Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

ইতালির বারান্দা-জানালায় ভয় জয়ের গান

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইতালির বারান্দা-জানালায় ভয় জয়ের গান

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পুরো ইতালি। ঘরে বসেই অলস সময় কাটাচ্ছেন দেশটির প্রায় ৬ কোটি নাগরিক।

অবরুদ্ধ ইতালির বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ির জানালা ও বারান্দা থেকে একসঙ্গে গানের সুরে করোনা ভয় জয়ের চেষ্টা করছেন। কেউ গিটারে সুর তুলছেন। কেউ বাজাচ্ছেন ভায়োলিন। কেউ আবার ঘরের বাসন-কোসনে ঠোকা দিয়ে তাতে তাল মেলানোর চেষ্টা করছেন।

নিজেদের মধ্যে সাহস সঞ্চারিত করার পাশাপাশি করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা চিকিৎসক ও নার্সদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। শনিবার দুপুরে ও বিকালে রাজধানী রোমসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বাসিন্দাদের একযোগে গানে গলা মেলাতে ও গিটার বাজাতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি এখন ইউরোপে থাবা বসিয়েছে। চীনের বাইরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় ইতালিই শীর্ষে। ইউরোপ মহাদেশটির অন্য যে কোনো দেশের মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশটিতে। এরই মধ্যে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে এক হাজার ৪৪১ জনে। রয়টার্স বলছে, ফেব্রুয়ারিতে ইতালির উত্তরাঞ্চলে ভাইরাসটির আবির্ভাবের পর থেকেই দেশটির সরকার সংক্রমণ রুখতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে। জনসমাগম ও ভ্রমণে দেয়া হয়েছে বিধিনিষেধ। জনসাধারণকে প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হতেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁর পাশাপাশি বেশির ভাগ দোকানও বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকার অবশ্য কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কর ছাড় এবং অন্যান্য সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে।

এমনই এক দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা নিজেদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের কাতারে থাকা চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি সম্মান জানান।

সন্ধ্যায় ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তারা একসঙ্গে গলা মেলান আদ্রিয়ানো কালেন্তানের ‘আজুরো’ গানে। বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ কর্মসূচি ও দিনক্ষণ ঠিক করেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

গানের তালে তালে, সুরের মূর্ছনায় এদিন তারা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের ঊজ্জীবিতও করেছেন। এ সময় কারও

কারও জানালা ও ব্যালকনিতে হাতে লেখা ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’, ‘বাসায় থাকছি’ ব্যানারও দেখা গেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ও আক্রান্তদের চিকিৎসায় তারা সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করলেও মাস্ক ও ভেন্টিলেটরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি এবং দক্ষ লোকবলের অভাবে পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যাচ্ছে না।

উত্তরাঞ্চলীয় লম্বার্দি এলাকার ফিয়েরা মিলেনা এক্সিবিশন সেন্টারে কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখনও পর্যাপ্ত কর্মী ও ভেন্টিলেটর মেলেনি।

লম্বার্দি শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গিউলিও গ্যালেরা বলেন, প্রতিদিনই পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে, যদিও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।’ সংকট মোকাবেলায় কয়েকদিনের মধ্যে আরও ১৩০টি নিবিড় পর্যবেক্ষণ বেড মিলবে বলেও আশা তার।

চীনা বিশেষজ্ঞদের একটি দলও এরই মধ্যে ৪০টি ভেন্টিলেটর ও ৩১ টন চিকিৎসা উপকরণ নিয়ে ইতালিতে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি দি মারিও।

কোভিড-১৯ ইতালির অর্থনীতিতেও বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। সংকট মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন কোম্পানি ও শ্রমিকদের সহযোগিতার নানান পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ্পে কন্তে টুইটারে বলেন, ‘দেশের ভালোর জন্য এবং শ্রমিকদের সুরক্ষায় ইতালি থেমে থাকবে না।’

ইতালি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম