ সত্যটুকু অন্তত প্রকাশ করা সমীচীন মনে করি। আমার মনে হয়, আগে মানুষকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে হবে; তারপর তাকে দিয়ে রাজনীতি করাতে চাইলে করাতে হবে। তখন সে মানুষ মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। আমরা বিভিন্ন পেশার বেশকিছু সমমনা ব্যক্তি একমত হয়েছি যে, যত কথাই আমরা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলি না কেন, শিক্ষা ও জনসেবা এবং শিক্ষা মানের উন্নতি ছাড়া দেশ ও জাতির উন্নতি অসম্ভব। সুশিক্ষা না থাকলে জনসেবাও হয় না। ‘অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চচ্চড় করে।’ আগে সামাজিক শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উন্নতি হতে হবে। এতেই এদেশের যত ‘বালা-মুসিবত’ ঠিকঠাক হয়ে যাবে বা দূরে পালাবে।
শিক্ষা কখনো আপনাআপনি আসে না-কেউ না কেউ কাউকে দেয় অথবা সুচিন্তার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। সুশিক্ষার জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশও লাগে। এতে থাকতে হবে জীবনমুখী শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা ও মানবিক গুণাবলিসঞ্চারক শিক্ষা। এদেশে শিক্ষা ও সেবার মান বেশ নিম্নমুখী-শিক্ষিত সমাজ ও পরিসংখ্যান এ কথা বলে। তাই অবহেলিত এ দুটি বিষয়ের উন্নতিসাধন নিয়ে ‘জাশিপ’ কাজ করে। জাশিপ আসলে একটি পথের নাম, একটি সমাজ-উন্নতির অ্যাপ্রোচ, যা সাধারণ জনগোষ্ঠীকে সুশিক্ষিত করে, সামাজিক সেবা দিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চায়। জাশিপের হাতিয়ার হচ্ছে সুশিক্ষিত মানুষ। পদ্ধতি হচ্ছে, সমাজের অভ্যন্তরভাগের সুশিক্ষিত মানুষ দিয়ে সেই সমাজের অশিক্ষিত, নিরক্ষর ও অজ্ঞ মানুষদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সুশিক্ষিত করা। এটি একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় দেশব্যাপী কাজ করতে চায়। আমরা দেখছি, সরকারের শিক্ষা ও সেবা খাতে ব্যয়ের সদিচ্ছার অভাব নেই। হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রাখছে। কিন্তু আমাদের দেশের হিসাব তো একটু ভিন্ন, অনন্যসাধারণ। কাজির গরুর হিসাবের মতো। খাতার হিসাব এবং গোয়ালের বাস্তবতা পৃথক। বাস্তবায়নে গলদ রয়ে যায়। ‘জাশিপ’ সরকারের সহযোগিতা নিয়ে এ দুটিকে মেলাতে চায়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে শিক্ষা ও সেবার মান বাড়াতে চায়। কর্ম চালিয়ে যেতে পারলে উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব। আমাদের কাছে এটাই দেশসেবা ও ধর্মকর্মও বটে। যুগান্তর কর্তৃপক্ষ দেশসেবার মানসিকতা নিয়ে প্রথম থেকেই ‘জাশিপ’কে সহযোগিতা করে চলেছে, এজন্য আমরা বাধিত।
গত ১৩ মে ‘আগামী দিনের শিক্ষা ও সেবায় জাশিপের করণীয়’ শীর্ষক একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাশিপের ‘শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সেল’ এবং ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন সেল’ দুটি বিষয় উপস্থাপন করে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয় উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহা. শামীম এবং গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয় উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মহান উদ্দিন। বিভিন্ন পেশার লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যক্তিরা আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা শিক্ষাসেবা ও এ সম্পর্কিত গবেষণার উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তারা বলেন, স্কুল-মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্তরেই গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া সামাজিক শিক্ষার মানও আশানুরূপ নয়। যে কোনোভাবে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, কর্মমুখী ও ব্যাবহারিক শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। উদাহরণ হিসাবে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নার্সিং পেশার যথেষ্ট চাহিদা আছে, কারিগরি শিক্ষারও অনেক চাহিদা। আমরা সেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে প্রভূত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। আমাদের দেশে সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিটি শহরে এগুলো গড়ে উঠেছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সেখানে লেখাপড়া করছে, কিন্তু সবই সার্টিফিকেটসর্বস্ব। বাস্তবে তারা কাজ করতে শিখছে না। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি গাইড ও নোটবইনির্ভর বা মুখস্থনির্ভর। আমরা শুধু মুখস্থ করছি, চিন্তা করছি না। পড়ছি কিন্তু স্বপ্ন দেখছি না, লেখাপড়া বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারছি না। ফলে আমাদের চিন্তাশক্তি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বুদ্ধি ও জ্ঞান বিকশিত হচ্ছে না।
শিক্ষাব্যবস্থায় মানবিক গুণাবলিসঞ্চারক শিক্ষা অনুপস্থিত। এতে শিক্ষা খণ্ডিত হয়ে গেছে। কারণ, শিক্ষা থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধ, সততা, দেশপ্রেম, মানবিকতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, ন্যায়নিষ্ঠার মতো মানবিক গুণাবলি হারিয়ে যাচ্ছে। আবার শিক্ষার অভাবে সমাজে অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, বিশৃঙ্খলা, সামাজিক আয়বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে বিজ্ঞান ও ব্যবসাশিক্ষাকে বিযুক্ত করেছি, টেকনিক্যাল শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। মাদ্রাসা শিক্ষায় জীবন ও কর্মমুখী শিক্ষা না থাকায় এদের অধিকাংশ আর্থসামাজিকভাবে অনেক পিছিয়ে। তারা বেকার অথবা ছদ্মবেকার, অনেকেই অনুৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত। মাদ্রাসা শিক্ষাকে রি-অর্গানাইজ করা সময়ের দাবি। এভাবে শিক্ষা ও সেবামানের অবনতিতে জাতি হিসাবে আমরা ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছি। অথচ এসবের কোনো নিয়ামকই প্রকৃতিসৃষ্ট নয়; মনুষ্যসৃষ্ট ও আমাদের কৃতকর্মের ফল। আমরা ইচ্ছা করলে এবং সদিচ্ছা থাকলেই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। এদেশে শিক্ষা ও সেবার পরিবেশের বড় অভাব। শিক্ষা ও সেবা গ্রহণ ও প্রদান সুস্থ পরিবেশের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। সরকার এবং সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের এ বিষয়ে আরও সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। বক্তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নিম্নবিত্ত পরিবারের আয়-রোজগার বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা ও ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, গুণগত সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও সেবার মাধমে মানবকল্যাণমুখী একটি সুখী ও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
যে কোনো আর্থসামাজিক গবেষণার জন্য এদেশে নিজস্ব ডেটাব্যাংক গড়ে তোলা প্রয়োজন। অনেক দেশেই ডেটাব্যাংক আছে। তারা তাদের আর্থসামাজিক প্ল্যানিং, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণের কাজে নিজস্ব ডেটাব্যাংক ব্যবহার করে গবেষণা করে। গবেষণার ফল বাস্তবে কাজে লাগায়। শিক্ষা ও সেবার নিম্নমুখিতার কারণ উদ্ঘাটনে অধিক সময় ব্যয় না করে কীভাবে শিক্ষা ও সেবাহীনতার অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসা যায়, সে পথের সন্ধান গবেষণা করে বের করতে হবে এবং বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে সাধারণের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
