Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

ভ্যাট : সোজা প্রশ্ন, সহজ উত্তর

Icon

ড. মইনুল খান

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভ্যাট : সোজা প্রশ্ন, সহজ উত্তর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ২৭ নভেম্বরে উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে উপস্থিত একজন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এনবিআরের চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করি, কিন্তু আমি যখন বাড়ি যাই, আমার বয়স্ক পিতা জিজ্ঞাসা করেন-আচ্ছা বাবা, কথায় কথায় অনেকে বলেন জনগণের টাকায় সরকার চলে, উন্নয়ন হয়। এটা কেমনে হয়; আমি তো ট্যাক্স দেই না, ট্যাক্স নম্বরও নেই। প্রশ্নকারী অধ্যাপক এ রকম প্রশ্নের কী জবাব হতে পারে, তা জানতে চান। ওই শিক্ষকের মতো এমন প্রশ্নের অবতারণা প্রায়ই নজরে আসে। অন্যদিকে, কোনো কোনো সভা-সমাবেশে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ করে বলা হয়, আপনার বেতন ও সুযোগ-সুবিধা জনগণের টাকায় হয়; সেটি মাথায় রেখে সরকারি সেবা উন্নত করতে হবে। একদা একজন ব্যক্তি হঠাৎ লেখকের অফিসে এলেন। ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা চলায় তাকে কিছুক্ষণ অতিথিকক্ষে বসতে হয়েছিল। ভেতরে প্রবেশ করে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, লেখকের বেতন তার টাকায় হয়। বুঝলাম তিনি বিরক্ত হয়েছেন। পরে জানতে পারলাম, যে কাজের জন্য এসেছেন, সেটি লেখকের দপ্তরসংক্রান্ত নয়; আর দেরিটা অনিচ্ছাকৃত। তাছাড়া তিনি কোনো পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎপ্রার্থী ছিলেন না। কর সংক্রান্ত দায়িত্ববোধের এ প্রশ্নের উত্তর সহজ করে দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশের মোট অর্থ আয়ের প্রায় ৮৬ শতাংশ অবদান রাখে। এর মধ্যে বৃহৎ অংশ আসে ভ্যাট থেকে, যার হার প্রায় ৩৭ শতাংশ। বাকি ৬৩ শতাংশ আসে আয়কর ও কাস্টমস থেকে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ভ্যাট সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ১,২৪,৪২৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১,৫৯,১০০ কোটি টাকা। এই যে বিপুল রাজস্ব আহরণ, তা আসছে কোথা থেকে? বৃহৎ অর্থে এ টাকা জনগণের দেওয়া কর। কোনো ক্ষেত্রে জনগণ টের পান, কোনো ক্ষেত্রে পান না। এর মূল কারণ হচ্ছে, ভ্যাট একটা পরোক্ষ কর ব্যবস্থা। প্রায় প্রতিটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভ্যাট প্রযোজ্য হয়। যিনি ভোক্তা, তিনি নির্ধারিত হারে কর দিচ্ছেন। একজন সাধারণ লোকও কোনো না কোনোভাবে সেবা বা পণ্যের একজন ক্রেতা বা ভোক্তা। এমনকি দৈনন্দিন যেসব কেনাকাটা করেন, তাতেও তিনি পরোক্ষভাবে কর দিয়ে যাচ্ছেন।

ধরা যাক, গ্রামে বসবাসকারী একজন সাধারণ ব্যক্তি প্রায় প্রতিদিন বাজারে যাচ্ছেন; তিনি সেখান থেকে যা কিছু কিনছেন, সেটাতে তিনি কর দিচ্ছেন। খাবার-দাবারের একটি অংশ, পোশাক, তৈজসপত্র, যাতায়াতসহ নানা পণ্য ও সেবা কিনছেন। তিনি যে ঘরে বসবাস করছেন, সেই ঘরের টিন, ঘর বানানোর নানা উপকরণ (ইট, রড, সিমেন্ট ও তারকাঁটা), ইলেকট্রিক ফ্যান, বিদ্যুতের জন্যও খরচ করছেন। উৎপাদনকারী বা সেবাদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাটের অংশ যোগ করে বিক্রয় করছেন। শহরের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও অন্যরাও এমন পরোক্ষভাবে ভ্যাট হিসাবে কর দিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতার কাছ থেকে কর্তনকৃত ভ্যাট উৎপাদনকারী, সেবা প্রদানকারী ও বিক্রয়কারী কর্তৃক সরকারি কোষাগারে আহরণের বিষয়টি ভ্যাট কর্তৃপক্ষ তদারকি করে।

ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ভোক্তাশ্রেণির কাছ থেকে আহরণকৃত করের অংশ মিলে বিপুল অঙ্কের ভ্যাট সংগ্রহ করে এনবিআর। এ করের অংশে প্রত্যেক নাগরিকের অবদান রয়েছে। এমনকি একজন প্রান্তিক শ্রেণির ব্যক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত। সরকারের যত ব্যয় রয়েছে, তাতে এ করের টাকায় সংস্থান মেলে। এ করের টাকায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হয়। সরকারের যত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড রয়েছে, তাতেও এ করের ভূমিকা রয়েছে। নগরের যত চাকচিক্য, সুযোগ ও সেবা দেখা যায়, তার সবগুলোতে এ করের টাকা যুক্ত আছে। এমনকি গ্রামেগঞ্জে যে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন গ্রামীণ অবকাঠামো রয়েছে, তাও করের টাকায় হচ্ছে।

মোদ্দাকথা, জনগণ থেকে আহরণকৃত কর হচ্ছে দেশের সব কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি। কর যত বেশি আহরিত হবে, উন্নয়নের জন্য তত বেশি অর্থ ব্যয় করা যাবে। জনগণের ব্যয় থেকে সরকারের আয় হয়, আবার সরকারের ব্যয় থেকেও প্রকারান্তরে জনগণের আয় হচ্ছে বা তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি হচ্ছে। এভাবে কর এবং ব্যক্তির ও সামষ্টিক কল্যাণ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ভ্যাট আহরণ করতে গিয়ে আরেকটি প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায়-আমি কেন কর দেব? আমাকে সরকার এর বিনিময়ে কী দিচ্ছে?

ভ্যাট ব্যবস্থায় আইন অনুসারে একজন বিক্রেতা বা সরবরাহকারী ভ্যাট আদায় করে থাকেন এবং নির্ধারিত সময়ে সংগৃহীত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেন। বিক্রেতা আইন দ্বারা নির্ধারিত ফরমে একটি চালান ইস্যু করবেন। এখানে দুটো পক্ষ-ক্রেতা বা জনগণ এবং বিক্রেতা বা ব্যবসায়ী। এখানে জনগণের সুবিধা সম্পর্কে প্রথমে কিছুটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। গ্রাম বা শহরে যেসব নাগরিক সুবিধা বা সেবা প্রদান করা হয়, তা জনগণ সরাসরি ভোগ করে থাকেন। রাস্তাঘাট, যাতায়াত, গ্যাস-বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থানসহ নানা ধরনের ভৌত সুবিধা কোনো না কোনোভাবে পেয়ে থাকেন। তিনি যেমন কর দিচ্ছেন, তেমনি এসব সুবিধাদির ভাগীদারও। সম্প্রতি দেশে যেসব বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হয়েছে বা চলমান আছে, তাও এ করের টাকায় হচ্ছে। এর সুফলও সবার জন্য উন্মুক্ত। যেমন-পদ্মা সেতু তৈরির ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল উন্নতি হয়েছে। ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতে আগের তুলনায় অনেক কম সময় লাগছে। এ সেতুর সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক আন্তঃসংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল সংযোগ, ঢাকার মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালসহ আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বর্তমানে দৃশ্যমান হয়েছে। জনগণ এর মধ্যেই এসবের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন।

ব্যক্তি পর্যায়ে ইএফডি-তে ভ্যাট প্রদানকালে ইস্যুকৃত চালানের ওপর প্রতি মাসে ১০১টি লটারি প্রদান করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা। ক্রেতারা ভ্যাট দিয়ে এ আর্থিক প্রণোদনা পাচ্ছেন। অন্যদিকে, বিক্রেতারা জনগণের সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত নানা ধরনের সুবিধাভোগ করে থাকেন, যা তাদের বিনিয়োগকৃত পুঁজিকে নিরাপদ রাখে এবং তা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক প্রদত্ত নিরাপত্তা ব্যবসায়ীদের জন্য এক ধরনের প্রাপ্তি, যা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া, পুরো ভ্যাট ব্যবস্থাটি আইন ও বিধিমালা দ্বারা পরিচালিত। কর দেওয়া ও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া নাগরিক দায়িত্ব। এর সঙ্গে আরেকটি সাধারণ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়-জনগণ কীভাবে বুঝবেন তার দেওয়া ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে? এর সহজ উত্তর হলো, প্রতিটি পণ্য বা সেবা সরবরাহকালে বিক্রেতা যে মূসক-৬.৩ চালান দেন, সেটি বুঝে নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, ক্রেতা দাম পরিশোধ করে কোনো চালান না নিয়ে দ্রুত ব্যবসাস্থল ত্যাগ করেন। এতে তার দেওয়া ভ্যাট সরকারের কোষাগারে জমা নাও হতে পারে। এজন্য মূসক-৬.৩ চালান বুঝে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নকল চালান ইস্যু করে ক্রেতাকে ঠকানো হতে পারে। এক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের ভ্যাট কর্মকর্তারা সজাগ থাকেন। কোনো অভিযোগ পেলে তা অনুসন্ধান করে তারা আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেন।

বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বসানো হয়েছে। এসব মেশিন অনলাইনে এনবিআরের সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত। এসব মেশিনে কোনো লেনদেন হলে তা সার্ভারে চলে আসে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য লুকানোর সুযোগ নেই। এনবিআর সম্প্রতি বেসরকারি পর্যায়ে ভেন্ডর নিয়োগ দিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রতিটি অঞ্চলে বছরে ৩০ হাজার করে পাঁচ বছরে মোট তিন লাখ মেশিন বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে এসব মেশিন আরও সম্প্রসারণ করা হবে।

মেশিনের মাধ্যমে মূসক-৬.৩ চালান বুঝে নিলে তার হিসাব এনবিআরের সরাসরি নজরদারিতে চলে আসবে এবং সঠিক পরিমাণ ভ্যাট আহরণের বাস্তবতা তৈরি হবে। এখানে আরেকটি প্রসঙ্গ বলা প্রয়োজন, আইন অনুযায়ী ক্রয়কৃত পণ্য বা সেবার বিপরীতে চালানে ভ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ থাকুক বা না থাকুক, বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। বিক্রেতা ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট না নিলেও গৃহীত মূল্যের ওপর ভ্যাট প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই পণ্য বা সেবা ক্রয়কালে নিজ দায়িত্বে ক্রেতাকেও ভ্যাট চালান বুঝে নিতে হবে এবং প্রদত্ত চালান সম্পর্কে কোনো সন্দেহ হলে তা নিকটস্থ ভ্যাট অফিসকে জানালে ওই অফিস আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

ভ্যাট গরিবের জন্য বোঝা কিনা? বলা হয়, এ কর ধনী-গরিবের পার্থক্য করতে পারে না। একজন ধনীকে যা দিতে হয়, তা একজন গরিবকেও দিতে হয়। তাই এ কর গরিবের জন্য অনেকটা বাড়তি কষ্টের কারণ। আগেই বলা হয়েছে, ভ্যাট একটি পরোক্ষ কর ব্যবস্থা। একইসঙ্গে এটি ভোক্তা কর। যিনি যত ব্যয় করবেন বা ভোগ করবেন, তিনি তত ভ্যাট দেবেন। সমাজে বেশি ভোগ করেন ধনী শ্রেণির মানুষ। একজন গরিব কম ভোগ করেন, তাই তাকে কম ভ্যাট দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, গরিবের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য ও সেবাকে ভ্যাটমুক্ত করা হয়েছে। যেমন-চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সুজিসহ প্রাথমিক কৃষিজাত পণ্য, মাছ, মাংস, সবজি, জীবন-রক্ষাকারী ওষুধ ইত্যাদিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত প্রক্রিয়াজাত ও বিলাসবহুল পণ্য বা সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। অনেক বিলাসবহুল এবং সমাজের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিবেচিত পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাটের পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক হিসাবে অতিরিক্ত করও বসানো হয়েছে। যেমন-সিগারেট, মদ্যজাতীয় পানীয়ের ওপর নিয়মিত ভ্যাটের সঙ্গে বিভিন্ন হারে সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে। তাই ভ্যাট গরিববান্ধব নয়-একথা সর্বতোভাবে বলা যাবে না। তৃতীয়ত, সরকার ভ্যাট হিসাবে যে কর আহরণ করে থাকে, তার একটি অংশ গরিবের জন্য ব্যয় হয়। বর্তমান সময়ে সামাজিক সুরক্ষা ধরনের অনেক সেবা রয়েছে, যার অংশীদার হচ্ছেন সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ। যেমন-বয়স্কভাতা, দুস্থভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা ও সুবিধাদি, যা সমাজের অপেক্ষাকৃত কম অবস্থাপন্নদের জন্য চালু রয়েছে। করের অংশ থেকে এ অর্থের জোগান হয়।

প্রচলিত ধারণাসংক্রান্ত আরেকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হবে। আর তা হলো, ভ্যাট আহরণে ‘হয়রানি’র অভিযোগ। কোনো কোনো ব্যবসায়ীর মতে, তিনি ভ্যাট দিতে চান, কিন্তু নানা হয়রানির জন্য এ মহৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে; তারা কর দিতে ভয় পান। কতিপয় ক্ষেত্রে অভিযোগটির সত্যতা আছে; তবে এনবিআর থেকে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, নতুন ভ্যাট আইনটি মূলত অনলাইন ও অটোমেশনের ওপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ভ্যাট ব্যবস্থার অনেকাংশ অটোমেশন করা হয়েছে। একজন ব্যবসায়ী নিজে যে কোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনে নিবন্ধন নিতে পারেন। নিবন্ধনকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আবার মাসিক রিটার্নও অনলাইনে দিতে পারছেন এবং সঙ্গে টাকা জমাও। এজন্য ভ্যাট অফিসে তাকে যেতে হচ্ছে না; তিনি সঠিকভাবে করদায়িতা পালন করলে কোনো হয়রানির সুযোগ থাকছে না।

বর্তমানে ভ্যাট অনলাইনে ১৬টি মডিউল প্রবর্তন করা হয়েছে। এগুলো ব্যবসায়ী ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের জন্য কর আহরণে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ভ্যাট অনলাইনের পাশাপাশি খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য ইএফডি চালু করা হয়েছে। এটির ব্যাপক সম্প্রসারণ ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে এনবিআর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। ইতোমধ্যে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে। আশা করা যায়, ইএফডি ভ্যাট আহরণকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং ভ্যাট ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ করবে।

পরিশেষে, ভ্যাট ব্যবস্থাকে আরও ব্যবসাবান্ধব, জনবান্ধব ও করবান্ধব করার ওপর এনবিআর প্রতিনিয়ত জোর দিচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন সময়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে আরও জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এর অংশ হিসাবে ১০ ডিসেম্বর ‘ভ্যাট দিবস’ ও ১০-১৫ ডিসেম্বর ‘ভ্যাট সপ্তাহ’ উদযাপন করা হচ্ছে। জনগণ ভ্যাট সম্পর্কে যত বেশি জানবে, তত বেশি করভীতি দূর হবে এবং স্বেচ্ছায় আইন পরিপালন বেড়ে যাবে। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা উপদেশের জন্য যে কেউ সংশ্লিষ্ট এলাকার ভ্যাট কমিশনারেটের হেল্পডেস্ক বা করদাতা সেবা ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এনবিআর সবার সহযোগিতা নিয়ে আরও হয়রানিমুক্ত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুকূল ভ্যাট আহরণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।

ড. মইনুল খান : এনবিআরের সদস্য, ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি হিসাবে কর্মরত

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম