ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার বর্ষপূর্তি আজ
নিউজিল্যান্ডে এখনও ভয় কাটেনি মুসলিমদের
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার এক বছর পূর্ণ হল আজ। সীমাহীন মুসলিম বিদ্বেষ ও অমূলক ইসলামভীতি থেকে গত বছরের এই দিনে দুটি মসজিদে নজিরবিহীন হামলা চালায় এক খ্রিস্টান জঙ্গি। নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে হত্যা করে শিশু ও নারীসহ ৫১ নিরীহ মুসল্লিকে। নামাজ, দোয়া অনুষ্ঠান ও নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে স্বজন হারানোর শোক পালন করছে দেশটির আক্রান্ত মুসলিমরা। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও দেশটিতে মুসলিম বিদ্বেষ ও ইসলামভীতি আদৌ কমেনি বরং আরও বেড়েছে। পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও ভয়ানক। এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মুসলিমরা। ঘৃণা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে এখনও লড়ছে দেশটির সরকার ও প্রশাসন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলিম বিদ্বেষ আগের চেয়ে বেড়েছে। হামলার বছরপূর্তির এক সপ্তাহ আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মুসলিম ও তাদের মসজিদে হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে পাঠানো হয়েছে হুমকিমূলক ছবি। ছবিতে হুমকিদাতার চোখ আর ঠোঁটের অংশ ছাড়া মুখমণ্ডলের পুরোটা ঢাকা বালাক্লাভা ক্যাপ বা কালো মুখোশ দিয়ে। তাকে দেখা যাচ্ছে, গত বছর হামলার শিকার আল-নুর মসজিদের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায়। সঙ্গে হুমকি বার্তা ও বন্দুকের ইমোজিও ছিল। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ক্রাইস্টচার্চ মুসলিম সম্প্রদায়ের নেত্রী আলিয়া ড্যানজেইসেন এএফপিকে বলেন, ‘এখানে আমরা এখন আর নিরাপদ বোধ করি না। সবসময়ই একটা ভয় আমাদের তাড়া করে ফেরে।’ তিনি জানান, যেসব নারী বোরকা কিংবা হিজাব পরে বাইরে বের হন, তাদেরকেই টার্গেট করা হয়। তিনি বলেন, ‘এর কারণ তারা (টার্গেটকারীরা) বোরকা বা হিজাব পিরহিতাদের দুর্বল মনে করে। এদেরকে টার্গেট করলেও কোনো প্রতিবাদ করবে না।’ গত বছর ১৫ মার্চ জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদে এক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীর খ্রিস্টান জঙ্গি ওই ভয়াবহ হামলার পর থেকে নিউজিল্যান্ডে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ এবং অভিবাসীদের অপছন্দ ও তাদের নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে হুমকি সেসবরেই সর্বশেষ নজির। ব্রেন্টন টারান্ট নামের সন্দেহভাজন ওই বন্দুকধারী কেবল আধা-স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলিই চালায়নি; মসজিদে হামলার পুরো ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করে ছড়িয়ে দেয়। অস্ট্রেলীয় নাগরিক টারান্টের বিরুদ্ধে হামলা ও হত্যার ৯২টি অভিযোগ আনা হয়েছে। চলতি বছরের জুন থেকে তার বিচার শুরু হওয়ার কথা। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছে সে। মসজিদে হামলার পরপরই নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন ও তার সরকার দেশটির মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মিতা ও ভালোবাসা নিয়ে পাশে দাঁড়ায়। কয়েক মাসের মধ্যেই দেশটিতে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন হয়। অনলাইনে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো রুখতে তার আন্দোলন ও এ সংক্রান্ত একের পর এক পদক্ষেপও বিশ্বজুড়েই প্রশংসিত হয়। তবে কেবল ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক হামলার বিরুদ্ধে জনমত বৃদ্ধিই নয়, ক্রাইস্টচার্চের ওই হামলার পর থেকে অনলাইন-অফলাইন দুই জায়গাতেই কট্টর ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী ও অভিবাসীবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বেড়েছে বলে মুসলিম নেতা, অ্যাক্টিভিস্ট ও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের ইসলামিক উইমেন্স কাউন্সিলের আনজুম রহমান বলেছেন, ‘যারা ঘৃণা ছড়াতে চায় ওই হামলা তাদেরও উৎসাহিত করেছে।’ নিউজিল্যান্ডে মুসলিম নারীদের ওপর ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই এ কাউন্সিল সরকারকে সতর্ক করে আসছিল। আনজুম জানান, তিনি সম্প্রতি মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে ছড়িয়ে পড়া ওই হুমকির ছবি পুলিশকে দিয়েছেন।