জাশিপ শিক্ষা ও সেবার মানোন্নয়নে এবং জীবনমুখী, কর্মমুখী ও মানবিক গুণাবলিসঞ্চারক শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকার ও যে কোনো সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা, শিক্ষানীতি তৈরিতে সরকারকে বা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সহযোগিতা, শিক্ষা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে গবেষণা এবং শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়ন মূল্যায়ন প্রজেক্ট হাতে নেবে। জাশিপ শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভাগ, মন্ত্রণালয়, কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এবং শিক্ষাসেবা সমাজের মাধ্যমে অভিভাবক মহলকে শিক্ষাসচেতন করে স্কুল/মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের শিক্ষা কার্যক্রমকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে প্রভাব সৃষ্টি করবে।
একটা সম্ভাবনার কথা আমরা ভাবতে পারি। দেশে টেকনিক্যাল শিক্ষা শিখেই হোক আর সাধারণ শিক্ষা শিখেই হোক, গ্রামেগঞ্জে, প্রতিটি এলাকায় বেকারের অভাব নেই। প্রত্যেক বেকার আট-দশ লাখ টাকা ব্যয় করে/অনুদান দিয়েও যে কোনো চাকরিতে ঢুকতে ইচ্ছুক। তারা চাকরি করতে চায়। এমন দশ-পনেরো জন বেকার যুবক-যুবতিদের একত্র করে যৌথ ফান্ড ব্যবহার করে নিঃসন্দেহে একটা কোম্পানি গঠন করা যায়। প্রত্যেকে হবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার। এলাকায় পাওয়া যায় এমন কাঁচামাল ব্যবহার করে ছোট ছোট কৃষিপণ্যভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। কোম্পানি ব্যবস্থাপনার নীতিমালা অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালিত হবে। শেয়ারহোল্ডারদের জাশিপ নির্ধারিত কয়েকটি কোড অব এথিক্স মেনে ব্যবসা করতে হবে। জাশিপ কোম্পানির মালিক হবে না। জাশিপ তার দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত ‘শিক্ষা-সেবা সমাজে’র মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে। ইচ্ছা করলে ‘শিক্ষা-সেবা সমাজের’ কেউ না কেউ ব্যবসায় অংশগ্রহণও করতে পারেন। জাশিপে অনেক পেশাদার শিল্প উপদেষ্টা ও ইঞ্জিনিয়ার আছেন, তারা তাদের সাধ্যমতো ব্যবসা পরিচালনায় সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারবেন। বছর শেষে প্রতিটি কোম্পানি তার অর্জিত লাভের শতকরা পাঁচ থেকে দশ ভাগ জাশিপ ফান্ডে জমা দেবে। এ টাকা দিয়ে জাশিপ তার দেশব্যাপী কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। এভাবে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছোট ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অসম্ভব কিছু না। শুধু সমন্বয়ের অভাব, আস্থার অভাব এবং অভিজ্ঞতার অভাবে এ ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এদেশে গড়ে উঠছে না। গঠনমূলক উদ্যোগের অভাব দেখা দিচ্ছে। দিন পার হয়ে যাচ্ছে। আস্থা, সমন্বয় ও অভিজ্ঞতার সংকট জাশিপ নিঃসন্দেহে ঘুচিয়ে দিতে পারে। দেশ ক্রমেই শিল্পসমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। বেকারদের কর্মসংস্থান হতে পারে।
জাশিপ নেতারা বলেন, একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তির তিনটি দায়িত্ব রয়েছে-নিজের প্রতি দায়িত্ব, পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়িত্ব এবং সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্ব। এ দায়িত্ব তাকে স্বেচ্ছায় পালন করতে হবে। আমাদের বড় বড় কথা না বলে কাজে বিশ্বাসী হতে হবে। শিক্ষা ও সেবার উন্নয়নে এদেশের সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে অবশ্যই জাশিপের এ সামাজিক আন্দোলনে শরিক হতে হবে এবং স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে। জাশিপের এ অরাজনৈতিক সামাজিক আন্দোলনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও একান্তভাবে কাম্য। উন্নতি হলে লাভ কিন্তু সবার।
ড. হাসনান আহমেদ : অধ্যাপক, ইউআইইউ; গবেষক ও শিক্ষাবিদ; প্রেসিডেন্ট, জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ
