আফগান-লেবাননের অবস্থা যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ
করোনায় মৃত্যু ভয়ের চেয়ে ভয়ংকর ক্ষুধার ভয় * থমকে গেছে টয়লেট পেপার প্রস্তুতকারী আফগান নারীর স্বপ্ন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দুই সন্তানের মা সুজান। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীর একটি ছোট্ট ঘরে থাকেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সৃষ্ট দুর্দশা সম্পর্কে আলজাজিরাকে সুজান বলেন, ‘এমন অন্ধকার সময় আগে কোনোদিন দেখিনি। এ অবস্থা যুদ্ধের চেয়ে ভয়ংকর।’ একই অবস্থা বিরাজ করছে যুদ্ধকবলিত আফগানিস্তানেও।
দেশটির সরকারের মুখপাত্র ওয়াহিদ ওমর বলেন, ?‘আমাদের সম্পদ খুবই সীমিত। সরকারি তহবিলও ভঙ্গুর। এরই মধ্যে এ ভাইরাসে আফগানিস্তানে গত ১৮ বছরের যুদ্ধে হতাহতের চেয়েও বহু মানুষের প্রাণহানি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
লেবাননে গত ছয় মাসের দুর্দশা যেন ছাড়িয়ে গেছে ১৯৯০ সালে শেষ হওয়া ১৫ বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধকেও। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, চলতি বছর লেবাননের অর্থনীতি অন্তত ১২ শতাংশ সংকুচিত হয়ে পড়বে, যা মধ্যপ্রাচ্যের চেয়েও অনেক বড় বিপর্যয় এবং ভেনিজুয়েলা ও শাদের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক মন্দা হবে।
এর সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে করোনা মহামারী। এমন সংকটে সুজানের মতো অনেকেই জীবনে প্রথমবার সাহায্যের জন্য হাত পাততে বাধ্য হচ্ছেন।
সময় যত যাচ্ছে, মানুষের ক্ষুধার জ্বালার সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভও। করোনায় মৃত্যু ভয়ের চেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠছে ক্ষুধার ভয়।
করোনার কারণে রাতভর কারফিউ, মাসব্যাপী লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে লেবানন সরকার। এর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে।
সপ্তাহ তিনেক আগে লেবাননের সদ্যগঠিত সরকার ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ পরিবারকে ১৩০ ডলার করে অর্থ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়। এতদিন হয়ে গেলেও সেই অর্থ বিতরণ করা হয়নি।
লেবাননে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। দেশটির ৬০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ লাখই সিরীয় ও ফিলিস্তিনি শরণার্থী।
লেবাননের সমাজমন্ত্রী রামজি মৌচারাফিহ জানান, দেশটির অন্তত ৭৫ শতাংশ মানুষেরই এখন সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারি সাহায্য না পেয়ে বেশির ভাগ মানুষই বিভিন্ন দাতা সংস্থার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, না হয় ভিক্ষাবৃত্তিতে ঝুঁকছে।
পরিস্থিতি দিন দিন যতই খারাপ হচ্ছে, মানুষের মধ্যে আইনভঙ্গের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই ঘরে থাকার নির্দেশনা অমান্য করে খাবারের সন্ধানে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। কারফিউ ও সামাজিক দূরত্ব অমান্য করে নামছেন বিক্ষোভে।
এদিকে আফগানিস্তানে সোমবার পর্যন্ত ৮৪০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৩০ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আফগানিস্তান চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটিতে যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহরূপে আঘাত হানতে পারে করোনা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক পূর্বাভাসে জানায়, আফগানিস্তানে আড়াই কোটির বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে এবং এক লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা যাবে। এ সংখ্যা আফগান যুদ্ধে মৃত্যুর চেয়েও বেশি।
দীর্ঘ ১৮ বছরের যুদ্ধে আফগানিস্তানে অন্তত এক লাখ মানুষ মারা যান। করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে টয়লেট পেপারের চাহিদা বেড়ে গেলেও লকডাউনের কারণে থমকে গেছে আফগান নারী আতমারের কারখানা।
