টোঙ্গায় অগ্ন্যুৎপাত আরও বিস্ফোরণ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশ টোঙ্গার আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে ওই এলাকায় আরেকবার সুনামির সৃষ্টি হয়েছে। অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামি নজরদারি সংস্থা ডারউইন ভলকানিক অ্যাশ অ্যাডভাইসরি সেন্টার সোমবার জানায়, প্রথম অগ্ন্যুৎপাতের দুই দিন পর সোমবার সন্ধ্যায় সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত ও বিস্ফোরণ শনাক্ত করা হয়। এদিকে সুনামির ফলে টোঙ্গার বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বিশ্ব থেকে একপ্রকার অন্ধকারে রয়েছে এর লক্ষাধিক অধিবাসী। জরুরি খাদ্য-পানি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এএফপি ও আলজাজিরা।
শনিবার টোঙ্গার হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাইপাই নামক শুপ্ত আগ্নেয়গিরিতে হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরমাণু বোমার বিস্ফোরণের মতো প্রবল বিস্ফোরণের পর পানির নিচে থেকে ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলি ও ছাই আকাশে উঠে যায় এবং পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এমন বিস্ফোরণ হাজার বছরে একবার ঘটে। শুরু হয় অগ্ন্যুৎপাত। আট মিনিট ধরে চলা অগ্নুৎপাত এতই শক্তিশালী ছিল যে, এর কম্পন প্রায় বিশ্বজুড়েই অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৪। বিস্ফোরণের ফলে প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট উঁচু সুনামির সৃষ্টি হয়। সেই ঢেউ জলোচ্ছ্বাসের আকারে আছড়ে পড়ে টোঙ্গাসহ মহাসাগরীয় ক্ষুদ্র দ্বীপদেশগুলোতে। এমনকি হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত উপকূলবর্তী দেশগুলোতেও আঘাত হানে। এতে এসব দেশের উপকূলে থাকা নৌকা ও ছোট ছোট জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অগ্ন্যুৎপাতের ফলে টোঙ্গাসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কয়েকটি দ্বীপ ছাইয়ে ঢেকে গেছে। টোঙ্গায় নিযুক্ত নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার পিটার লুন্ড বলেছেন, আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের আস্তরণে ঢেকে যাওয়ার কারণে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে এখন চাঁদের পৃষ্ঠের মতো অদ্ভূত দেখাচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে আছে। ফলে বিশ্ব থেকে একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো টোঙ্গা। ফলে অধিবাসীরা কেমন আছেন, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি। দ্বীপের বহু বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত তিনদিন ধরে প্রিয়জনদের কোনো খোঁজ নিতে পারেননি প্রবাসী টোঙ্গানরা। দেশের পরিস্থিতি জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী প্রায় ৮৫ হাজার প্রবাসী। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সোমবার একাধিকর সামরিক বিমান পাঠিয়েছে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সরকার।
অস্ট্রেলিয়ার প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়কমন্ত্রী জেড সেসেলা বলেছেন, শনিবারের উদ্গিরণ ও সুনামিতে টোঙ্গায় ব্যাপক কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলো থেকে ধারণা পাওয়া গেছে। কিন্তু সৈকতগুলো পরিদর্শন করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির পুলিশ। অস্ট্রেলীয় রেডিও স্টেশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেড সেসেলা আরও বলেন, ‘সেখানে উল্লেখযোগ্য কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’ তবে টোঙ্গা বিমানবন্দর তুলনামূলকভাবে ভালো আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় টোঙ্গার মিশনের ডেপুটি প্রধান কার্টিস টুইহালানগিনগি জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষণকারী বিমানগুলো সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টোঙ্গা সরকার ত্রাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
