যুক্তরাষ্ট্রে অবহেলায় গণতন্ত্র
গণতন্ত্র সম্মেলনে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের
যুগান্তর ডেস্ক
২৪ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
‘গণতন্ত্র সম্মেলন’র আয়োজন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গাল ভরে যাকে বলা হচ্ছে ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি’। অর্থাৎ ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সম্মেলন’। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে আগামী ডিসেম্বরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেওয়ার জন্য শতাধিক দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অর্থাৎ ওই সব দেশগুলোকে ‘গণতান্ত্রিক দেশ’র তালিকায় রাখা হয়েছে। আবার বহু দেশকেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্র নিয়ে এমন বিশাল আয়োজন করতে যাওয়া সেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘরেই হেলাফেলায় দুর্বল হয়ে আসছে গণতন্ত্র। অন্য দেশে ভোটাধিকার সুরক্ষার কথা বললেও নিজেদের দেশেই সবার ভোটাধিকার নেই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মতো নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ, বিশেষ করে সংখ্যালঘুরা। দেশটির সরকার ও প্রশাসনের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ বলেছে, শক্তিশালী ও কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি কাজ করতে হবে। অধিকারবঞ্চিত সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচারসহ অন্যান্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে সবকিছুই ঢেলে সাজাতে হবে। এএফপি ও পলিটিকো। যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায়ই ‘গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর’ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিসট্যান্স’র (আইআইডিইএ) এক রিপোর্টে প্রথমবারের মতো ‘ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্র’র দেশগুলোর তালিকায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। গণতন্ত্রের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এবারের (২০২০) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর সেই নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যা মার্কিন ইতিহাসে বিরল। এ ছাড়া জনগণের বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মতপ্রকাশ তথা বাকস্বাধীনতা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার রক্ষায় চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে দেশটির সরকার ও প্রশাসন। সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই উদাসীনতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটির সংখ্যালঘু অধিকারবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ফারনান্দ ডা ভ্যারেনেস সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তার আইনি কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে দেশটির কয়েক রাজ্যের গৃহীত বেশ কিছু পদক্ষেপ গণতন্ত্রকে অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ দিনের একটি পর্যবেক্ষণমূলক সফর শেষ করার পর এসব কথা বলেন ভ্যারেনেস। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার ও জনগণের অন্যান্য অধিকার সুরক্ষার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ আইন ও এর অনুশীলনের কারণে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর তালিকা থেকে বের হওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্র।’ ভ্যারেনেস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন কিছু জটিল আইন রয়েছে যা এখন থেকে ছয় দশক আগে প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেসব আইন বর্তমানে অকার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। ফলে লাখ লাখ মার্কিনি বিশেষ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো ক্রমবর্ধমান অসমতা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, এমনকি সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়ছে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
যুক্তরাষ্ট্রে অবহেলায় গণতন্ত্র
গণতন্ত্র সম্মেলনে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের
‘গণতন্ত্র সম্মেলন’র আয়োজন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গাল ভরে যাকে বলা হচ্ছে ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি’। অর্থাৎ ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সম্মেলন’। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে আগামী ডিসেম্বরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেওয়ার জন্য শতাধিক দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অর্থাৎ ওই সব দেশগুলোকে ‘গণতান্ত্রিক দেশ’র তালিকায় রাখা হয়েছে। আবার বহু দেশকেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্র নিয়ে এমন বিশাল আয়োজন করতে যাওয়া সেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘরেই হেলাফেলায় দুর্বল হয়ে আসছে গণতন্ত্র। অন্য দেশে ভোটাধিকার সুরক্ষার কথা বললেও নিজেদের দেশেই সবার ভোটাধিকার নেই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মতো নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ, বিশেষ করে সংখ্যালঘুরা। দেশটির সরকার ও প্রশাসনের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ বলেছে, শক্তিশালী ও কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি কাজ করতে হবে। অধিকারবঞ্চিত সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচারসহ অন্যান্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে সবকিছুই ঢেলে সাজাতে হবে। এএফপি ও পলিটিকো। যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায়ই ‘গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর’ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিসট্যান্স’র (আইআইডিইএ) এক রিপোর্টে প্রথমবারের মতো ‘ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্র’র দেশগুলোর তালিকায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। গণতন্ত্রের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এবারের (২০২০) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর সেই নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যা মার্কিন ইতিহাসে বিরল। এ ছাড়া জনগণের বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মতপ্রকাশ তথা বাকস্বাধীনতা, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার রক্ষায় চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে দেশটির সরকার ও প্রশাসন। সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই উদাসীনতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটির সংখ্যালঘু অধিকারবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ফারনান্দ ডা ভ্যারেনেস সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তার আইনি কাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে দেশটির কয়েক রাজ্যের গৃহীত বেশ কিছু পদক্ষেপ গণতন্ত্রকে অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ দিনের একটি পর্যবেক্ষণমূলক সফর শেষ করার পর এসব কথা বলেন ভ্যারেনেস। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার ও জনগণের অন্যান্য অধিকার সুরক্ষার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ আইন ও এর অনুশীলনের কারণে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর তালিকা থেকে বের হওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্র।’ ভ্যারেনেস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন কিছু জটিল আইন রয়েছে যা এখন থেকে ছয় দশক আগে প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেসব আইন বর্তমানে অকার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। ফলে লাখ লাখ মার্কিনি বিশেষ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো ক্রমবর্ধমান অসমতা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, এমনকি সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়ছে।