লকডাউন ছাড়াই সফল হংকং
ছয় সপ্তাহের মধ্যে একজনও আক্রান্ত হয়নি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লকডাউন না দিয়েই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সফল হংকং। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর হংকংয়ের কাছ থেকে বহু কিছু শেখার রয়েছে। চীনের সীমান্তঘেঁষা হংকংয়ে উহান থেকে চীনা নাগরিকের ঢল নামায় অঞ্চলটিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিধি মেনে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল হয়েছে তারা। মার্চ মাসে খুব অল্প সংক্রমিত হয়েছে। গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সোমবার চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলে কোনো আক্রান্ত শনাক্ত হয়নি। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
হংকংয়ে সরকারের ওপর জনগণের আস্থা বেশ কম। সেখানে বহু দিন ধরেই সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে। তারপরও বিশ্বের অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরের মানুষ স্বেচ্ছায় নিজেদের মধ্যে মেলামেশা বন্ধ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছেন। অনেকেই চন্দ্রবর্ষ উদযাপন থেকে বিরত ছিলেন। অংশ নেননি বড়দিনের আয়োজনেও। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হংকংয়ের ৮৫ শতাংশ নাগরিক জনসমাগম এড়িয়ে চলেছেন। আর ৯৯ শতাংশ মানুষ ঘরের বাইরে বের হওয়ার আগে মাস্ক পরেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা নীতির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক তিক্কি প্যানগেস্তো মনে করেন, হংকংয়ের বাসিন্দারা সরকারকে আস্থায় না নিলেও তারা হংকংবাসী হিসেবে গর্ববোধ করেন। আর এই দুর্যোগকে তারা তাদের নাগরিক পরিচয়ের ওপর আঘাত বলে বিবেচনা করছেন। হংকং সরকার ডব্লিউএইচও’র ‘টেস্ট, টেস্ট অ্যান্ড টেস্ট’ নীতির ওপর জোর দিয়েছিল। দেশটি প্রতিদিন এক হাজার মানুষকে পরীক্ষা করেছে। হংকংয়ে করোনা উপসর্গ রয়েছে- এমন ব্যক্তির সঙ্গে গত দু’দিনে কারা মেলামেশা করেছে, তা শনাক্ত করা হয়। বাড়িতে আলাদা থাকার নির্দেশ পাওয়া ব্যক্তিরা কোয়ারেন্টিন যথাযথভাবে মেনে চলেছেন কিনা, তাও নিশ্চিত করা হয়। হংকংয়ে বিদেশ থেকে নতুন আগত ব্যক্তিদের গতিবিধির ওপর নজরদারি রাখার জন্য ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট পড়ানো হয়। হংকং করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রতিটি ঘটনা অনলাইনে সংরক্ষণ করছে। কোন কোন ভবনে আক্রান্ত ব্যক্তির বাস, সেটিও ম্যাপ করছে তারা।
ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের মহামারীবিষয়ক অধ্যাপক বেঞ্জামিন কাউলিং বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাস্ক পরা জাদুকরি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না। প্রত্যেকেই যদি হাত ধোয়া, সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রাখার পাশাপাশি মাস্ক পরে, তাহলে হয়তো এটা কাজে দিতে পারে। বাকি সাবধানতাগুলো না মেনে শুধু মাস্ক পরে এই রোগের বিস্তার ঠেকানো যাবে না।’ হংকংয়ে গত ছয় সপ্তাহ পর সোমবার প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোনো কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়নি। এর আগে গত ৫ মার্চ হংকংয়ে করোনায় কেউ শনাক্ত হয়নি। হংকংয়ের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সেন্টার ফর হেলথ প্রটেকশন এক বিবৃতিতে জানায়, সোমবার নতুন করে কোনো রোগী শনাক্ত না হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। ৭৫ লাখ নাগরিকের এ দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ২৬ জন। মারা গেছেন মাত্র চারজন। এছাড়া সুস্থ হয়েছে ৬৩০ জন কোভিড-১৯ রোগী। নতুন রোগী শনাক্ত না হলেও বাসিন্দাদের যথাযথভাবে সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে হংকং কর্তৃপক্ষ। এছাড়া করোনা বিস্তারের ঝুঁকি কমাতে একত্র আড্ডা দেয়া, খাবার খাওয়াসহ অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমের আয়োজন না করা এবং তাতে অংশ না নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হংকংয়ের সেন্টার ফর হেলথ প্রটেকশন বিবৃতিতে বলছে, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। গোটা বিশ্বে প্রতিনিয়ত আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই জনসাধারণকে হংকংয়ের বাইরে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ না করার আহ্বান জানানো যাচ্ছে। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে। চীনের মূল ভূখণ্যের সঙ্গে অনেক মানুষের যাতায়াত থাকায় হংকংয়ে ব্যাপকহারে ভাইরাসটির বিস্তার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু হংকং সরকার নানা জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে তা প্রতিরোধে সফল হয়েছে।
