চীনকে চাটি মেরে ভারতসখ্য শ্রীলংকার
অস্ত্র কিনতে কলম্বোকে ৫ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দিল্লির * সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিক আলোচনা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দুই দেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে শ্রীলংকা ও ভারত। সেই সঙ্গে পরস্পরের সঙ্গে সামুদ্রিক ও নৌ যোগাযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিবেশী দেশ দুটির নেতারা। ইতিমধ্যে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের লক্ষ্যে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশটিকে ৫ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে নয়াদিল্লি। কলম্বোয় রোববার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের মধ্যে এক শীর্ষ বৈঠকের পর প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এই সর্বশেষ উন্নতিকে চীনকে চাটি মেরে সরিয়ে শ্রীলংকার ভারতসখ্য হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক প্রভাবের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে চীন। এই অঞ্চলে ক্রমেই বড় হচ্ছে ভারতের অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির বিশাল অর্থনীতির থাবা। পাকিস্তান থেকে শুরু করে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড-মিয়ানমার পর্যন্ত পুরো অঞ্চলে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও মহাসড়কসহ অসংখ্য প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বেইজিং। তবে চীনাদের এই উপস্থিতিতে ভারতও পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। বিশ্বের ব্যস্ততম জাহাজ চলাচল রুটের পাশে থাকা শ্রীলংকা যাতে চীনা সামরিক চৌকিতে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নয়াদিল্লি। মালদ্বীপের পর সম্প্রতি শ্রীলংকায় সরকার বদলের পরপরই সেই প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সর্বশেষ ভারতীয় কর্মকর্তা হিসেবে রোববার কলম্বোয় সম্প্রতি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে বৈঠক করেন অজিত দোভাল। দুদিনের এই সফরে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু ইস্যুর পাশাপাশি সামরিক সম্পর্ক জোরদার করার ওপর জোর দেন তারা। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকে অন্যান্য অনেক বিষয়ের মধ্যে সমুদ্র গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটা মেরিটাইম রিসার্চ কোঅর্ডিনেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি বলে দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমটি। অজিত দোভালের কলম্বো সফরের মাত্র দুই মাস আগে গত বছরের নভেম্বরে নয়াদিল্লি সফর করেন নবনির্বাচিত গোতাবায়া। সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই সফরে শ্রীলংকার জন্য ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেন মোদি। শ্রীলংকাভিত্তিক সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও বড় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে কলম্বো। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, খুব শিগগিরই চীন সফরে যাবেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। ভারতের পর এটা তার দ্বিতীয় বিদেশ সফর হতে যাচ্ছে। এছাড়া বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে তার প্রথম বিদেশ সফর শুরু করবেন চীনে পদার্পণের মাধ্যমে। যদিও সফরের সঠিক দিনক্ষণ এখনও জানানো হয়নি। ঐতিহ্যগতভাবে শ্রীলংকা ভারতপন্থী হলেও বড় বিনিয়োগ ও ঋণের মাধ্যমে দেশটিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে চীন। বিনিয়োগ ও অনুদানের মাধ্যমে শ্রীলংকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করছে চীন। বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ২০১৬ সালে চীনকে হাম্বানটোটা বন্দরকে ৮০ শতাংশ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি (৯৯ বছর) লিজ দিতে বাধ্য হয়েছে। শ্রীলংকার দীর্ঘদিন থেকে চলমান ভারতীয় সামরিকসহ বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
চীনা নেতারাও ঘন ঘন কলম্বো সফরে আসছে। গত সপ্তাহেই সফর করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। রাজাপাকসে ভাইদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে হুমকির সুরেই তিনি বলেন, “চীন সবসময় শ্রীলংকার সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘বাইরের কোনো প্রভাব’ সেখানে মেনে নেয়া হবে না।”
